অভিজ্ঞান মুখোপাধ্যায়
করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হল কলকাতা পুলিশের ইনস্পেক্টর পদমর্যাদার এক আধিকারিকের। এই প্রথম কোভিডে আক্রান্ত হয়ে কলকাতা পুলিশের কোনও আধিকারিকের মৃত্যু হল। লালবাজার সূত্রের খবর, অভিজ্ঞান মুখোপাধ্যায় (৪৯) নামে ওই আধিকারিক কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের ইকুইপমেন্ট সেলের অফিসার ইন-চার্জ ছিলেন। শুক্রবার সকাল পৌনে ৯টা নাগাদ বাইপাসের এক হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। এ দিন বিকেলে হেস্টিংস থানার বছর ঊনপঞ্চাশের এক কনস্টেবলেরও মৃত্যু হয়। পুলিশ সূত্রের খবর, গত ২১ তারিখ থেকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে তিনি একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তবে শুক্রবার রাত পর্যন্ত তাঁর ডেথ সার্টিফিকেট আসেনি।
লালবাজার সূত্রের খবর, ১৯৯৫ সালের ব্যাচের এই অফিসার করোনা-পর্বে একেবারে সামনের সারিতে থেকে কাজ করছিলেন। গত ৮ জুলাই তিনি হাজরা মোড়ে ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’-এর অনুষ্ঠানেও ডিউটিতে ছিলেন। তার পরে শ্বাসকষ্ট নিয়ে মুকুন্দপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। সেখানেই গত বৃহস্পতিবার তাঁর লালারসের পরীক্ষার রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। তার পরে তাঁকে ইএম বাইপাসের ধারে অন্য একটি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। শুক্রবার সকালে সেখানেই মৃত্যু হয় কড়েয়ার পুলিশ আবাসনের বাসিন্দা অভিজ্ঞানবাবুর।
পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, পুলিশ মহলে বেশ জনপ্রিয় অভিজ্ঞানবাবুর মাস দেড়েক আগে এক বার করোনা পরীক্ষা করানো হয়েছিল। তার পরে আরও এক বার পরীক্ষা হয়। রাজারহাটের সিএনসিতে এবং এসএসকেএম হাসপাতালে পরীক্ষার রিপোর্ট দু’বারই নেগেটিভ এসেছিল।
এ দিন ওই আধিকারিকের মৃত্যুর পরে পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা ফেসবুকে শোকজ্ঞাপন করেন। কলকাতা পুলিশের তরফ থেকে তাঁর পরিবারের হাতে সরকারি বিমার দশ লক্ষ টাকা তুলে দেওয়ার কথা বলার পাশাপাশি তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে। এ দিন হাসপাতাল চত্বরে কলকাতা
পুলিশের পক্ষ থেকে গান স্যালুট দেওয়া হয় ওই অফিসারকে।
এর আগে করোনায় আক্রান্ত হয়ে সাউথ ডিভিশনের এক কনস্টেবল, শিয়ালদহ ট্র্যাফিক গার্ডের এক কনস্টেবল ও এক সিভিক ভলান্টিয়ার মারা গিয়েছেন, তবে কোনও পুলিশ অফিসার মারা যাননি। শুক্রবার পর্যন্ত কলকাতা পুলিশে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯১৯। যদিও তার মধ্যে ৬০০ জন ইতিমধ্যেই সুস্থ হয়েছেন। সংক্রমিত হয়েছেন জানার দু’সপ্তাহ পরে এ দিনই কাজে যোগ দিয়েছেন ট্যাংরা থানার ওসি। কিন্তু প্রায় প্রতিদিনই কোনও না কোনও থানা এবং ট্র্যাফিক গার্ডের একাধিক পুলিশকর্মীর সংক্রমিত হওয়ার খবর আসছে। তার ফলে ক্রমেই
আতঙ্ক ছড়াচ্ছে।
পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, অনেক পুলিশকর্মীর ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে, প্রথমে তাঁদের করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ আসছে। কিন্তু দু’দিন পরেই মৃদু উপসর্গ দেখা দেওয়ায় ফের পরীক্ষা করানো হলে তখন সেই রিপোর্ট পজ়িটিভ আসছে। পুলিশকর্মীদের একাংশের কথায়, ‘‘রোজই বেরোতে হচ্ছে রাস্তায়। ফলে কে কোন মুহূর্তে আক্রান্ত হচ্ছেন, বলা সম্ভব হচ্ছে না। এমনকি, এই আধিকারিকেরও দু’বার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছিল।’’ ফলে প্রথম সারিতে থেকে রাস্তায় নেমে কাজ করতে গিয়ে যে কোনও মুহূর্তে সংক্রমিত হওয়ার চিন্তা নিয়েই কাজ করে চলেছেন বেশির ভাগ পুলিশকর্মী।
ঠিক সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে না-পারার অভিযোগও করছেন অনেক পুলিশকর্মী। সম্প্রতি আলিপুর ও কসবা থানার একাধিক পুলিশকর্মী আক্রান্ত হন। পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, তাঁদের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরে হাসপাতালের শয্যা পাওয়ার জন্য বার বার স্বাস্থ্য দফতরকে জানাতে হয়, ফলে অনেক সময়েই হাসপাতালে ভর্তি হতে প্রায় ১২ ঘণ্টা সময় পেরিয়ে যায়। আগে রিপোর্ট দেরিতে আসার অভিযোগও করেছিলেন অনেক পুলিশকর্মী। যদিও লালবাজার জানিয়েছে, এখন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই রিপোর্ট হাতে চলে আসছে।