ভোটে হামলার সময় নেতারা কই, ধুন্ধুমার বিজেপি দফতরে

কলকাতা পুরসভার ভোটের দিন কর্মীরা যখন শাসক দলের মার খেয়েও যেখানে যতটুকু পেরেছেন, ময়দানে থাকার চেষ্টা করেছেন, তখন রাজ্য নেতৃত্ব কোথায় ছিলেন? এই প্রশ্নে রবিবার তোলপাড় বিজেপি-র রাজ্য দফতর। শনিবার কলকাতার পুরভোটে শাসক দলের হামলার মুখে বিজেপি-র নড়বড়ে সংগঠনের চেহারাটা ফের প্রকাশ্যে এসেছে। শনিবার কোথাও বিজেপি-র বুথে ভাঙচুর হয়েছে। কোথাও মার খেয়ে জখম হয়ে হাসপাতালে যেতে হয়েছে বিজেপি কর্মী বা প্রার্থীকে।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:১৮
Share:

কলকাতা পুরসভার ভোটের দিন কর্মীরা যখন শাসক দলের মার খেয়েও যেখানে যতটুকু পেরেছেন, ময়দানে থাকার চেষ্টা করেছেন, তখন রাজ্য নেতৃত্ব কোথায় ছিলেন? এই প্রশ্নে রবিবার তোলপাড় বিজেপি-র রাজ্য দফতর।

Advertisement

শনিবার কলকাতার পুরভোটে শাসক দলের হামলার মুখে বিজেপি-র নড়বড়ে সংগঠনের চেহারাটা ফের প্রকাশ্যে এসেছে। শনিবার কোথাও বিজেপি-র বুথে ভাঙচুর হয়েছে। কোথাও মার খেয়ে জখম হয়ে হাসপাতালে যেতে হয়েছে বিজেপি কর্মী বা প্রার্থীকে। কোথাও বা়ড়িতে আক্রমণের জেরে ঘরছাড়া কর্মীরা। কিন্তু দলের বেশির ভাগ রাজ্য নেতাকেই ঘটনাস্থলে দেখা যায়নি। সন্ত্রাসের অভিযোগ শোনার জন্য আক্রান্ত কর্মী এবং প্রার্থীদের এ দিন বৈঠকে ডেকেছিলেন বিজেপি-র রাজ্য নেতৃত্ব। সেখানেই দলের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমলেন্দু চট্টোপাধ্যায় এবং সহ সভাপতি প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনে ক্ষোভ উগরে দেন কর্মীরা। সন্ত্রাসের বিবরণ দেওয়ার পাশাপাশিই তাঁরা অভিযোগ করেন, কর্মীরা বিভিন্ন জায়গায় মার খেলেন। অথচ, রাজ্য নেতৃত্ব দফতরের ঠান্ডা ঘরে বসে সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েই দায় সারলেন! আসলে তাঁদের কর্মীদের প্রতি দায়িত্ববোধ নেই, আছে কেবল গদির লোভ। শনিবার দিনভর শাসক দলের সন্ত্রাসের সময়ে প্রতাপবাবু, সাধারণ সম্পাদক রবীন চট্টোপাধ্যায় ও দুই তারকা নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, লকেট চট্টোপাধ্যায় কোথাও কোথাও আক্রান্ত কর্মীদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দলীয় কর্মীদের বক্তব্য, তৃণমূলের কৌশলী আক্রমণের সামনে ওই সাহায্যটুকু যথেষ্ট হয়নি।

বৈঠকের মধ্যে ধুন্ধুমার করে অনেক কর্মী মাঝপথে বেরিয়েও যান। বেরনোর সময়ে ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের এক বিজেপি কর্মী অভিযোগ করেন, ‘‘গোলমালের সময় রাজ্যের শীর্ষ নেতৃত্বকে পাঁচ বার ফোন করেছিলাম। তিনি এক বার ধরেছিলেন। ধরে বলেছিলেন, মিডিয়াকে পাঠাচ্ছি। নিজে কিন্তু যাননি।’’

Advertisement

তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘মনে হচ্ছে, নেতারা তারকাদের সঙ্গে ঘুরে বেড়াতেই বেশি আগ্রহী। নিচু তলার কর্মীদের ব্যাপারে মন দেওয়ার অভ্যাসই তাঁদের তৈরি হয়নি।’’ ১৪৪টি ওয়ার্ডে দায়িত্ব নিয়ে লড়ার মতো লোকবলও যে বিজেপি-র নেই, তা-ও ক্ষোভের সঙ্গে জানিয়েছেন ওই নেতা। যাদবপুর মণ্ডলের নেতাদের আরও অভিযোগ, প্রার্থীদের পুরভোটে লড়ার খরচ দেওয়ার ক্ষেত্রেও বৈষম্য এবং ঢাক ঢাক গুড় গুড় করা হয়েছে। যুব মোর্চার নেতা কমলেশ সিংহও বিষোদ্গার করেন নেতাদের বিরুদ্ধে।

অমলেন্দুবাবু এবং প্রতাপবাবু কি অভিযোগের কোনও সমাধান দিতে পেরেছেন? দলীয় কর্মীরা জানান, তাঁরা সন্ত্রাসের যাবতীয় অভিযোগ লিখে দিতে বলেছেন। পুলিশ অধিকাংশ জায়গাতেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ নিচ্ছে না। তাই নেতারা আশ্বাস দিয়েছেন, আদালতের দ্বারস্থ হয়ে এফআইআর করার ব্যবস্থা করাবেন। কিন্তু এখনও তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা যে সব বিজেপি কর্মীর বাড়িতে হানা দিচ্ছে, তাঁদের নিরাপত্তার দায়িত্ব কি রাজ্য নেতৃত্ব নিচ্ছেন? কর্মীদের বক্তব্য, নেতারা বলেছেন, আদালতের নির্দেশ পেলে পুলিশই নিরাপত্তা দিতে বাধ্য হবে। তাই আদালতের লড়াইতেই জোর দিতে হবে।

এ দিন বৈঠকে কর্মীদের ক্ষোভের মুখে পড়ার পর অমলেন্দুবাবু এবং প্রতাপবাবু ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে জখম দলীয় কর্মী বিকাশ জয়সবালকে দেখতে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে যান। প্রতাপবাবু বলেন, ‘‘রাজ্য নেতৃত্ব সন্ত্রস্ত কর্মীদের পাশে দাঁড়াতে কোথাও যাননি, এ কথা ঠিক নয়। আমি নিজেই তো বেশ কিছু ওয়ার্ডে গিয়েছি। আর সব ওয়ার্ডে যাওয়া কি সম্ভব?’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement