ভবানীপুরে নিজের বাড়ির নর্দমায় এক প্রৌঢ়ার মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনা ঘিরে রহস্য ঘনীভূত হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি মানলে এই ঘটনায় প্রোমোটার চক্রের জড়িত থাকার অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কারণ, তাঁদেরই একাংশ জানিয়েছেন, বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার জন্য ওই মহিলাকে বেশ কিছু দিন ধরেই হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। এমনকী, কিছু দিন আগে তাঁকে অপহরণেরও অভিযোগ ওঠে।
পুলিশ জানায়, এ দিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ ভবানীপুর থানার ১০৩/২বি বকুলবাগান রোডে বাড়ির নর্দমার ম্যানহোল থেকে ওই প্রৌঢ়ার দেহ উদ্ধার হয়। মৃতার নাম সুনন্দা গঙ্গোপাধ্যায় (৬০)। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, এটি অস্বাভাবিক মৃত্যু। কারণ, মৃতার পা দু’টি ছাড়া দেহের বাকি অংশ ছিল ম্যানহোলের ভিতরে। ম্যানহোলের ঢাকনা সরিয়ে পাশে রাখা ছিল। মৃতদেহের জিভ বেরিয়ে ছিল। ময়না-তদন্তেও দেহে কিছু আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। মুখের ভিতর থেকে মিলেছে মাটি। তবে মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট ভাবে জানানো হয়নি। পরে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত চালাচ্ছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, দোতলা ওই বাড়িতে বহু বছর ধরেই থাকতেন সুনন্দাদেবীরা। বাড়িটি তাঁর প্রয়াত শাশুড়ির নামে ভাড়া নেওয়া। সুনন্দাদেবীর স্বামী বুদ্ধদেববাবু এবং তাঁদের ছেলে বেশ কয়েক বছর আগে ওই বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছেন। তার পর থেকে ওই বাড়িতে একাই ছিলেন প্রৌঢ়া। স্থানীয় সূত্রে খবর, বাড়ির দোতলায় পথশিশুদের জন্য একটি স্কুল চালাতেন সুনন্দাদেবী। প্রতিবেশীরা জানান, বাড়ির সামনের রকে যে সব পথশিশু ঘুমোত, সকালে উঠে তাদের হাতে চা-বিস্কুট খাওয়ার টাকা দিতেন ওই মহিলা। এ দিন সকাল থেকে সুনন্দাদেবীর দেখা না পেয়ে সাড়ে ন’টা নাগাদ রকে থাকা এক বালক বাড়ির দরজার কড়া নাড়ে। দরজা খুলে যেতে ভিতরে গিয়ে সে দেখে উঠোনের পাশের নর্দমায় পড়ে আছেন প্রৌঢ়া। ওই বালকই ছুটে গিয়ে প্রতিবেশীদের সব জানায়। এর পরে খবর যায় পুলিশে। ছেলেটিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার জন্য সুনন্দাদেবীকে হুমকি দেওয়া হতো। ঘটনার তদন্ত শুরু করে পুলিশ জানতে পেরেছে, ২০১২ সালে বাড়ির মালিক বাড়িটি বিক্রি করে দেন। শুধু তা-ই নয়, ২০১৪ সালে সুনন্দাদেবীকে অপহরণের অভিযোগ ওঠে তাঁর স্বামী এবং হিমাংশু শাহ নামে এক প্রোমোটারের বিরুদ্ধে। পরে অভিযুক্তেরা থানায় আত্মসমর্পণ করেন। মামলা আদালতে উঠলে হিমাংশু স্টে অর্ডার পান। সুনন্দাদেবীর মৃত্যুর সঙ্গে বাড়ি বিক্রি এবং অপহরণের ওই ঘটনার কোনও যোগসূত্র আছে কি না, তা দেখা হবে বলে জানান কলকাতা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) বিশাল গর্গ।
এ দিনের ঘটনা নিয়ে বুদ্ধদেববাবু শুধু বলেন, ‘‘আমি হতবাক! এর বেশি কিছুই বলতে চাই না।’’ আর হিমাংশুবাবুর শরৎ বসু রোডের বাড়িতে গেলে তাঁর পরিবারের তরফে জানানো হয়, তিনি বাড়িতে নেই। মোবাইলে ফোন বা এসএমএস করে কোনও জবাব মেলেনি।
এ দিনের ঘটনায় ফের বেআব্রু শহরে বয়স্কদের নিরাপত্তাহীনতার দিকটি। ইদানীং পরপর একাকী প্রবীণদের খুনের ঘটনা এমনিতেই উদ্বেগ বাড়াচ্ছে শহরের। কয়েক মাস আগেই মধ্য কলকাতার তালতলায় নিজের বাড়িতে এক আত্মীয়ের হাতে খুন হয়েছিলেন আলো মজুমদার নামে বছর সত্তরের এক বৃদ্ধা। রবিবার জোড়াসাঁকো এলাকায় নিজের বাড়িতে খুন হন খুরশিদ আলম নামে আর এক বৃদ্ধও। এ দিনের ঘটনার পরে লালবাজারের শীর্ষ কর্তারা জানান, সব দিক খতিয়ে দেখে তদন্ত হবে। জনবহুল পাড়ায় কী ভাবে পরপর এমন ঘটনা ঘটছে, দেখা হবে তা-ও।