—প্রতীকী চিত্র।
রাতে ফুটপাতে মায়ের সঙ্গে শুয়ে থাকা ১২ বছরের এক নাবালিকার মুখ চেপে ধরে তাকে জোর করে গাড়িতে তুলেছিল দুই ক্যাবচালক। অভিযোগ, খিদিরপুরের বাসিন্দা ওই দুই ব্যক্তি এর পরে গাড়িতে মেয়েটিকে গণধর্ষণ করে। তার পরে অপরাধ লুকোতে এবং তথ্যপ্রমাণ লোপাট করতে ভোরের আলো ফোটার আগেই মেয়েটিকে শ্বাসরোধ করে খুন করে। শেষে তপসিয়া এলাকার একটি খালে ফেলে দেয় দেহটি। তদন্তে নেমে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই হেয়ার স্ট্রিট থানার পুলিশ ঘটনার কিনারা করে। গ্রেফতার করা হয় দুই ক্যাবচালককে। নিয়ম মেনে তিন মাসের মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে পকসো আদালতে চার্জশিটও পেশ করেন তদন্তকারী অফিসার।
খুনের এই ঘটনাটি ঘটেছিল আট বছর আগে। কিন্তু অভিযোগ, ওই কিশোরীকে গণধর্ষণ এবং খুনের বিচার এখনও পায়নি তার পরিবার। আর জি কর হাসপাতালে তরুণী পড়ুয়া-চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় ন্যায়বিচারের দাবিতে যখন উত্তাল শহর তথা রাজ্য, তখন এত দীর্ঘ সময় পরেও নাবালিকাকে খুনের ঘটনার বিচার-প্রক্রিয়া শেষ হল না কেন, স্বাভাবিক ভাবেই সেই প্রশ্ন উঠেছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, ২০১৬ সালের ৩১ অগস্ট ভোরে ঘটনাটি ঘটেছিল হেয়ার স্ট্রিট থানা এলাকায়। মা এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ফুটপাতে ঘুমিয়ে ছিল ওই নাবালিকা। সেই সময়ে একটি অ্যাপ-ক্যাবে করে এসে তাকে জোর করে তুলে নিয়ে যায় দুই অভিযুক্ত গুড্ডু সিংহ এবং শঙ্কর সাউ। ২০১৬-র নভেম্বরে পকসো আদালতে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৬৪, ৩৭৬এ, ৩৭৬ডি, ৩০২, ২০১, ৩৪ এবং পকসো আইনের ৪ ও ৬ ধারায় চার্জশিট জমা দেন তদন্তকারী অফিসার। চার্জ গঠন করে এর পরে শুরু হয় বিচার-পর্ব। তা চলাকালীনই প্রেসিডেন্সি জেলে মারা যায় গুড্ডু।
বিচার প্রক্রিয়া শেষ হতে এত দেরি হচ্ছে কেন? আদালত সূত্রের খবর, এই মামলার সাক্ষী ৫২ জন। ইতিমধ্যেই ৩২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমানে ময়না তদন্তকারী চিকিৎসকের সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। মামলার পরবর্তী শুনানি ২১ সেপ্টেম্বর। সে দিনও ময়না তদন্তকারী চিকিৎসকের সাক্ষ্য গ্রহণ হওয়ার কথা।
সরকারি কৌঁসুলি সৈকত পাণ্ডে জানান, অভিযুক্তের তরফে বার বার আইনজীবী পরিবর্তন হওয়ায় বিচার প্রক্রিয়া শেষ হতে দেরি হচ্ছে। বর্তমানে লিগাল এডের তরফে অভিযুক্তের জন্য আইনজীবী নিযুক্ত করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, চলতি বছরের মধ্যেই মামলার বিচার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হবে।
আইনজীবীদের একাংশ জানিয়েছেন, মাঝে পকসো আদালতে স্থায়ী বিচারক ছিলেন না। ফলে কিছুটা বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে বিচার প্রক্রিয়া। করোনার সময়েও বিচার প্রক্রিয়া নিয়মিত করা যায়নি। এ ছাড়াও, অভিযুক্তের তরফে জামিনের আবেদন থেকে শুরু করে চার্জশিটে দেওয়া ধারা বাতিলের জন্য একাধিক বার উচ্চ আদালতে আবেদন জানানো হয়েছে। তার জন্যও সময় নষ্ট হয়েছে বলে দাবি আইনজীবীদের ওই অংশের।