মিলল চক্রের হদিস

বিশেষ পেনের সাহায্যে প্রতারণা, ধৃত

গ্রাহকদের ঋণ পাইয়ে দেওয়ার নামে তাঁদের থেকে নেওয়া হতো চেক। সেই সময়ে গ্রাহককে একটি পেন দিত প্রতারকেরা। তা দিয়েই চেকে লিখতে হতো। পরে বিশেষ কালি দিয়ে চেকের লেখা বদলে ফেলত প্রতারকেরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:৩৭
Share:

গ্রাহকদের ঋণ পাইয়ে দেওয়ার নামে তাঁদের থেকে নেওয়া হতো চেক। সেই সময়ে গ্রাহককে একটি পেন দিত প্রতারকেরা। তা দিয়েই চেকে লিখতে হতো। পরে বিশেষ কালি দিয়ে চেকের লেখা বদলে ফেলত প্রতারকেরা।

Advertisement

দু’টি প্রতারণার অভিযোগে একই ধরনের সূত্র থেকে একটি প্রতারণার চক্রের হদিস পেল বিধাননগর সাইবার থানার পুলিশ। ওই ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে গ্রেফতার করা হয়েছে তিন ব্যক্তিকে। ধৃতেরা হল উল্টোডাঙার বাসিন্দা বিনয় জায়সবাল ওরফে অঙ্কিত শর্মা, ধীরাজ গুপ্ত ওরফে মোনো এবং চিৎপুর এলাকার বাসিন্দা সাদাব আনোয়ার ওরফে অবিনাশ কুমার ওরফে আরমান। ধৃতদের বুধবার বিধাননগর আদালতে তোলা হয়। সেখানে তাদের পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি সমীর হালদার নামে দত্তাবাদের এক বাসিন্দা বিধাননগর সাইবার থানায় অভিযোগ জানান, তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে ৫০ হাজার টাকা সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এই অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে, গত বছরের জুন মাসেও একই ধরনের একটি অভিযোগ করেছিলেন যাদবপুরের বাসিন্দা শুভাশিস পণ্ডা।

Advertisement

প্রতারণার ধরন খতিয়ে দেখে তদন্তকারীরা এর পরে নিশ্চিত হন, একটি চক্রই এর নেপথ্যে রয়েছে।

কী ভাবে চলত এই চক্রটি?

পুলিশ জানিয়েছে, প্রথমে ওই প্রতারকেরা ফোন করে গ্রাহককে কম সুদে ঋণ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলত। গ্রাহক রাজি হলে ধৃতদের মধ্যে দু’জন তাঁর বাড়িতে যেত। তার পরে গ্রাহককে বলা হতো, ব্যাঙ্কের পাসবই, ড্রাইভিং লাইসেন্স, আধার কার্ড, ভোটার কার্ড এবং দু’টি ক্যান্সেলড্‌ চেক লাগবে। তার পরে ঋণ পাইয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়ার জন্য অল্প পরিমাণ টাকা নগদে নিয়ে যেত ধৃতেরা। তার পরেই গ্রাহকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা সরানো হতো। এই প্রক্রিয়াতেই সমীরবাবুর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে ৫০ হাজার টাকা এবং শুভাশিসবাবুর অ্যাকাউন্ট থেকে ৩০ হাজার টাকা সরিয়ে ফেলে ধৃতেরা।

ওই টাকা কোথায় জমা করা হয়েছিল, তার সন্ধান করতে গিয়ে পুলিশ এই চক্রের হদিস পায়। প্রাথমিক অনুসন্ধানের পরে তদন্তকারীরা নিশ্চিত, এই চক্র কলকাতা এবং উত্তর ২৪ পরগনায় এমন ভাবেই একাধিক প্রতারণার ঘটনা ঘটিয়েছে।

দুই অভিযোগকারী জানিয়েছেন, তাঁদের দিয়ে চেকে লেখানোর সময়ে ধৃতেরা একটি পেন দিত। সেই পেন দিয়েই লিখেছিলেন তাঁরা। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই পেনে একটি বিশেষ ধরনের কালি ব্যবহার করত ধৃতেরা। পেনটির সঙ্গে এক ধরনের ইরেজার থাকত, যা দিয়ে ওই কালি মুছে ফেলা যায়। এ ভাবেই গ্রাহকদের কাছ থেকে চেক নিয়ে সেটির লেখা বদলে ফেলে প্রতারণা করত ওই চক্রটি।

এর আগে কলকাতা পুলিশ একটি প্রতারণা চক্র ধরেছিল, যারা গ্রাহকদের কাছ থেকে চেক নিয়ে তাতে রীতিমতো ‘প্লাস্টিক সার্জারি’ করত। পুলিশ সূত্রের খবর, ব্লেড দিয়ে চেকের নম্বর, টাকার মূল্য তুলে ফেলা হতো। ব্লেড ব্যবহার করলে চেকের পাতায় যে ছাপ পড়ত, তা-ও আগের অবস্থায় ফেরানো হত। তার পরে চেকের নম্বর এবং টাকার অঙ্ক বদলে ফেলা হতো।

ধৃতদের জেরা করে চক্রটি সম্পর্কে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা যাবে বলে মনে করছেন বিধাননগর সাইবার থানার পুলিশকর্তারা। এই ভাবে আর কোনও গ্রাহককে প্রতারিত করা হয়েছে কি না, জানা যাবে তা-ও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement