প্রতীকী ছবি
বিনা বিচারে প্রায় পাঁচ বছর জেলে আটকে ছিল এক নাইজিরীয় নাগরিক। শেষে অপরাধ কবুল করায় শুক্রবার তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিলেন আলিপুর আদালতের মুখ্য বিচারবিভাগীয় বিচারক শুভদীপ চৌধুরী।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৫ সালে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিল ভিনসেন্ট কলিন্স ওটো নামের ওই নাইজিরীয়। তার পরে পাঁচ বছর কেটে গেলেও সেই মামলার বিচারপর্বই শুরু হয়নি। আদালতে অভিযোগের চার্জ গঠনও হয়নি। নিম্ন আদালত থেকে মামলা গিয়েছে উচ্চ আদালতে। ফের ফিরে এসেছে নিম্ন আদালতে। ভিনসেন্ট এর মধ্যে বেশ কয়েক বার জামিনের আবেদন করলেও তা মঞ্জুর হয়নি।
পুলিশ সূত্রের খবর, গরফা থানা এলাকার সন্তোষপুরের বাসিন্দা এক ব্যক্তি ভিনসেন্টের বিরুদ্ধে ১৯ লক্ষ টাকা প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। ফেসবুকে ভিনসেন্টের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়েছিল তাঁর। স্ত্রীর অসুস্থতার নাম করে টাকা পাঠানোর অনুরোধ করেছিল ভিনসেন্ট। সরল বিশ্বাসে কয়েক দফায় তাকে ১৯ লক্ষ টাকা পাঠিয়েছিলেন ওই ব্যক্তি। কিন্তু পরে তিনি দেখেন, ভিনসেন্ট টাকা ফেরত দিচ্ছে না। ফোনেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। শেষমেশ পুলিশে অভিযোগ দায়ের করায় ২০১৫ সালের জুলাইয়ে ভিনসেন্টকে দিল্লি থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। সেপ্টেম্বর মাসে প্রতারণার অভিযোগে মামলা দায়ের করে চার্জশিট দেয় পুলিশ। কিন্তু বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়নি।
সম্প্রতি ভিনসেন্টের আইনজীবী আনিসুর রহমান আলিপুর আদালতের মুখ্য বিচারবিভাগীয় বিচারকের কাছে আবেদনে জানান, তাঁর মক্কেল দোষ কবুল করতে রাজি। আবেদনে ওই আইনজীবী জানান, ভিনসেন্টের সঙ্গে দিল্লির এক ভারতীয় মহিলার বিয়ে হয়েছে। ওই দম্পতির তিনটি শিশুসন্তান রয়েছে।
সম্প্রতি ওই মহিলা ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন। এ দিকে, ভিনসেন্টের জামিনও মঞ্জুর হচ্ছে না। এই ধরনের মামলায় সাধারণত চার্জশিট জমা দেওয়ার পরেই জামিন মঞ্জুর হয়। কিন্তু ভিনসেন্টের ক্ষেত্রে তা হয়নি। এমনকি, প্রায় পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। এক সরকারি আইনজীবী জানান, ভিনসেন্টের বিরুদ্ধে যে ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছিল, তাতে সর্বোচ্চ সাজা পাঁচ বছর। ২০১৫ সালের জুলাইয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। সেই হিসেবে প্রায় চার বছর সাত মাস জেলেই রয়েছে ভিনসেন্ট।
আলিপুর আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতার কারণে লঘু পাপে গুরু দণ্ডের একাধিক উদাহরণ রয়েছে। মামলায় দেরির জেরে বহু অভিযুক্ত জেলের অন্ধকারেই আটকে থাকেন বছরের পর বছর। ভিনসেন্টের পাশাপাশি প্রতারণার ওই ঘটনায় আরও এক জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। তবে তাকে পাঁচ বছরেও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। ওই মামলায় সেই দ্বিতীয় অভিযুক্তকে পলাতক দেখিয়েই চার্জশিট দিয়েছিল পুলিশ। ভিনসেন্টের অবশ্য দাবি, ওই ব্যক্তিই পুরো ১৯ লক্ষ টাকা নিয়ে চম্পট দিয়েছে।
এক সরকারি আইনজীবী জানান, বিচার প্রক্রিয়া যাতে আরও দীর্ঘায়িত না হয়, তা নিশ্চিত করতেই ভিনসেন্ট অপরাধ কবুল করায় বিচারক মামলার ধারা অনুযায়ী সাজা ঘোষণা করে দিয়েছেন। পাঁচ বছর কারাবাস ও ২০ লক্ষ টাকা আর্থিক জরিমানা করা হয়েছে। সেই টাকা অনাদায়ে আরও ছ’মাস জেলে থাকতে হবে। এ দিন রায় দেওয়ার পরে বিচারক বলেন, ‘‘স্ত্রী ক্যানসারে আক্রান্ত। তিনটি শিশুসন্তান রয়েছে ওঁর। মানবিক কারণেই বিচার প্রক্রিয়া শেষ হতেই সাজা ঘোষণা করা হল।’’ আলিপুর আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, পাঁচ বছরের মধ্যে চার বছর সাত মাস জেল খাটা হয়ে গিয়েছে ভিনসেন্টের। বাকি রয়েছে আর পাঁচ মাস। আর্থিক জরিমানা দিতে না পারলে আরও ছয় মাস যুক্ত হয়ে মোট ১১ মাস পরেই মুক্তি পাবে ভিনসেন্ট।