Durga Puja Carnival

সরকারই শব্দবিধি ‘ভাঙলে’ নিয়ম কে মানবে? উঠছে প্রশ্ন

পরিবেশবিদদের একাংশের অভিযোগ, কার্নিভালে শব্দবিধি ন্যূনতমও পালিত হয়নি। সাউন্ড লিমিটর ছাড়াই সেখানে অগুনতি মাইক লাগানো হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২২ ০৬:৩৯
Share:

কার্নিভালে মোটরবাইকে কসরত। শনিবার। ছবি: সুমন বল্লভ

সাউন্ড লিমিটর (শব্দের প্রাবল্য নিয়ন্ত্রক যন্ত্র) ছাড়া মাইক বাজানোর অনুমতি দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার নিজেই। জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ মেনে নিষিদ্ধ হয়েছে ডিজে। কিন্তু সরকারি অনুষ্ঠানে কি শব্দবিধি মানা হয়েছে? শনিবার রেড রোডের কার্নিভালকে কেন্দ্র করে এই প্রশ্ন উঠেছে কলকাতা-তথা রাজ্যের পরিবেশবিদ মহলে।

Advertisement

পরিবেশবিদদের একাংশের অভিযোগ, কার্নিভালে শব্দবিধি ন্যূনতমও পালিত হয়নি। সাউন্ড লিমিটর ছাড়াই সেখানে অগুনতি মাইক লাগানো হয়েছে। অথচ, জাতীয় পরিবেশ আদালত বছর তিনেক আগে শব্দদূষণ সংক্রান্ত এক মামলার নির্দেশে জানিয়েছিল, সরকারি এবং রাজনৈতিক দলের অনুষ্ঠানেও সাউন্ড লিমিটর-সহ শব্দযন্ত্র ব্যবহার করতে হবে। অর্থাৎ, সাউন্ড লিমিটর ছাড়া বেসরকারি তো বটেই, সরকারি অনুষ্ঠানও হওয়ার কথা নয়। পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত জানাচ্ছেন, রাজ্য সরকার শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ আইনের ন্যূনতম মর্যাদা দেয় না! তা ফের প্রমাণিত হল রেড রোডের কার্নিভালে। তাঁর কথায়, ‘‘কার্নিভালে শুধু সাউন্ড লিমিটর ছাড়া মাইকই নয়, নিষিদ্ধ ডিজে-ও বেজেছে। আমি নিজে দেখেছি ও শুনেছি। এ নিয়ে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে চিঠিও দিয়েছি।’’

রেড রোডের কার্নিভালে শব্দবিধি মানা হয়েছে কি না, রাজ্য পরিবেশ দফতরের কাছে তার নিশ্চিত উত্তর মেলেনি। রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া এ দিন জানিয়েছেন, কার্নিভালে শব্দবিধি পালনের বিষয়টি দফতর অবশ্যই খোঁজ করে দেখবে। তাঁর সংযোজন, ‘‘কিন্তু আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত দুর্গাপুজোর কার্নিভালের আয়োজন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে যে ভাবে হয়েছে, তাতে কোনও নিয়মভঙ্গ হয়নি। এ নিয়েসব পক্ষ নিশ্চিত থাকতে পারেন।’’

Advertisement

প্রসঙ্গত, শব্দবিধি মানা নিশ্চিত করতে রাজ্যের মুখ্যসচিব, ডিরেক্টর জেনারেল অব পুলিশ ও রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে নির্দেশ দিয়েছিল জাতীয় পরিবেশ আদালত। এক পরিবেশবিজ্ঞানীর কথায়, ‘‘রাজ্য পরিবেশ দফতর নিজেরাই জানে না যে, কার্নিভালের মাইকে সাউন্ড লিমিটর লাগানো রয়েছে কি না! অথচ, সাউন্ড লিমিটর ছাড়া মাইক-সহ যে কোনও শব্দযন্ত্রের ব্যবহার বন্ধের বিষয়টি রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের দেখার কথা! সেখানে খোদ পরিবেশমন্ত্রীর কাছেই এর স্পষ্ট উত্তর নেই।’’ পরিবেশকর্মীদের সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চ’-এর সাধারণ সম্পাদক নব দত্ত বলছেন, ‘‘সরকার নিজেই যেখানে নিয়মভঙ্গকারী, সেখানে অন্যদের নিয়ম পালনের কথা তারা বলবে কী ভাবে?’’

অথচ, বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশের মত, কার্নিভালের মতো অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই সরকার নাগরিকের কাছে এই বার্তাটা পৌঁছে দিতে পারে যে, সরকারি অনুষ্ঠানে শব্দবিধি পালন হচ্ছে। ফলে অন্যদেরও সেই নিয়ম পালনকরতেই হবে। এক ইএনটি চিকিৎসকের কথায়, ‘‘সে ক্ষেত্রে অন্যেরা শব্দবিধি লঙ্ঘন করলে কঠোর পদক্ষেপ করতে সরকারের সুবিধা হয়। কারণ, তখন কোনও পক্ষই প্রশ্ন তুলতে পারবে না যে, সরকারই যখন নিয়ম মানেনি, তখন তারা অন্যদের বলছে কী ভাবে?’’ যদিও রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘দু’-একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা বাদ দিয়ে এ বার উৎসবের মরসুমে এখনও পর্যন্ত আমরা ডিজে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে পেরেছি। এর কৃতিত্ব রাজ্য সরকারকে দিতে হবে।’’

কিন্তু রেড রোডে ডিজে ব্যবহারের যে অভিযোগ উঠেছে, সেটা? মানস ভুঁইয়া বলছেন, ‘‘আমি মেদিনীপুরে রয়েছি। এত দূর থেকে আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়, ওখানে কী হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement