বিপজ্জনক: বাড়ির উপরে হুমড়ি খেয়ে পড়ে রয়েছে উপড়ে যাওয়া গাছ। শুক্রবার, ঈশ্বরী গাঙ্গুলি স্ট্রিটে। নিজস্ব চিত্র
আমপানের পরে পেরিয়ে গিয়েছে দু’মাস। ঝড়ের রাতে একটি বিশাল বেল গাছ উপড়ে পড়ে যায় কলকাতা পুরসভার ৮৩ নম্বর ওয়ার্ডের ঈশ্বরী গাঙ্গুলি স্ট্রিটের একটি বাড়ির উপরে। তার পরে বার বার স্থানীয় কাউন্সিলর ও বরো চেয়ারম্যানের দফতরে বিষয়টি জানিয়েছেন ওই বাড়ির ভাড়াটে। কিন্তু অভিযোগ, প্রায় দেড়শো বছরের পুরনো, মোটা গাছের গুঁড়িটি সরানোর কোনও ব্যবস্থা করেনি পুরসভা।
বেসরকারি একটি ল্যাবরেটরির কর্মী সুশান্ত পাল ওই বাড়ির একমাত্র ভাড়াটে। ওই দোতলা বাড়িতে তিনি স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে থাকেন। শুক্রবার সুশান্তবাবু জানান, ঝড়ের দিন রাত আটটা নাগাদ বেল গাছটি হুড়মুড়িয়ে বাড়ির উপরে এসে পড়ে। তার অভিঘাতে কেঁপে উঠেছিল পুরো বাড়ি। ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে বেরোতে না-পেরে আঠারো মাসের মেয়েকে নিয়ে ওই বাড়িতেই ছিলেন তিনি ও তাঁর স্ত্রী। গাছের চাপে ঘর যে কোনও সময়ে ভেঙে পড়তে পারে, এই আশঙ্কায় সারারাত ঘুমোতে পারেননি তাঁরা। সকালে মেয়ে ও স্ত্রীকে বাঘা যতীনে শ্বশুরবাড়িতে রেখে আসেন সুশান্তবাবু। তার পর থেকে সেখানেই আছেন দু’জন। সুশান্তবাবু বলেন, ‘‘আমার বাড়িওয়ালা ভবানীপুরে থাকেন। তিনি অসুস্থ। আমি এই গাছ কাটার জন্য কাউন্সিলরের অফিসে গিয়ে জানিয়েছি। পরে বরো চেয়ারম্যানের অফিসে গিয়ে লিখিত দরখাস্ত করেছি। কিন্তু এখনও ওই গাছ সরানো হল না।’’
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ওই বাড়ির উল্টো দিকে কালীঘাট মন্দিরের একটি ছোট পুকুর রয়েছে। তার পাশেই ছিল প্রাচীন ওই গাছটি। সেটি প্রায় ৫০ ফুট লম্বা হওয়ায় ঝড়ের দাপটে হেলে গিয়ে রাস্তার উপর দিয়ে ওই বাড়ির ছাদে পড়েছে। এলাকার বাসিন্দাদের তরফে কালীঘাট মন্দিরের সেবায়েত কাউন্সিলেও জানানো হয়েছিল। কারণ, পুকুরটি কালীঘাট টেম্পল কমিটি ও সেবায়েত কাউন্সিলের অধীনে রয়েছে। সেবায়েত কাউন্সিলের সম্পাদক দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘স্থানীয় কাউন্সিলর অসুস্থ। তবে আমরা ঘটনার পরের দিনই বিষয়টি কাউন্সিলরের অফিসে জানিয়েছি। এমনকি, কাউন্সিলরের ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে করে নিয়ে এসে পরিস্থিতি দেখিয়েছি। আমাদের অত বড় গাছের গুঁড়ি কাটা বা সরানোর কোনও পরিকাঠামো নেই। পুরসভার তরফেও ওই গুঁড়ি কাটা বা সরানোর কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি।’’
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গাছের গুঁড়ির চাপে বা আচমকা প্রবল ঝড়-বৃষ্টিতে যদি বাড়িটি ভেঙে পড়ে তা হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাড়িটির নীচে থাকা একাধিক দোকানও। কারও মৃত্যুও ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা তাঁদের। তা ছাড়া, ওই রাস্তাটি কালীঘাট মন্দিরে যাওয়ার অন্যতম একটি পথ। লকডাউন শিথিল হওয়ার পরে নিয়মিত ওই রাস্তা দিয়ে দর্শনার্থীরা মন্দিরে যাতায়াত করছেন। দুর্ঘটনার জেরে তাঁদেরও জখম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সুশান্তবাবুর অভিযোগ, ‘‘মৃত্যুর আশঙ্কা নিয়েই রাতে বাড়িতে থাকছি। জিনিসপত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার উপায় নেই। অথচ বাড়িতে না থাকলে সব চুরি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। দিনের বেলা ঘরে তালা দিয়ে প্রতিবেশী ও দোকানদারদের বলে বেরিয়ে যাই। তাঁরাই বাড়িতে নজর রাখেন।’’ স্থানীয় বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, আমপানের পরে কলকাতা পুরসভা এলাকায় উপড়ে যাওয়া গাছ কাটতে সেনাবাহিনীকে নামানো হয়েছিল। তখন পুরসভাকে একাধিকবার এই গাছটির কথা জানানো হয়েছিল। তা সত্ত্বেও পুরসভার তরফে কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি।
কলকাতা পুরসভার ৮ নম্বর বরোর কোঅর্ডিনেটর সন্দীপরঞ্জন বক্সী অবশ্য এ দিন ওই গাছ কাটার ব্যবস্থা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘পুরসভার উদ্যান দফতরের সঙ্গে আলোচনা করে কয়েক দিনের মধ্যেই ওই গাছ কাটার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’’