উচ্ছ্বাস: পিকনিকে পথশিশুরা। বৃহস্পতিবার, ময়দানে। নিজস্ব চিত্র
সকাল সকাল নয়, পিকনিক শুরু হল দুপুরে। কারণ, জনা পনেরো কচিকাঁচার দলটার সকলেই ঘুম থেকে উঠেছে দেরি করে। উৎসবের আলো-ঝলমলে শহরে রাত জাগছে ওরাও। তবে এই রাত জাগা উদ্যাপনের আনন্দে নয়। ওদের কেউ সান্টা টুপি, কেউ বেলুন বা ধূপ বিক্রি করে শহরের পথে। কেউ বাসন মাজে হোটেলে। কেউ আবার দাঁড়িয়ে থাকে ঘোড়ার লাগাম ধরে। ময়দানে ঘুরতে আসা কেউ যদি চড়তে চান!
পাঁচ থেকে পনেরোর ওরা সকলেই পথশিশু। বাসস্থান গড়িয়াহাট উড়ালপুলের নীচে। সেখান থেকে পুলিশ সরিয়ে দিলে ঠাঁই হয় আশপাশের ফুটপাতে। খিদের তাড়নায় নিতান্ত অল্প বয়সেই রোজগারের পথ খুঁজে নিতে বাধ্য হয়েছে ওরা। বৃহস্পতিবারটা অবশ্য আর পাঁচটা দিনের থেকে আলাদা ছিল আরিফা-বুবাইদের কাছে। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে ওই পথশিশুদের নিয়ে এ দিন ময়দানে আয়োজন করা হয়েছিল পিকনিকের।
রোহিত-শাহবানুদের হাতে হাতে এ দিন ছিল লাল-সাদা-গোলাপি বেলুন। বিক্রির জন্য নয়, খেলার জন্য। বেলুন হাত ফসকে উড়ে গেলে বা ফেটে গেলে হেসে গড়িয়ে পড়ছিল দলটা। দৌড়তে দৌড়তেই তাদের সিদ্ধেশ্বরদা-অর্চনদার কাছে গান চালানোর আবদারও করে ফেলে কেউ কেউ। কয়েক ঘণ্টা নিজেদের ইচ্ছে মতো কাটানোর সুযোগ পেয়ে তখন আনন্দ উপচে পড়ছে ওদের চোখে-মুখে। কখনও ক্রিকেট, কখনও কানামাছি বা রুমাল চোর খেলতে মশগুল হয়ে পড়ে ওরা। তার মধ্যেই সকলে দৌড় লাগায় পড়ে থাকা একটি গাছের দিকে। বড়রা গাছের ডালে উঠতে সাহায্য করে ছোটদের। উত্তুরে হাওয়ায় মিশে যায় সমবেত হাসির আওয়াজ। ‘‘একটা দিনই তো, আজ আর কাজে গেলাম না’’— বলে রোহিত। বিরিয়ানি আর মোয়া দিয়ে যখন খাওয়া শেষ করল ওরা, তখন দুপুর গড়িয়েছে বিকেলে।
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটির তরফে চন্দ্রশেখর কুন্ডু জানালেন, অন্তত একটা দিন যাতে কাজ থেকে ওই শিশুদের ছুটি দেওয়া যায়, তার জন্যই এমন উদ্যোগ। তাঁদের সংস্থার উদ্যোগে মাইথনেও এই ধরনের শিশুদের নিয়ে পিকনিকের আয়োজন করা হয়। চন্দ্রশেখরবাবু বলেন, ‘‘শীতের সময়ে পিকনিকের জায়গাগুলিতে কাজ করে বহু শিশু শ্রমিক। আশা করব, এমন উদ্যোগে আরও অনেকে এগিয়ে আসবেন। উদ্যাপনে শামিল করে নেবেন ওদের।’’
আজ ফের ফিরতে হবে রোজকার জীবনে। তার আগে অন্য রকম ভাবে কাটানো সময়টুকুই যেন আরিফাদের কাছে বড়দিনের উপহার।