অজিতেশ পোদ্দার।
বাড়িতে দুর্গাপুজো হয়েছিল। উৎসবের শেষ দিনে যখন প্রতিমা নিরঞ্জনের তোড়জোড় চলছে, সেই সময়েই ঘটে গেল মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। পরিবারের একমাত্র সন্তান খেলার ছলে বাড়ির চত্বরে দাঁড়ানো ই-রিকশায় উঠে পড়েছিল। আচমকা গড়াতে শুরু করে রিকশাটি। চালকহীন রিকশা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ধাক্কা মারে পাঁচিলে। তাতে রিকশার সামনের উইন্ডস্ক্রিনের কাচ ভেঙে ঢুকে যায় বালকটির গলায়। দশমীর দিনে সেই কাচের আঘাতে মৃত্যু হল পরিবারের একমাত্র ছেলের।
বুধবার নিউ টাউন বিধানসভা এলাকার রাজারহাটের নৈপুর গ্রামে এই ঘটনার আকস্মিকতায় স্তম্ভিত সকলে। মৃত অজিতেশ পোদ্দার (৭) নামে ওই বালক পরিবারের একমাত্র সন্তান। পুলিশ জানায়, কাচের আঘাতে রক্তাক্ত হওয়ার পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে ভিআইপি রোডের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। তবে সেখানে ওই বালককে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।
অজিতেশের বাবা অমিত পোদ্দারের রাজারহাট এলাকায় ছোট ব্যবসা রয়েছে। রাজারহাটের নৈপুকুর গ্রামে পোদ্দারদের বাড়ির পুজোর পরিচিতি রয়েছে স্থানীয় এলাকায়। পরিবারের ৫৯ বছরের পুজো ছিল এ বার।
পরিবারের সদস্যেরা জানান, পুরোহিতেরা তাঁদের জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়ার জন্য ওই ই-রিকশাটি ডেকেছিলেন। সেটি বাড়ির চত্বরে দাঁড় করানো ছিল। অজিতেশ খেলার ছলে সেটিতে চড়ে বসেছিল। সেই সময়ে আচমকাই রিকশাটি গড়াতে শুরু করে। তার পরে কয়েক হাতের মধ্যে থাকা একটি পাঁচিলে গিয়ে ধাক্কা মারে। এর পরেই রিকশার উইন্ডস্ক্রিনের সামনের কাচ ভেঙে সাত বছরের বালকের গলায় ঢুকে যায়।
ঘটনার আকস্মিকতায় শোকে পাথর অজিতেশের বাবা অমিত। মানসিক ভাবে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত তিনি। অজিতেশের জ্যাঠামশাই সুশান্ত জানান, এ দিন সকালে বিসর্জনের আগে টাকাযাত্রা নামে একটি অনুষ্ঠান ছিল পরিবারে। ওই অনুষ্ঠানের জন্য পরিবারের বাচ্চারা সুন্দর পোশাকে সেজেছিল। অনুষ্ঠানের পরে বিসর্জনের আয়োজন শুরুর আগে সবাই যে যার ঘরে গিয়েছিলেন জলখাবার খেতে। তার মধ্যেই ওই দুর্ঘটনা ঘটে যায়।
সুশান্তের কথায়, ‘‘মন্দিরের সামনেই রিকশাটি দাঁড় করানো ছিল। আমি দূর থেকে দেখি, অজিতেশ সেটিতে উঠে বসেছে। সঙ্গে সঙ্গে ওকে নামানোর জন্য ছুটি। কিন্তু তার মধ্যেই দেখি রিকশাটি গড়াচ্ছে।’’ এর মধ্যেই সেটি গড়িয়ে গিয়ে দেওয়ালে ধাক্কা মারে। তিনি বলেন, ‘‘রিকশাটি অল্প দূরত্ব গড়িয়েছিল। খুব জোরেও ধাক্কা মারেনি। কিন্তু আমি দেখলাম, অজিতেশের গা দিয়ে রক্ত গড়াচ্ছে। ও রিকশাচালকের আসনে স্থির ভাবে বসে রয়েছে। কাছে যেতেই দেখি, কাচে গলার নলি কেটে রক্ত বেরোচ্ছে।’’
ওই অবস্থায় গাড়িতে করে সাত বছরের বালককে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও শেষরক্ষা হয়নি। ঘটনার খবর পেয়ে স্থানীয় বিধায়ক তাপস চট্টোপাধ্যায় সেখানে পৌঁছন। তিনি বলেন, ‘‘একটি রিকশা দুর্ঘটনায় একটি পরিবারের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেল। রিকশার চাবি দেওয়া ছিল কি না, সেটি কী ভাবে গড়াতে শুরু করল, সে সব বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। আমরা পরিবারটির পাশে রয়েছি।’’