ছবি: প্রকাশ্যে আসা ভিডিয়ো থেকে।
ভিড়ে ঠাসা একটি ঘর। কেউ দাঁড়িয়েছে রয়েছেন, কেউ হাঁটাচলা করছেন। কেউ কেউ কথাও বলছেন নিজেদের মধ্যে। দৃশ্য বলতে শুধু এটুকুই। ৪৩ সেকেন্ডের ওই ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এনে দাবি করা হল, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের জরুরি বিভাগের চারতলার যে সেমিনার হল মহিলা চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হয়েছিল, ভিডিয়োটি সেই সেমিনার হলের। শুধু তা-ই নয়, মহিলা চিকিৎসকের দেহ উদ্ধারের ঠিক পর পরেই সেখানকার দৃশ্য ওই ভিডিয়োয় বন্দি রয়েছে বলেও দাবি করা হচ্ছে। যদিও ভিডিয়োয় নিহত মহিলা চিকিৎসকের দেহ দেখা যাচ্ছে না (আনন্দবাজার অনলাইন এই ভিডিয়োটির সত্যতা যাচাই করেনি)। ভিডিয়ো দেখেও কোনও ভাবেই বোঝার উপায় নেই যে, সেটি কবে, কখন তোলা হয়েছে। আরজি কর্তৃপক্ষও এ বিষয়ে সরকারি ভাবে কিছু জানায়নি। মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় তদন্তভার এখন সিবিআইয়ের হাতে। তারাও এ ব্যাপারে কিছু বলেনি সরকারি ভাবে।
মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় ধৃত সেই সিভিক ভলান্টিয়ারের একটি ভিডিয়ো আগেই প্রকাশ্যে এসেছিল (ওই ভিডিয়োটিরও সত্যতা আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করেনি)। ওই ভিডিয়োয় অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ারকে হাসপাতালের করিডরে প্রবেশ করে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু সেমিনার হলের ভিতরকার কোনও দৃশ্য প্রকাশ্যে আসেনি। সোমবার নতুন যে ভিডিয়োটি প্রকাশ্যে এসেছে, সেটি সেই সেমিনার হলেরই বলে দাবি করা হচ্ছে। ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, একটি ঘরের ভিতরে বহু লোকের ভিড়। অন্তত জনা তিরিশেক। দাবি, তাঁদের মধ্যেই ছিলেন আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের তৎকালীন আপ্তসহায়ক প্রসূন চট্টোপাধ্যায়, সন্দীপের আইনজীবী শান্তনু দে, হাসপাতালের ফরেন্সিক মেডিসিনের শিক্ষক দেবাশিস সোম। আরজি কর মেডিক্যালের আউটপোস্টের ওসি সঞ্জীব মুখোপাধ্যায়কেও ওই ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে বলে দাবি করা হয়েছে।
এই ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসার পরেই নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। অনেকের বক্তব্য, ভিডিয়োটি যদি মহিলা চিকিৎসকের দেহ উদ্ধারের পরেই তোলা হয়ে থাকে, তা হলে প্রশ্ন: যে জায়গা থেকে একটি দেহ উদ্ধার হয়েছে, সেখানে একসঙ্গে এত লোক কী ভাবে ঢুকে পড়লেন পুলিশের উপস্থিতিতে? কেন পুলিশ তাঁদের বাধা দিল না? নিয়ম অনুযায়ী, দেহ উদ্ধারের পর সেই জায়গা সিল করে দেওয়ার কথা পুলিশের। নইলে তথ্যপ্রমাণ নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তার পরেও সেমিনার হলে যাওয়া-আসায় ওই মুহূর্তে পুলিশের কোনও নিয়ন্ত্রণ ছিল না কেন? দেহ উদ্ধারের পর যাঁদের সেমিনার হলে দেখা গিয়েছে ভিডিয়োর সূত্রে, তাঁরা সেখানে কত ক্ষণ ছিলেন? ‘সন্দীপ-ঘনিষ্ঠ’ যাঁদের দেখা গিয়েছে বলে অভিযোগ, সেখানে তাঁদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
এ প্রসঙ্গে রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘আমিও দেখেছি ভিডিয়োটা। ওই সময় কেউ কেউ ঢুকে গিয়েছিলেন। কিন্তু ফরেন্সিক আসার পর তালা দিয়ে সিল করে দেওয়া হয়েছিল সেমিনার হল। এ ধরনের ঘটনা ঘটলে কৌতূহলীরা এ রকম ভাবে এসে পড়েন। তবে আমি বিশ্বাস করি, এই জঘন্য অপরাধের শাস্তি হবে।’’