আদিগঙ্গায় ভেসে যেন নরক দর্শন

নামের সঙ্গে গঙ্গা জুড়ে রয়েছে তার। কিন্তু চেহারায় নর্দমাকেও বোধ হয় হার মানাতে পারে! রবিবার আদি গঙ্গায় ঘুরে উঠে এসেছে এমন ছবিই।

Advertisement

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৬ ০০:৫১
Share:

এমনই চেহারা। — রণজিৎ নন্দী

নামের সঙ্গে গঙ্গা জুড়ে রয়েছে তার। কিন্তু চেহারায় নর্দমাকেও বোধ হয় হার মানাতে পারে! রবিবার আদি গঙ্গায় ঘুরে উঠে এসেছে এমন ছবিই।

Advertisement

হেস্টিংস থেকে নৌকা চেপে আদিগঙ্গায় ঢুকতেই নাকে এল বিকট গন্ধ। একটু এগোতেই চোখে পড়ল দু’পাশের বস্তিতে সার দিয়ে রয়েছে খাটা পায়খানা। কয়েকটি পাকা শৌচাগার রয়েছে বটে। কিন্তু তার নিকাশি নালা সরাসরি এসে পড়েছে আদিগঙ্গাতেই!

শুধু শৌচাগার নয়, আদিগঙ্গা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অজস্র প্লাস্টিক, জঞ্জাল। সেই নোংরা ঠেলে নৌকার এগোনোই কার্যত দায়। আদিগঙ্গার দু’পাড়েও ডাঁই করা আবর্জনার স্তূপ। প্রশাসন উচ্ছেদ অভিযানের কথা জানালেও নজরে এসেছে কয়েকটি গরু-মোষের খাটালও।

Advertisement

আদিগঙ্গার দূষণ নিয়ে পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ বহু দিনের। তা সত্ত্বেও দূষণ কমানোর কোনও প্রচেষ্টা তেমন ভাবে নজরে আসেনি। শেষে জাতীয় পরিবেশ আদালতে কালীঘাট সংক্রান্ত একটি মামলায় আদিগঙ্গার দূষণটি জুড়ে গিয়েছে। তার ফলে খাটাল উচ্ছেদ, খাটা পায়খানার বদলে স্যানিটারি শৌচাগার নির্মাণ, আদিগঙ্গা ও তার দু’পাড় থেকে বর্জ্য তুলে ফেলা-সহ একাধিক নির্দেশ দিয়েছিল জাতীয় পরিবেশ আদালতের ডিভিশন বেঞ্চ। আদালতে সেই কাজের অনেকটাই করা হয়েছে বলে পুর-প্রশাসন দাবি করলেও এ দিন কিন্তু ভিন্ন ছবি ধরা পড়েছে।

পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ, শহরের নিকাশি নালা সরাসরি এসে আদিগঙ্গায় পড়েছে। তা-ও দূষণের অন্যতম উৎস। আদালত সেগুলি বন্ধ করতে বলেছিল। এ দিন দেখা গিয়েছে হেস্টিংস থেকে আলিপুর, প্রায় সব ক’টি নিকাশি নালার মুখই খোলা। এই পরিস্থিতিতে পুরসভা আদিগঙ্গার দূষণ রুখতে কতটা উদ্যোগী, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এই মামলায় আদালতবান্ধব হিসেবে নিযুক্ত পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। এ দিন আদিগঙ্গা পরিদর্শনের পরে তিনি বলেন, ‘‘ছবি-সহ রিপোর্ট সোমবার আদালতে জমা দেব। দূষণ করার জন্য পুরসভার জরিমানা হওয়া উচিত।’’

আদিগঙ্গার দূষণ যে মাত্রাছাড়া তা জাতীয় পরিবেশ আদালতে রিপোর্ট দিয়ে জানিয়েছে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। তারা জানিয়েছে, আদিগঙ্গার জলে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা প্রায় শূন্য! ফলে এই জলে কোনও জীবের টিকে থাকা মুস্কিল। পরিবেশবিদেরা জানান, জলের দূষণের মাত্রা বোঝা যায় ফিক্যাল কলিফর্ম ব্যাক্টেরিয়ার মাত্রা থেকে। দূষণ যত বাড়বে, ততই ব্যাক্টেরিয়ার মাত্রা বাড়বে। পর্ষদের রিপোর্টই বলছে, আদিগঙ্গায় এই ব্যাক্টেরিয়ার মাত্রা স্বাভাবিকের কয়েক হাজার গুণ বেশি।

দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এক বিজ্ঞানীর কথায়, ‘‘মানুষ ও গরু-মোষের মল-মূত্রই এই ব্যাক্টেরিয়ার উৎস। দূষণ রুখতে নিকাশি ও অস্থায়ী শৌচাগার উচ্ছেদ করতে হবে।’’ তিনি জানান, জল থেকে প্লাস্টিক ও অন্যান্য বর্জ্য পদার্থও দূর করতে হবে। তা না হলে দূষণ আদিগঙ্গার পাশে থাকা লোকজনের উপরেও প্রভাব ফেলবে। ‘‘খোদ মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িই তো আদিগঙ্গার পাশে,’’ বলছেন তিনি।

মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আদিগঙ্গার দূষণ রোখার বিষয়টি বড়। কিছু কাজ হয়েছে। বাকিটাও হবে।’’ তিনি জানান, দূষণ আটকাতে বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট (ডিপিআর) তৈরি। পুর সূত্রে খবর, এ কাজে বিশ্ব ব্যাঙ্ক আর্থিক সাহায্য করবে। তাই ডিপিআর তাদের জমা দেওয়া হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement