পায়ের সঙ্গে মাটিও কি হারাচ্ছেন রাহুল

রাহুল এখনও এনআরএসে ভর্তি। একটি পায়ে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন, অন্যথায় পচন ধরে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকেরা। অথচ বছর ছাব্বিশের ওই যুবকের রক্তের গ্রুপ বিরল হওয়ায় প্রয়োজনীয় রক্ত মিলছে না। অস্ত্রোপচারও করা যাচ্ছে না। এমনিতেই পা কাটা গিয়ে প্রচুর রক্তপাত হওয়ায় রক্তাল্পতায় ভুগছেন তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৬ ০০:৫৪
Share:

পায়ের তলায় মাটি ঠাহর করার উপায় নেই। কারণ, পা দু’টোই তো আর নেই। কিন্তু তার প্রতিকারও নেই!

Advertisement

পুলিশের কাছে অভিযোগে ১২ জনের নাম আছে, যারা চপার দিয়ে ট্যাংরার তৃণমূলকর্মী রাহুল রায়ের পা দু’টো কেটে নিয়েছিল। কিন্তু সাত দিন পরে এক জনও ধরা পড়েনি।

রাহুল এখনও এনআরএসে ভর্তি। একটি পায়ে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন, অন্যথায় পচন ধরে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকেরা। অথচ বছর ছাব্বিশের ওই যুবকের রক্তের গ্রুপ বিরল হওয়ায় প্রয়োজনীয় রক্ত মিলছে না। অস্ত্রোপচারও করা যাচ্ছে না। এমনিতেই পা কাটা গিয়ে প্রচুর রক্তপাত হওয়ায় রক্তাল্পতায় ভুগছেন তিনি।

Advertisement

গত ১২ মার্চ, শনিবার শিয়ালদহ ১ নম্বর রেল সেতুর নীচ থেকে দু’পা কাটা অবস্থায় ওই যুবককে উদ্ধার করা হয়। ঘটনায় সামনে আসে তোলাবাজির জেরে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। রাহুল ও তাঁর পরিবারের দাবি, তৃণমূলের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর ১২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন তাঁরা। কিন্তু এখনও এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অভিযুক্তেরা। বাড়ির লোকেদের, এমনকী মহিলাদেরও তারা শাসানি দিচ্ছে বলে অভিযোগ। রবিবার ট্যাংরার দেবেন্দ্রচন্দ্র দে রোডের ঝুপড়িতে বসে রাহুলের মা সোনিয়া রায় বলেন, ‘‘আমরা বারবার থানায় বলছি। পুলিশ কিছু করছে না। গরিব বলেই কি আমাদের বিচার হবে না!’’

যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) দেবাশিস বড়াল বলেন, ‘‘শনিবার রাতে শিয়ালদহ জিআরপি থেকে মামলাটি কলকাতা পুলিশের কাছে এসেছে। ট্যাংরা থানা তদন্ত শুরু করেছে। ডাক্তারি রিপোর্ট নেওয়া হবে।’’

কিন্তু আহতের পরিবার যে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন? দেবাশিসবাবু বলেন, ‘‘আমরা তদন্তভার পেয়েছি। নিশ্চয়ই নিরাপত্তার দিকটি দেখব।’’

পা কাটার ঘটনায় অভিযোগ মূলত স্থানীয় বাসিন্দা, আর এক তৃণমূলকর্মী প্রদীপ গুহের বিরুদ্ধে। রাহুলের দাবি, তোলা আদায়ের জন্য প্রদীপ ছেলে জোগান দিতে বলে। রাজি না হওয়াতেই বিরোধ। রাহুলের বোন ভারতী বলেন, ‘‘প্রদীপের লোকেরা বলেছে, মেয়েরা বাড়িতে একা থাকলে ওরা দেখে নেবে।’’

এ দিন প্রদীপের বাড়িতে গেলে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহিলা জানান, তিনি প্রদীপের দিদি। তাঁর কথায়, ‘‘ও (প্রদীপ) তো সেই সোমবার থেকে বাড়ি আসছে না। যোগাযোগও করতে পারছি না।’’ এ দিনও প্রদীপের মোবাইলে শোনা গিয়েছে, সেটি বন্ধ।

ঘটনার পরে এন্টালির বিধায়ক স্বর্ণকমল সাহা মন্তব্য করেন, নেশা করে লাইনে পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনাতেই পা কাটা যায় রাহুলের। প্রসঙ্গত, রাহুলকে যাঁর গোষ্ঠীর ছেলে বলা হয়, সেই প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর (এখন জেলে) শম্ভুনাথ কাও এবং স্বর্ণকমলবাবু দলে পরস্পর-বিরোধী বলে পরিচিত। এ দিন স্বর্ণকমলবাবু বলেন, ‘‘ঘটনাটা কী ভাবে হল, বুঝতে পারছি না। তদন্ত চলছে। প্রকৃত দোষীরা শাস্তি পাবে।’’

ঘটনার পরে ৫৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর স্বপন সমাদ্দার বলেছিলেন, রাহুলকে চেনেন না, ঘটনা নিয়ে তাঁর ধারণা নেই। তাঁর সঙ্গে শম্ভুনাথ কাওয়ের সম্পর্ক ভাল, নিজেই জানান। এ দিন স্বপনবাবুই বলেন, ‘‘আমাদের কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ উঠছে। খবর নিলেই জানা যাবে, ওদের মতো ভদ্র ছেলে হয় না। শুনেছি, ওই রাতে সাড়ে আটটা থেকে রাহুল রেললাইনের পাশে মদ খাচ্ছিল।’’

তৃণমূলের একাংশের বক্তব্য, পায়ের তলা থেকে সত্যিই মাটি সরছে শাসক দলের কর্মী রাহুল রায়ের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement