—প্রতীকী ছবি।
মেট্রোয় সিসি ক্যামেরার নজরদারি যে আসলে ফস্কা গেরো, তা আরও এক বার প্রমাণ হল শনিবার রাতের একটি ঘটনায়। দমদমগামী শেষ ট্রেন থেকে নামার পরে এসপ্লানেড স্টেশনে একা আটকে থাকলেন পেশায় চিকিৎসক, বছর চৌত্রিশের এক মহিলা যাত্রী। বাইরে বেরোনোর অধিকাংশ গেট বন্ধ থাকায় শাটারে ধাক্কা মেরে সাহায্যের জন্য চিৎকার করলেন তিনি। এত কিছুর পরেও কিন্তু কাদের গাফিলতিতে এই ঘটনা, তা চিহ্নিত করে উঠতে পারলেন না মেট্রো কর্তৃপক্ষ। পদক্ষেপ বলতে শুধু শেষ ট্রেন চলে যাওয়ার পরে দ্রুত স্টেশন চত্বর খালি করার জন্য যাত্রীদের উদ্দেশে মাইকে ঘোষণার সিদ্ধান্ত।
পাশাপাশি মেট্রোর একটি সূত্রের বক্তব্য, ওই মহিলা স্টেশনে রয়ে গেলেন ও তা কর্তব্যরত রেলরক্ষী বাহিনী বা মেট্রোর কোনও কর্মীর চোখে পড়ল না, সেটা যথেষ্ট উদ্বেগের। ওই যাত্রী উদ্ধার হতে চেয়েছিলেন বলে ঘটনাটি সামনে এসেছে। কিন্তু নাশকতা ঘটানোর জন্য কেউ লুকিয়ে থাকলে কী হত? সে ক্ষেত্রে মেট্রোর নিরাপত্তা নিয়েও কিন্তু প্রশ্ন উঠছে।
মেট্রো সূত্রে খবর, শনিবার এসপ্লানেড স্টেশনে রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ দমদমগামী ট্রেন থেকে নেমে ওই যাত্রী নিউ মার্কেটের দিকে গেট দিয়ে বেরোতে গিয়ে দেখেন, শাটার নামানো। আতঙ্কিত হয়ে তিনি ধাক্কা মেরে বাইরের লোকের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন। সে সময়ে ওই গেট সংলগ্ন ফুটপাতে বিকিকিনি শেষে মালপত্র গোছানোর কাজ করছিলেন হকারেরা। মহিলার চিৎকার শুনে তাঁরা ছুটে আসেন। ফোন করা হয় লালবাজার কন্ট্রোল রুমে। পুলিশ ফোন করে পার্ক স্ট্রিটে মেট্রোর কন্ট্রোল রুমে।
কলকাতা পুলিশের ফোন পেয়ে মেট্রো কর্তৃপক্ষ রেলরক্ষী বাহিনীকে বিষয়টি জানান। শেষ পর্যন্ত বাহিনীর সদস্যেরা চাবি এনে শাটারের দরজা খুলে মহিলাকে উদ্ধার করেন। কী ঘটেছে, আটকে থাকা অবস্থাতেই ফোনে স্বামীকে জানিয়েছিলেন মহিলা। উদ্ধার হওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যে স্বামী ঘটনাস্থলে পৌঁছলে তাঁর সঙ্গে রিজেন্ট পার্ক সংলগ্ন আজাদগড়ের বাড়িতে ফেরেন ওই যাত্রী। রবিবার তাঁর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
এর আগে দমদমে যুগলকে মারধরের ঘটনায় প্রমাণ হয়েছিল, প্ল্যাটফর্ম ও স্টেশন চত্বরের সব অংশ সিসি ক্যামেরার আওতাভুক্ত নয়। তখনই ক্যামেরার সংখ্যা বাড়ানোর দাবি ওঠে। তার পরেও কী ভাবে এক মহিলা সুনসান স্টেশনে আটকে রইলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মেট্রো সূত্রে খবর, শেষ ট্রেন যাওয়ার পরে কর্মরত ‘কমার্শিয়াল পোর্টারে’রা স্টেশনের প্রবেশপথ বন্ধ করেন। কোনও যাত্রী ভিতরে রয়েছেন কি না, তা দেখাও তাঁদের দায়িত্ব। কিন্তু সেই কর্মীরা দায়িত্ব ঠিক মতো পালন করেননি বলে অভিযোগ। যদিও মেট্রোর এক কর্তার দাবি, সিসি ক্যামেরার ফুটেজে ট্রেন থেকে নামার পরে মহিলাকে মোবাইলে কথা বলতে দেখা গিয়েছে। তাই অন্যেরা সমস্যায় না পড়লেও তিনি আটকে পড়েন।
ঘটনা যা-ই ঘটুক, গাফিলতি কাদের সে বিষয়ে মেট্রো কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট করে কিছু জানাতে পারেননি। তবে তাঁদের দাবি, ঘটনাটি সামনে আসার পরে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখতে গিয়ে তাঁরা ওই ক্যামেয়ায় মহিলা যাত্রীর ছবি দেখতে পেয়েছেন।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে মেট্রোর মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শেষ ট্রেন চলে যাওয়ার পরে দ্রুত স্টেশন খালি করতে ঘোষণার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রবিবার থেকেই তা শুরু হয়েছে।’’