অপরিচ্ছন্ন: নিউ মার্কেট এলাকায় কলকাতা পুরসভার হাডকো বিল্ডিংয়ের সামনে ছড়ানো মুরগির পালক। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র।
নিউ মার্কেটের উল্টো দিকে, বহুতল অফিস ভবনে প্রবেশপথের ডান দিকেই ভ্যাট। যেখানে উপচে পড়ছে আবর্জনা। আর বাঁ দিকে লোহার বন্ধ গেটের ভিতরে জমে মুরগির পালক, প্লাস্টিক, মাটির ভাঁড়-সহ অনেক কিছু। মেঝেয় ছড়িয়ে রয়েছে মুরগির বিষ্ঠা। দুর্গন্ধ এমনই যে, ওই বহুতল ভবনে যাতায়াতকারীদের নাক চাপা না দিয়ে উপায় নেই।
এই ভবন কলকাতা পুরসভার ‘হাডকো বিল্ডিং’, ১৫ নম্বর এন নেলি সেনগুপ্ত সরণিতে। কলকাতা পুরসভার সদর দফতর থেকে কার্যত ঢিল ছোড়া দূরত্বে। অথচ পুর সদর দফতরের বিপরীত পরিবেশ সেখানে। পুরসভার রাস্তা, বিদ্যুৎ সরবরাহ-সহ তিনটি ট্রাইবুনাল রয়েছে ওই বহুতলে। রয়েছে জুট কর্পোরেশন-সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ দফতর। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের যাতায়াত লেগে থাকে সেখানে। ওই অফিস ভবনের পরিবেশ নিয়ে রীতিমতো বিরক্ত সেখানকার নিত্য যাতায়াতকারীরা।
ওই রাস্তা এবং হাডকো বিল্ডিংয়ের অন্য পাশে মির্জা গালিব স্ট্রিটে
সকাল থেকে প্রতিদিন মুরগির বিরাট হাট বসে। তখন দুর্গন্ধে ওই রাস্তা দিয়ে হাঁটাই দায় হয়ে পড়ে। বেলার দিকে সেই হাট উঠে গেলেও ফেলে যাওয়া আবর্জনা থেকে প্রবল দুর্গন্ধ ছড়ায় হাডকো বিল্ডিং চত্বরে, যাতায়াতকারীদের এমনই অভিযোগ।
নেলি সেনগুপ্ত সরণির দিক দিয়ে হাডকো বিল্ডিংয়ে প্রবেশের সময়ে দেখা গেল, ডান দিকের এক জায়গায় উপচে পড়া জঞ্জাল জমে রয়েছে। নিরাপত্তাকর্মীরা জানাচ্ছেন, অনেক দিন ধরেই জঞ্জাল জমে আছে। কেউ তুলতে আসেন না। এমনকি,
আবর্জনা সাফাই করার জন্য ট্রাইবুনাল থেকেও চিঠি লেখা হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়নি।শুধু ওই বাড়িটিই নয়, হাডকো বিল্ডিংয়ের বাইরের পরিবেশ নিয়েও ক্ষুব্ধ স্থানীয় নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। তাঁরা জানান, মুরগির হাটের জন্য সকালের দিকে নেলি সেনগুপ্ত সরণি দিয়ে চলাচল করাই কঠিন।
সেখানে গিয়ে দেখা গেল, একটি অংশে লোহার গেট আটকানো। যেখানে রয়েছে ভবনের সিঁড়ি। সেই অংশ জুড়ে মুরগির পালক, প্লাস্টিক, ভাঁড়-সহ নানা আবর্জনা ছড়িয়ে রয়েছে।
ওই রাস্তা দিয়ে হাডকো বিল্ডিংয়ে প্রবেশের সময়ে মানুষ বাধ্য হচ্ছেন নাকে চাপা দিতে। নিত্য যাতায়াতকারীদের দাবি, সারা বছরই ওই ভাবে অপরিচ্ছন্ন অবস্থায়
পড়ে থাকে জায়গাটি। বাতিল প্লাস্টিক কিংবা ভাঁড়ে বৃষ্টির জল জমে। ওই ভবনের নীচে মুরগির খামার রয়েছে বলেও জানা গিয়েছে। অতীতে ওই ভবনে শুয়োরের বসতিও ছিল। পরে অবশ্য কলকাতা পুরসভা সে সব সরিয়ে দেয়। ভবনের ভিতরে কয়েকটি তলে ঘুরে দেখা গেল, পান ও পানমশলার থুতুতে দেওয়াল লাল হয়ে রয়েছে।
যাতায়াতকারীদের দাবি, এর পরেও ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বাড়লেই কলকাতা পুরসভা বার্তা দেবে শহর পরিচ্ছন্ন রাখার, যেখানে পুরসভারই একটি বহুতল ভবন এতটা অপরিচ্ছন্ন। দিনের পর দিন কেন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ পেরিয়ে কর্মস্থলে বা অন্য প্রয়োজনে মানুষকে সেখানে যেতে হবে, প্রশ্ন তাঁদের। শহরের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র নিউ মার্কেট চত্বর। সেখানে পুরসভারই একটি ভবন এমন অপরিচ্ছন্ন ও অস্বাস্থ্যকর থাকছে, অথচ পুর কর্তৃপক্ষ নির্বিকার?
হাডকো বিল্ডিংয়ের এই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কথা জানে কলকাতা পুরসভা। পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, ওই ভবনটির পরিবেশ পরিচ্ছন্ন করতে তাঁরা এ বার সচেষ্ট হবেন। পুরসভার মেয়র পারিষদ (কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা) দেবব্রত মজুমদার বলেন, ‘‘হাডকো বিল্ডিংয়ের আশপাশ যাতে নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়, সে জন্য দফতরের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলা হবে।’’ বিষয়টি সামনে আসতেই শনিবার কলকাতা পুরসভার তরফে সাফাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।