Child Death

বাইক থেকে পড়ে ট্রেলারের চাকায় পিষ্ট একরত্তি

পুলিশ সূত্রের খবর, মৃত শিশুটির নাম শ্লোক জায়সওয়াল। আলিপুরে ধনধান্য প্রেক্ষাগৃহের কাছেই সূর্য সেন বাস্তুহারা কলোনিতে পরিবারের সঙ্গে থাকত সে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৭:৪৭
Share:

শ্লোক জায়সওয়াল।

মা-বাবার সঙ্গে মোটরবাইকে চেপে বিয়েবাড়ি থেকে ফিরছিল বছর দেড়েকের শিশুটি। সে সময়ে তার বাবা বাইকের নিয়ন্ত্রণ হারালে তিন জনই রাস্তায় ছিটকে পড়েন। আর তখনই পাশের ট্রেলারের চাকার তলায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় শিশুটির। বুধবার রাতে, আলিপুরের ধনধান্য প্রেক্ষাগৃহের কাছে ঠাকরে রোডে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ সূত্রের খবর, মৃত শিশুটির নাম শ্লোক জায়সওয়াল। আলিপুরে ধনধান্য প্রেক্ষাগৃহের কাছেই সূর্য সেন বাস্তুহারা কলোনিতে পরিবারের সঙ্গে থাকত সে।

Advertisement

এই ঘটনার পরে মৃতের পরিবার এবং প্রতিবেশীরা রাস্তায় ট্র্যাফিক পুলিশের ব্যবস্থাপনা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তুলেছেন। রাতের শহরে পুলিশি নজরদারি নিয়েও অভিযোগ উঠেছে। তবে সেই সঙ্গেই পাল্টা প্রশ্ন উঠেছে, মা-বাবার মাথায় হেলমেট থাকলেও কেন একরত্তি শিশুটির মাথা ফাঁকা ছিল? এমন একাধিক মৃত্যু দেখেও আর কবে সতর্ক হবেন অভিভাবকেরা?

পুলিশ সূত্রের খবর, শ্লোকের বাবা সঞ্জয় জায়সওয়াল একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন। বুধবার রাতে ভবানীপুরের একটি বিয়েবাড়ি থেকে বাবা ও মা জুহি সিংহের সঙ্গে মোটরবাইকে করে ফিরছিল শ্লোক। বাইকের পিছনের আসনে মায়ের কোলে বসে ছিল সে। সঞ্জয়ের অভিযোগ, রাত তখন প্রায় সাড়ে ১১টা। প্রেক্ষাগৃহের কাছে আলিপুর পুলিশ লাইনের ঠাকরে রোডে সেই সময়ে বড় বড় লরি চলাচল শুরু হয়ে গিয়েছে। মোটরবাইকে রাস্তার বাঁ দিক ধরে যাচ্ছিলেন তাঁরা। হঠাৎ একটি ট্রেলার তাঁর বাইকটিকে আরও বাঁ দিকে চাপতে শুরু করে। তার মধ্যেই কোনও মতে রাস্তার একটি হাম্প পেরোতে গিয়ে আর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি সঞ্জয়। তিন জনেই রাস্তায় ছিটকে পড়েন। স্বামী-স্ত্রী পড়েন ফুটপাতের দিকে। আর কোলের শিশু ছিটকে পড়ে ট্রেলারের চাকার দিকে!

Advertisement

সঞ্জয়ের কথায়, ‘‘ওই ট্রেলারচালক বাইকের হর্ন শোনেননি। টাল সামলাতে পারছি না দেখে আমি হাত দেখিয়েও সতর্ক করার চেষ্টা করি। কিন্তু আমাদের এতটাই চেপে দেওয়া হয় যে, আর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারিনি। পড়ে যাওয়ার পরে দেখি, ছেলে আর নড়ছে না। তত ক্ষণে ট্রেলারের চাকা ওর উপর দিয়ে চলে গিয়েছে...!’’ কথা শেষ করতে পারেন না বছর তিরিশের ওই যুবক। সদ্য সন্তানহারা মা-ও কথা হারিয়েছেন। এর পরে দু’জনেই চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করেন। ওই রাস্তা দিয়ে যাওয়া কয়েক জন এর পরে শিশুটিকে তুলে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, তার মৃত্যু হয়েছে। কাছেই কর্তব্যরত ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীরা তত ক্ষণে ট্রেলারটিকে আটক করেন। গ্রেফতার করা হয় ট্রেলারচালক সঞ্জয় রজককে।

কিন্তু এই ঘটনার পরে সূর্য সেন বাস্তুহারা কলোনির বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, ঠাকরে রোডের ওই অংশ রাত হলেই লরি চলাচলের ‘করিডর’ হয়ে ওঠে। ভারী গাড়ি চললেও রাস্তায় পর্যাপ্ত আলো নেই। এমনকি, রাতে কোনও ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীও থাকেন না সেখানে। কিন্তু লালবাজারের যুগ্ম নগরপাল পদমর্যাদার এক ট্র্যাফিক পুলিশকর্তার বক্তব্য, ‘‘অতীতে একাধিক দুর্ঘটনার পরে ওই অংশে আলাদা করে প্রতি রাতে ট্র্যাফিক পুলিশকর্মী রাখা হয়। ধনধান্য অডিটোরিয়ামের সামনেও আলাদা করে পুলিশকর্মী থাকেন।’’

দাবি, পাল্টা দাবির মধ্যেই আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠছে, বাবা-মায়ের মাথায় হেলমেট থাকলেও কেন শিশুটির মাথা ছিল অসুরক্ষিত? এই প্রসঙ্গে উঠে আসছে শহরবাসীকে ‘হেলমেট শিক্ষা’ দিতে
বছরকয়েক আগে পুলিশের ব্যবহার করা ট্যাগলাইন— ‘বাবার মাথা ভীষণ দামি, হেলমেটেতে ঢাকা। ছোট্ট মাথার নেই কোনও দাম, আমার মাথা ফাঁকা!’ শ্লোকের মাথা কেন ফাঁকা ছিল? এ নিয়ে মন্তব্য করার মতো অবস্থায় নেই তার বাবা-মা। তবে প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, এত ছোট শিশুর মাথার মাপের হেলমেট হয় কি না, সে ব্যাপারে তাঁদের
সচেতনতাই নেই। লালবাজার জানাচ্ছে, এই ঘটনার পরে নতুন করে হেলমেট সুরক্ষার প্রচার শুরু করার কথা ভাবছে তারা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement