পহেলগামে (বাঁ দিক থেকে) সঞ্জু পাল, তাঁর স্ত্রী পিয়ালি, মেয়ে সৃঞ্জিনী, ভাগ্নে প্রতীক দাস। দুর্ঘটনার কয়েক দিন আগে। ছবি: সংগৃহীত।
ভূস্বর্গ নিয়ে নানা ভুল ধারণা ভেঙে গিয়েছে সোদপুরের সঞ্জু পালের। ডাকসুম থেকে শ্রীনগরের পথেগাড়ি উল্টে স্ত্রী-মেয়ের কোমরভাঙলে স্থানীয়েরা সবটুকু দিয়ে তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দিলে স্ত্রী-কন্যাকে কী ভাবে বাড়ি ফেরাবেন, জানেন না তিনি। তাই বাড়ি ফিরতে রাজ্য সরকারের কাছে আর্জি জানাচ্ছেন সঞ্জু। দিন দশেকের কাশ্মীর সফরে পরিবারটির আর এক সঙ্গী, সিঁথির বাসিন্দা প্রদীপকুমার দে-ও আশঙ্কাজনক অবস্থায় শ্রীনগরে হাসপাতালে ভর্তি।
বছর বিয়াল্লিশের সঞ্জু যা শুনেছেন, শয্যাশায়ী স্ত্রী পিয়ালি (৩৭) এবং মেয়ে, সপ্তম শ্রেণির সৃঞ্জিনীকে কলকাতায় ফেরাতে ‘এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স’ ছাড়া গতি নেই। দু’জনকে দু’টি বিমানে শুইয়ে ফেরাতে হবে, যার খরচ এক-এক জনের আড়াই লক্ষ টাকা! না-হলে স্ত্রী-কন্যাকে নিয়ে ঘর বা হোটেল ভাড়া করে দু’-তিন মাস কাশ্মীরেই থাকতে হবে। পেশায় মেডিক্যাল রিপ্রেজ়েন্টেটিভ সঞ্জু বলছেন, ‘‘কষ্ট করে টাকা জমিয়ে কাশ্মীরে এসেছি। এখন স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে ফেরার টাকা কোথায় পাব, মাথায় ঢুকছে না!’’
কলকাতা থেকে হিমগিরি এক্সপ্রেসে তিনটি পরিবার মিলে ২১ মে জম্মু পৌঁছন সঞ্জুরা। সঙ্গে ছিলেন তাঁর ভাগ্নে বছর পঁচিশের প্রতীক দাস, বন্ধু অনির্বাণ কুণ্ডু, তাঁর স্ত্রী ৩৭ বছরের দেবস্মিতা ও ১২ বছরের ছেলে দেবমাল্য (সোদপুরের বাসিন্দা), অনির্বাণের ভায়রাভাই বছর ষাটেকের প্রদীপকুমার দে, তাঁর স্ত্রী স্বাগতা ও ২৩ বছরের মেয়ে দীপ্সা। জম্মু থেকে পহেলগাম হয়ে ডাকসুম এবং বরফে-মোড়া সেন্থান পর্যন্ত সফর ভালই কাটছিল। বরফ দেখে সকলেই খুশি ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার, ২৫ মে দুপুরে ডাকসুম থেকে শ্রীনগরেরদিকে যাওয়ার সময়ে গাড়ি বিগড়ে যাওয়ায় প্রায় ঘণ্টা আড়াই রাস্তাতেই থমকে ছিলেন তাঁরা। এর পরে চালক দ্রুত ফেরার চেষ্টায় জোরে গাড়ি চালাতে শুরু করেন। তখনই ঘটে বিপত্তি।
সঞ্জু সোমবার ফোনে বলেন, ‘‘দুর্ঘটনাটি ঘটে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ। তখনও পাহাড়ে আলো রয়েছে, ঝিরঝিরে বৃষ্টি হচ্ছিল। গাড়ি চালকের দিকে কাত হয়ে উল্টে যায়।’’ তিনি জানান, গাড়িচালক, তাঁর নিজের এবং ভাগ্নে প্রতীক, বন্ধুপত্নী দেবস্মিতার তেমন চোট লাগেনি। অবসরপ্রাপ্ত মেডিক্যাল রিপ্রেজ়েন্টেটিভ প্রদীপ গুরুতর জখম হন। বাকিরাও অল্পবিস্তর আহত। দেবমাল্যের বাঁ হাতে অস্ত্রোপচার করাতে হয়েছে। সঞ্জু ও অনির্বাণের পরিজনেরা বাডজোলার বোন অ্যান্ড স্পাইন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। প্রদীপ রয়েছেন শ্রীনগরের এসএমএইচএস হাসপাতালে। সঞ্জু জানান, বাডজোলার হাসপাতাল জানিয়েছে, তাঁর স্ত্রী-কন্যাকে দু’-এক দিনের মধ্যে ছেড়ে দেওয়া যাবে। সে ক্ষেত্রে তাঁদের ঘর ভাড়া নিতে হবে। পিয়ালি হেপাটাইটিস বি-তে ভুগছেন। তাই ঘরে ফিরতে রাজ্য সরকারের কাছে আর্জি জানাচ্ছেন তাঁরা।
তবে কাশ্মীরিরা যে ভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন, তা ভুলতে পারছেন না সঞ্জু। বলছেন, ‘‘স্ত্রী-মেয়ে এখনও ওঁদের দেওয়া গরমজামা গায়ে দিয়ে আছে। নাসির, শাহিদেরা অ্যাম্বুল্যান্স ডাকা, ওষুধ-খাবার এনে দেওয়া থেকে কম করে ১০ হাজার টাকা তুলে দিয়েছেন। ওঁদের ভরসাতেই টিকে আছি।’’