—প্রতীকী চিত্র।
চিনা আগ্রাসনের ঢাকে কাঠি পড়ল কলকাতায় আতসবাজির বাজারেও।
উৎসব শুরুর আগেই বাজারে ঢুকতে শুরু করেছে নিষিদ্ধ চিনা আতসবাজি। কলকাতায় পৌঁছনোর পরে ওই বাজি চুপিসারে বড়বাজারের পাইকারি বিক্রেতাদের কয়েক জনের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হচ্ছে, এমনটা জানাচ্ছেন বাজি ব্যবসার সঙ্গে যুক্তদের একাংশ।
ডোকলাম নিয়ে নয়াদিল্লি ও বেজিংয়ের মধ্যে সম্পর্কের অবনতির জন্যে নয়, তার অনেক আগে থেকেই চিন থেকে আমদানি করা সব রকম বাজি এ দেশে নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছে। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, চিনা বাজি ক্ষতিকর রাসায়নিক দিয়ে তৈরি। তা ছাড়া কিছু চিনাবাজি আবার ফেটে ১৩০-১৪০ ডেসিবেল শব্দ উৎপন্ন করে। অথচ এ রাজ্যে বাজির অনুমোদিত শব্দমাত্রা ৯০ ডেসিবেল।
গত দু’ বছর ধরে কলকাতা পুলিশ কোন কোন বাজি নিষিদ্ধ, কোনগুলি নয়— এই মর্মে জারি করা বিজ্ঞপ্তির মধ্যে নির্দিষ্ট ভাবে লিখে দিচ্ছে, চিনা শব্দবাজি এখানে বিক্রি বা ব্যবহার করা চলবে না। কিন্তু সেই বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয় কালীপুজোর দিন কয়েক আগে। তখন নিষিদ্ধ ওই বাজি সাধারণ ক্রেতাদের হাতেও পৌঁছে যায়। ফলে বিজ্ঞপ্তি জারি করে তেমন লাভ হয় না। এ বার অবশ্য লালবাজার আগেভাগে খবর পেয়ে চিনা বাজির খোঁজে অনুসন্ধান চালাচ্ছে। লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘চিনের আতসবাজি শহরে ঢুকে পড়াটা যথেষ্ট উদ্বেগের বিষয়। নিষিদ্ধ বাজির বিরুদ্ধে আমরা ১২ সেপ্টেম্বর অভিযান শুরু করেছি। তবে এখনও চিনা বাজি আমরা উদ্ধার করতে পারিনি।’’
বাজির লাইসেন্স মূলত কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা, পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড এক্সপ্লোসিভস সেফটি অর্গানাইজেশন বা পেসো-র হাতে। পেসো-র একটি সূত্রের খবর, কলকাতায় চিনা শব্দবাজির নতুন করে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ও বাজারে ঢুকে পড়া বাজি বাজেয়াপ্ত করতে কী ভাবে সবাইকে সচেতন করা যায়, সেই ব্যাপারে দু’-তিন দিনের মধ্যে পুলিশ ও বাজি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তারা বৈঠক করবে।
পেসো-র যুগ্ম মুখ্য নিয়ন্ত্রক পদমর্যাদার এক আধিকারিক বলেন, ‘‘শুধু চিন নয়, বিদেশ থেকে আমদানি হওয়া সমস্ত আতসবাজি ভারতে নিষিদ্ধ। তবে গত কয়েক বছর ধরে মূলত চিনা শব্দবাজি বিপুল পরিমাণে ভারতের বাজারে ছেয়ে গিয়েছিল বলে আমরা সে দিকে বেশি নজর রাখি।’’ কিন্তু এই বাজি কেন নিষিদ্ধ? পেসো-র ওই উচ্চপদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘চিনে তৈরি ওই বাজিতে পটাসিয়াম ক্লোরেটের মতো ক্ষতিকর রাসায়নিক থাকে। এর সংস্পর্শে এলে নানা রকম জটিলতার আশঙ্কা। চোখ ও ত্বকের ক্ষতি করতে পারে এই রাসায়নিক।’’ পেসো-র কর্তারা বলছেন, পশ্চিমবঙ্গে শব্দবাজি নিষিদ্ধ, তাই সেই বাজির বিরুদ্ধে এখানে বেশি প্রচার করা হয়। তবে গোটা দেশে চিনা বাজি নিষিদ্ধ। এখন তা নিয়েও জোরদার প্রচার হওয়া উচিত বলে পেসো মনে করছে।
বাজি ব্যবসায়ীদের একাংশের দাবি, বড় বড় কন্টেনারে করে অন্য জিনিসের সঙ্গে সমুদ্রপথে পাঠানো চিনা শব্দবাজি প্রথমে বন্দরে ঢুকছে, তার পরে চোরাপথে পৌঁছে যাচ্ছে এই শহরের ব্যবসায়ীদের হাতে।
ব্যবসায়ীদের এক জন, টালা বাজি বাজারের সাধারণ সম্পাদক শুভঙ্কর মান্না বলেন, ‘‘চিনে তৈরি আতসবাজি ভারতে নিষিদ্ধ। এটা ক্ষতিকর। এমন সব রকম নিষিদ্ধ বাজি বিক্রি থেকে আমরা দূরে থাকব।’’