ফাইল চিত্র।
এ যেন যুদ্ধক্ষেত্র! এক দল বাঁশ নিয়ে তেড়ে যাচ্ছেন, অন্য দল ইট ছুড়ছেন। কারও মাথা ফেটে রক্ত ঝরছে, কেউ বন্ধুর মুখে রুমাল চেপে ধরেও রক্ত বন্ধ করতে পারছেন না! তার মধ্যেই অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রেক্ষাগৃহের অগ্নি-নির্বাপণ যন্ত্র খুলে নিয়ে এলেন ভিড়ের দিকে তাক করে ব্যবহার করবেন বলে। কয়েক জন বারণ করায় কিছু ক্ষণের জন্য হয়তো বোধোদয় হল তাঁদের। কিন্তু পরক্ষণেই সেই যন্ত্র চালু করে স্প্রে করতে শুরু করলেন জড়ো হওয়া ভিড়কে ছত্রভঙ্গ করতে। সাদা ধোঁয়ায় ঢেকে গেল আশপাশ!
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রিয় গায়ক কেকে-র অনুষ্ঠান ঘিরে এমনই পরিস্থিতি দেখেছি নজরুল মঞ্চের সিঁড়িতে। সেই সময়েই মনে হয়েছিল, বড় কিছু অঘটন ঘটতে চলেছে। কিন্তু সেই মনে হওয়া যে এ ভাবে প্রিয় গায়কের মৃত্যু দিয়ে শেষ হবে, বুঝতে পারিনি। কাকে দোষ দেব? পুলিশকে দেখেছি প্রায় দর্শকের ভূমিকায় দাঁড়িয়ে। নজরুল মঞ্চ কর্তৃপক্ষেরও দেখা মেলেনি। উল্টে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা, স্যর গুরুদাস মহাবিদ্যালয়ের তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ইউনিটের ছেলেরা। তাঁদের এইটুকু বোধ নেই যে, ভিড়ের মধ্যে অগ্নি-নির্বাপণ যন্ত্র খোলার অর্থ শ্বাসরোধকারী পরিস্থিতি তৈরি করা।
কিন্তু এই অনুষ্ঠান ঘিরেই আমার উত্তেজনা ছিল প্রবল। বেহালা চৌরাস্তার কাছে বাড়ি। সরশুনা কলেজে স্নাতক স্তরের ছাত্র। গত কয়েক দিন ধরে বন্ধুদের নাগাড়ে বলে গিয়েছি, একটা পাসের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য। এর পরে কোনও মতে পাওয়া পাস নিয়ে মঙ্গলবার দুপুর দুটোর মধ্যে নজরুল মঞ্চের সামনে পৌঁছই। গিয়ে দেখি, ভিআইপি গেট ছাড়া প্রেক্ষাগৃহের অন্য দু’টি প্রবেশপথের বাইরে লম্বা লাইন। এক সময়ে ওই কলেজের ছেলেরা প্রবেশ বন্ধ করে দেন। এতেই সমস্যার শুরু। অনেকে দাবি করতে থাকেন, দু’হাজার টাকা দিয়ে টিকিট কিনেছি, ঢুকতে পারব না কেন? কলেজের দাদাদের বলতে শোনা যায়, ‘‘টিকিট কিনতে কে বলেছিল?’’
পরে কোনওমতে ভিতরে ঢুকে দেখি, একটা চেয়ারে দু’-তিন জন করে দাঁড়িয়ে। এত লোক কেন ঢুকেছেন, তা নিয়ে উদ্যোক্তাদের সঙ্গে মঞ্চ কর্তৃপক্ষের বিবাদও হয়। তাতেই সম্ভবত শীতাতপ-নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বন্ধ করে দেওয়া হয়। গায়ককে বলতে শুনেছি, ‘‘খুব গরম লাগছে। কিছু করতে না পারলে অন্তত পিছনের আলোগুলো বন্ধ করে দিন।’’ কিন্তু করা হয়নি। এমন পরিস্থিতি তৈরি করলেন যাঁরা, তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হবে না? কেন তাঁদের হাজতবাস হবে না?
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।