তৎপরতা: রেস্তরাঁর আগুন নেভানোর কাজ চলছে। মঙ্গলবার ক্যামাক স্ট্রিটে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী।
চার দিকে শুধু কালো ধোঁয়া। পাশের বহুতলের উপর থেকে লোকজন চিৎকার-চেঁচামেচি করছেন। আশপাশের অফিস, দোকানের কয়েক জন কর্মী আগুন নেভাতে ব্যস্ত। কেউ জল নিয়ে দৌড়চ্ছেন, কেউ ছুটে নিয়ে আসছেন নিজের দোকানের অগ্নি-নির্বাপণ যন্ত্র। মুহূর্তের জন্য মনে হচ্ছিল, স্টিফেন কোর্টের ভয়াবহ স্মৃতি ফিরে আসবে না তো?
মঙ্গলবার সকালে তখন সবে অফিসে ঢুকেছি। ঠিক মতো বসে উঠতেও পারিনি। অফিস তখনও ফাঁকা ফাঁকা। হঠাৎ কেউ এক জন বললেন, পাশে কোথাও আগুন লেগেছে। অফিসের জানলা দিয়ে ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে। সবাই অফিসের ভিতরে হঠাৎ ছোটাছুটি
করছেন দেখে কৌতূহলবশত জানলার কাছে গিয়েছিলাম। তার পরে যে দৃশ্য দেখলাম, রীতিমতো ভয় পেয়ে যাই। এক মুহূর্ত আর অফিসে দাঁড়িয়ে থাকিনি। ভয়ে ন’তলার অফিস থেকে সিঁড়ি দিয়ে পড়িমড়ি করে নেমে আসি।
আমরা যখন নীচে নামলাম, তখনও রাস্তায় ভিড় জমেনি। তবে কিছু ক্ষণ পরে লোকে ভিড় করতে শুরু করেন। একে কালো ধোঁয়া, সেই সঙ্গে বিকট গন্ধ— এক মুহূর্ত সেখানে দাঁড়িয়ে থাকার মতো অবস্থা ছিল না। কালো ধোঁয়ায় এমন ভাবে আকাশ ঢেকেছে, যেন বিকেল হয়ে গিয়েছে মনে হচ্ছিল। আমার মতো আশপাশের বহু অফিস, দোকানের লোকেরাও রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। সবারই চোখে-মুখে একটা আতঙ্ক। আমরা যখন রাস্তায় নেমে আসি, তখনও দমকলের গাড়ি আসেনি। আগুন নেভানোর লোকজন বলতে আশপাশের কর্মীরাই। সে সময়ে যা করার, তাঁরাই করছেন। কেউ দোকানের অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্র বার করে এনেছেন, কেউ পাইপ দিয়ে জল দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু এত বড় আগুন, এ ভাবে কি আর নেভানো যায়? আগুন ধীরে ধীরে গোটা বহুতলেই ছড়িয়ে পড়তে থাকে।
এর পরে অবশ্য একে একে দমকলের গাড়ি ঢুকতে থাকে। পুলিশ এসে পুরো এলাকা ঘিরে ভিড় সরাতে শুরু করে। ভয় হচ্ছিল, যদি পাশের বহুতলে আগুন ছড়িয়ে পড়ে, তা হলে কী হবে? আসলে যে পরিমাণ ধোঁয়া বেরোচ্ছিল, তা দেখেই রীতিমতো ভয় হচ্ছিল। সেই সঙ্গে মাঝেমধ্যে বিকট শব্দ। পরে শুনি, আশপাশের অফিসগুলিতেও ধোঁয়া ঢুকে গিয়েছিল। এর পরে ঘণ্টা দুয়েক সময় রাস্তায় দাঁড়িয়ে যে কী ভাবে কেটে গেল, বুঝতেই পারিনি।
প্রায় পনেরো বছর আগে যখন স্টিফেন কোর্টের আগুনে অতগুলি প্রাণ গিয়েছিল, তখন আমি এই অফিসে কাজ করতাম না। তবে এখানে কাজে যোগ দেওয়ার পরে অনেক সহকর্মীর মুখেই সে দিনের অভিজ্ঞতার কথা শুনেছি। মন্দের ভাল, এ বার কারও প্রাণহানি হয়নি। তবে প্রতিদিন সন্ধ্যার সময়ে এই এলাকা রীতিমতো জমজমাট থাকে। শুধু মনে হচ্ছে, তখন আগুন লাগলে যে কী হত!