গলসির দুর্ঘটনা

ভোরের হাসি মুছল বেলার শোকসংবাদে

মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধান! আর তার মধ্যেই পাল্টে গেল গোটা দৃশ্যপট। ভোরে ডালহৌসির বাড়ির সামনে থেকে পরিবারের ১২ জন সদস্যকে হাসিমুখে বিদায় জানিয়েছিলেন অন্যেরা। পুজো দিতে ঝাড়খণ্ডের গিরিডির উদ্দেশে সড়কপথে রওনা হয় দলটি। কয়েক ঘণ্টা পরেই খবর এল, তাঁদের তিন জন বর্ধমানের কাছে গলসিতে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের উপরে পথ দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে এক গাড়িচালকেরও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৪ ০০:৫৭
Share:

কুমুদদেবী ডাকালিয়া ও ইচরাজদেবী ডাকালিয়া

মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধান! আর তার মধ্যেই পাল্টে গেল গোটা দৃশ্যপট।

Advertisement

ভোরে ডালহৌসির বাড়ির সামনে থেকে পরিবারের ১২ জন সদস্যকে হাসিমুখে বিদায় জানিয়েছিলেন অন্যেরা। পুজো দিতে ঝাড়খণ্ডের গিরিডির উদ্দেশে সড়কপথে রওনা হয় দলটি। কয়েক ঘণ্টা পরেই খবর এল, তাঁদের তিন জন বর্ধমানের কাছে গলসিতে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের উপরে পথ দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে এক গাড়িচালকেরও। মৃতদের তালিকায় রয়েছেন পরিবারের গৃহকর্ত্রী ইচরাজদেবী ডাকালিয়া (৭২), বাড়ির ছোট বৌমা কুমুদদেবী ডাকালিয়া (৫৪) ও তাঁর দিদি পুষ্পাদেবী গুলগুলিয়া (৬৯)। যে গাড়িতে ওই তিন জন ছিলেন, তার চালক আফজল শেখও (৪০) মারা গিয়েছেন। ওই গাড়িতেই থাকা বাড়ির ছোট ছেলে রাজেশ ডাকালিয়া-সহ আরও কয়েক জন দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত।

ওঁরা রওনা হয়েছিলেন এ দিন সকাল ৬টা নাগাদ। আর গলসির দুর্ঘটনার খবর বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ পৌঁছয় ডালহৌসি পাড়ার ১২ নম্বর গভর্নমেন্ট প্লেস ইস্টের ডাকালিয়া পরিবারে। কার্যত বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন পরিবারের বাকিরা। প্রথমে তাঁদের প্রায় কেউই ওই দুর্ঘটনার কথা বিশ্বাস করতে চাননি। পরে ঘটনাস্থলে থাকা পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁরা বুঝতে পারেন, বিপদের খবর সত্যি। শোকের ছায়া নেমে আসে গোটা বাড়িতে। খবর পেয়ে গভর্নমেন্ট প্লেস ইস্টের চারতলা ফ্ল্যাটে একে একে ছুটে যান আত্মীয়-বন্ধুরা। গুরুতর আহত রাজেশ ডাকালিয়াকে বর্ধমান থেকে এনে দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।

Advertisement

ডাকালিয়া পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর দুয়েক আগেই হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় পরিবারের গৃহকর্তা লালচাঁদ ডাকালিয়ার। গৃহকর্তার মৃত্যুর পরে পরিবারের হাল ধরেন ইচরাজদেবী।

ডালহৌসি পাড়ায় দীর্ঘদিনের বাসিন্দা ডাকালিয়া পরিবারের পাটজাত দ্রব্যের ব্যবসা রয়েছে। লালচাঁদ ও ইচরাজদেবীর তিন মেয়ে এবং দুই ছেলে। তাঁরা সকলেই বিবাহিত। এঁদের মধ্যে একমাত্র বড় মেয়ে থাকেন দিল্লিতে। বাকিরা সবাই কলকাতার বাসিন্দা। দুই ছেলে রাজেশ ও নরেন্দ্র মায়ের সঙ্গে ব্যবসা সামলান।

এ দিন দুপুরে বাড়িতে বসে ওই পরিবারের ছোট মেয়ে সুনীতা শেঠিয়া জানান, দু’দিন আগে পরিকল্পনা হয়, ঝাড়খণ্ডের গিরিডির কাছে শিখরজি জৈন মন্দিরে পুজো দিতে যাওয়া হবে। ঠিক হয়, কলকাতা থেকে সরাসরি সড়কপথে গাড়ি করে ওই মন্দিরে যাওয়া হবে। পুজো দিতে যাওয়া ইচ্ছুকদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় পরিবারের নিজস্ব গাড়ি ছাড়াও আর একটি গাড়ি ভাড়া করা হয়েছিল। তবে বাড়ির গাড়িটিই দুর্ঘটনায় পড়েছে।

সুনীতাদেবী বলেন, “মাঝেমধ্যে আমরা, পরিবারের সকলে এ ভাবেই বেরিয়ে পড়ি। আমারও যাওয়ার কথা ছিল। বিশেষ কারণে যেতে পারিনি।” তাঁর বক্তব্য, “বুঝতেই পারছি না, কী করে ওই দুর্ঘটনা ঘটল।”

সুনীতাদেবীর স্বামী তরুণ শেঠিয়া বলেন, “দুর্ঘটনার কারণ আমাদের কাছে এখনও পরিষ্কার নয়। পুলিশের কাছ থেকে আমরা বিস্তারিত খবর নেওয়ার চেষ্টা করছি। তবে শুনেছি, এক জন পথচারীকে বাঁচাতে গিয়ে ওই দুর্ঘটনা ঘটেছে।” প্রসঙ্গত, দুর্ঘটনায় স্থানীয় পথচারী জ্যোৎস্না আকুঁড়েরও (২২) মৃত্যু হয়েছে।

পরিবারের সদস্য অমিত ডাকালিয়া জানান, তাঁদের পরিবারিক গাড়িটির দুর্ঘটনায় পড়ার খবর পেয়ে তাঁরা ভেবেছিলেন, নিজেদের চালকেরই মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু পরে তাঁরা জানতে পারেন, মাঝপথে কোনও কারণে ভাড়া গাড়ির চালক ডাকালিয়াদের নিজস্ব গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে বসেন। আর ডাকালিয়াদের চালক ভাড়া করা গাড়িটি চালাচ্ছিলেন। ফলে, দুর্ঘটনায় ভাড়া করা গাড়ির চালক আফজলই মারা গিয়েছেন। কিন্তু কেন দুই চালক নিজেদের গাড়ি বদল করলেন, তা পরিষ্কার নয় পরিবারের কাছে। ডাকালিয়াদের অনেকেরই ধারণা, এ ভাবে চালকেরা গাড়ি বদল না করলে হয়তো এই দুর্ঘটনা ঘটত না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement