বোর্ন অ্যান্ড শেফার্ডের ক্যামেরাবন্দি সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল। তখনও ছিল সেই লম্বা চূড়া।
সেন্ট পল্স ক্যাথিড্রালের মাথায় লম্বা চুড়ো, স্ট্র্যান্ড রোড সংলগ্ন বন্দরে দাঁড়িয়ে থাকা কাঠের জাহাজ, বারমিজ প্যাগোডাহীন ইডেন গার্ডেন। টাইম মেশিনে ফিরে যাওয়া দেড়শোটা বছর পিছনে। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের কলকাতায়। আসলে টাইম মেশিন নয়, বরং বিগত সেই সময়কে বন্দি করে রাখা ৯৬টি অমূল্য ফটোগ্রাফ, যা তাক লাগিয়ে দেয় স্বয়ং রঘু রাইকেও। এই ছবি নিয়েই প্রদর্শনী, ‘ফ্রোজেন ইন টাইম’, কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলে। উদ্বোধন হল সোমবার।
এই ৯৬টি ছবির সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ইতিহাস আর চিত্রগ্রহণের প্রযুক্তিগত বিবর্তন। ছবিগুলির ফিল্ম তো নেই-ই, বরং জিলেটিন সিলভারের ধাতব পাতেই লুকিয়ে ছবিগুলির প্রাণভোমরা।
ব্রিটেনের টমাস ও উইলিয়াম ড্যানিয়েলের কাকা-ভাইপো জুটি উনিশ শতকে সারা দেশ ঘুরে ল্যান্ডস্কেপ আঁকতেন। তাঁদের আঁকা ছবিতে ছিল তৎকালীন কলকাতাও। কলকাতার সেই ছবিগুলির ঘরানাকে বলা হয়, ‘ভিউজ অফ ক্যালকাটা’। ঔপনিবেশিক কলকাতার নানা মেজাজের ছবি তুলতে গিয়ে এই ঘরানাই ধরা পড়েছিল বোর্ন অ্যান্ড শেফার্ডের তোলা ছবিতে। কিছু পরে কলকাতায় পসার জমানো আরও দুই ব্রিটিশ চিত্রগ্রাহকের জুটি জনস্টন অ্যান্ড হফম্যানের ছবিতেও ছিল সেই ঘরানার ছাপ।
জনস্টন অ্যান্ড হফম্যানের তোলা। ১৮৮০ দশকের রাজভবন।
১৮৬০ থেকে ১৯১০ সালের মধ্যে বোর্ন অ্যান্ড শেফার্ড এবং জনস্টন অ্যান্ড হফম্যানরা এই ছবিগুলি তুলেছিলেন বিশ্বের দরবারে ঔপনিবেশিক কলকাতাকে তুলে ধরতে। ৯৬টি ফ্রেমে বন্দি কলকাতার রাস্তাঘাটা, বাজার, পার্ক, বাড়িঘর অনেক কিছুই এখন বদলে গিয়েছে। যেমন, চারদিক খোলা গড়ের মাঠ, কিংবা জনমানবহীন বালিগঞ্জ। এমনকি, তৎকালীন বড়বাজারের ছবিতেও দেখা যায় ভিড় অনেক কম আর ফিটন গাড়ির সারি।
জন্সটন অ্যান্ড হফম্যানের তোলা ছবিগুলি উনিশশো তিরিশের দশকে বর্ধমান রাজের তরফে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের কাছে উপহার হিসেবে আসে আর বাকিগুলি বোর্ন অ্যান্ড শেফার্ডের থেকে কিনে নিয়েছিলেন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন: মৃত্যুর পর গাছ হয়ে বেঁচে থাকতে চান? এ ভাবেও ভাবতে পারেন
তাঁর কর্মভূমি কলকাতা, সারা জীবনে কলকাতার প্রচুর ছবি তুলেছেন। সেই কিংবদন্তী চিত্রগ্রাহক রঘু রাইও প্রদর্শনীর উদ্বোধনে এসে কিছু ছবি দেখে অবাক। একটা সময় স্ট্র্যান্ড রোডের পাশেই ছিল কলকাতা বন্দর। ভিড়ত পাল লাগানো কাঠের জাহাজ। সেই ছবি দেখে বিস্ময় রঘু রাইয়ের চোখে। রবীন্দ্রসেতুর পূর্বসূরী পোনটুন ব্রিজের ছবি দেখেও সমান উচ্ছ্বসিত তিনি।
স্ট্র্যান্ড রোডের পুরনো বন্দর।
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলের রোটান্ডায় রানি ভিক্টোরিয়ার মূর্তিকে ঘিরে বসেছে এই প্রদর্শনী। নিজের সাম্রাজ্যের রাজধানীকেই যেন দেখছেন সাম্রাজ্ঞী। কিন্তু প্রদর্শনীর নাম ‘ফ্রোজেন ইন টাইম’ কেন! কিউরেটর রাণু রায়চৌধুরী বললেন, “এই ছবিগুলোর মধ্যেই থমকে আছে সময়, আবার প্রাকৃতিক নিয়মে নষ্ট হতে থাকা ছবিগুলি যেন বলে, কোনও কিছুই স্থায়ী নয়। সময়টাকে ধরা গেলেও সময় আসলে থেমে নেই।” বদলে যাওয়া কলকাতার চালচিত্র আর অমূল্য এই ৯৬টি ছবি যেন সেই কথাই বলে।
আরও খবর: সাড়ে তিন কিলোমিটার দূর থেকে লক্ষ্যভেদ ! স্নাইপাররা কী না পারেন
—নিজস্ব চিত্র।