প্রতীকী ছবি
চেকে সই জাল করে বৃদ্ধের অ্যাকাউন্ট থেকে তুলে নেওয়া হয়েছিল প্রায় ৭০ হাজার টাকা। তার পরে কেটে গিয়েছে দশ বছর। মারা গিয়েছেন অভিযোগকারী বৃদ্ধ। তবে দশ বছর পরেও টাকা ফেরতের আশায় লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁর ছেলে, বেহালার কদমতলার এক ব্যবসায়ী। ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দরজায় ঘুরে ঘুরে হয়রান হয়ে গিয়ে শেষে তিনি দফতরের মন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছেন। ওই ব্যবসায়ীর আর্জি, অবিলম্বে তাঁর মামলা অন্য কোনও বিচারকের কাছে পাঠানো হোক।
৪৭ বছরের অরিন্দম ব্রহ্মচারী আদতে এই লড়াইটা চালাচ্ছেন তাঁর প্রয়াত পিতা অমিতাভ ব্রহ্মচারীর হয়ে। তদানীন্তন ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্স থেকে অবসর নেওয়া অমিতাভবাবু ২০১০ সালে বাড়ির কাছের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে পাসবই আপডেট করাতে যান। তখনই ৭১ বছরের ওই বৃদ্ধ দেখেন, তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে উধাও ৭০ হাজার টাকা।
অভিযোগ পেয়ে ঠাকুরপুকুর থানা তদন্তে নেমে জানতে পারে, ওই বছরের গোড়ায় অমিতাভবাবুকে ব্যাঙ্কের তরফ থেকে যে চেকবই দেওয়া হয়েছিল, তার পিছনের একটি চেক ছিল না। সেই চেকেই সই জাল করে টাকা তুলে নেওয়া হয়। তদন্তে নেমে পুলিশ সেই চেকটি বাজেয়াপ্ত করে। ২০১১ সালে ওই ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে যান অমিতাভবাবু। তাঁর ছেলে অরিন্দমবাবু জানাচ্ছেন, তদন্তে বাজেয়াপ্ত হওয়া চেকটি তত দিনে আলিপুর আদালতে জমা পড়ে গিয়েছিল। সেখান থেকে চেকটি ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে আনাতেই কেটে যায় তিন বছর।
এর পরে ডাক পড়ে হাতের লেখা বিশারদের। কিন্তু তত দিনে অমিতাভবাবুর শরীর বেশ খারাপ হয়ে গিয়েছিল। অরিন্দমবাবু জানাচ্ছেন, তাঁর বাবার পাসপোর্টের সইয়ের সঙ্গে ওই চেকে করা সই মেলেনি। কিন্তু তা প্রমাণ হওয়ার আগেই ২০১৪ সালে মারা যান অমিতাভবাবু। মামলা চালিয়ে যেতে থাকেন অরিন্দমবাবু। এর পাঁচ বছর পরে, ২০১৯ সালের ২৫ মার্চ সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ককে দায়ী করে সুদ-সহ টাকা ফেরতের নির্দেশ দেয় জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালত। সেই সঙ্গে মামলা চালানোর জন্য আরও ১০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়।
সেই রায়ের বিরুদ্ধে রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে যান ওই ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। সেখানে মামলার শুনানি শুরু হলেও ফের দীর্ঘসূত্রিতার আশঙ্কা করছেন অরবিন্দবাবু। তাঁর অভিযোগ, ‘‘ন’বছর ধরে লড়াই করার পরে আমাদের পক্ষে নির্দেশ দেন বিচারক। ফের নতুন করে মামলা শুরু হয়েছে। আবার যাতে ১০ বছর ধরে মামলা না চলে, তার জন্যই মন্ত্রী সাধন পাণ্ডের কাছে আর্জি জানিয়েছি।’’
যে ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষ এবং তার আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা জানিয়েছেন, মামলাটি এখনও বিচারাধীন, তাই এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করা যাবে না।