ভিআইপি রোডের গোলাঘাটা ফুটব্রিজ। ছবি: শৌভিক দে
পুজোর সময়ে ভিআইপি রোডে যানযন্ত্রণা যে থাকবেই, তা কারও অজানা নয়। তবে মাঝেরহাট সেতু ভাঙার পরে প্রশাসন এ বার চিন্তিত ওই এলাকার ফুটব্রিজগুলি নিয়ে। ঠিক হয়েছে, অঘটন এড়াতে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা হবে ওই এলাকার প্রতিটি ফুটব্রিজে।
পূর্ত দফতর সূত্রের খবর, পুজোর ক’দিন গোলাঘাটা, শ্রীভূমি এবং লেক টাউন ফুটব্রিজে ভিড় নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘লেক টাউন ফুটব্রিজের বয়স ২০ বছর পেরিয়েছে। শ্রীভূমি ও গোলাঘাটা ফুটব্রিজের বয়সও ১০ বছরের বেশি। প্রতিটির নির্দিষ্ট বহন-ক্ষমতা রয়েছে। পুজোর সময়ে ভিআইপি রোডে যে বিপুল জনসমাগম হয়, তার চাপ ফুটব্রিজে পড়াটা ঝুঁকিপূর্ণ। সেই কারণেই ভিড় নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত।’’
বস্তুত, গত বছর দর্শনার্থীদের রাশের কথা মনে পড়লেই রক্তচাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে বিধাননগর কমিশনারেটের কর্তাদের। শ্রীভূমির ‘বাহুবলী’ মণ্ডপ দেখতে সে বার প্রচুর ভিড় হয়েছিল। সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত ভিআইপি রোডের দু’ধারে গাড়ির চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছিল পুলিশকে। দর্শনার্থীদের এই ঢলেই শঙ্কিত হচ্ছেন পূর্ত আধিকারিকেরা। উদ্বিগ্ন বিধাননগর কমিশনারেটও। এ বছর শ্রীভূমির থিম ‘পদ্মাবত’। বস্তুত, দ্বিতীয়ায় মণ্ডপ খোলার কথা থাকলেও রবিবার সন্ধ্যাতেই সেই কাজ সেরে ফেলেছেন উদ্যোক্তারা। যার জেরে ছুটির দিনের সন্ধ্যায় যানজট সামলাতে নাজেহাল অবস্থা হয় পুলিশকর্মীদের। সোমবার কর্তব্যরত এক পুলিশকর্মী বলেন, ‘‘সরকারি ভাবে এখনও কোনও নির্দেশিকা আসেনি। তবে যানজট যাতে না হয়, তার জন্য মণ্ডপ দেখতে আসা সমস্ত গাড়িকে বাঙুর সার্ভিস রোডে পার্কিংয়ের জন্য বলা হচ্ছে। রবিবার পুরো কালঘাম ছুটে গিয়েছিল।’’
দমদম পার্কের এক পুজোকর্তা বলেন, ‘‘গত বছরের নিরিখে ভিআইপি রোডে যান নিয়ন্ত্রণে পুলিশ যে কড়া মনোভাব নিয়ে চলবে তা একটি বৈঠকে বেশ বুঝেছি।’’ বাগুইআটি অঞ্চলের এক পুজোকর্তা বলেন, ‘‘ভিআইপি রোডের ভিড়কে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে দেওয়ার একটা প্রাথমিক পরিকল্পনা হয়েছে।’’ তা যাতে শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়, সেই আশায় রয়েছে বেশ কিছু পুজো কমিটি। তাঁরা জানান, গত বছর ভিড়ের চোটে ভিআইপি রোডের মূল রাস্তাতেও গাড়ি দাঁড়িয়েছিল। এ বার যশোর রোডের দিকে কিছু গাড়িকে ঘুরিয়ে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। যশোর রোডের এক পুজোকর্তার কথায়, ‘‘ভিআইপি-র ভিড়কে লেক টাউন দিয়ে যশোর রোডের দিকে পাঠানো হলে দর্শনার্থীরা অনেক পুজোই দেখতে পাবেন। যশোর রোড থেকে শ্যামনগর রোড ধরে বাগুইআটি হয়ে কিছু গাড়িকে ফের ভিআইপি রোডে পাঠানো যেতে পারে। তাতে সব দিক বজায় থাকবে।’’ দমদম পার্কের এক পুজোকর্তা বলেন, ‘‘পুলিশের হিসেব বলছে, দমদম পার্কে এ বার দর্শনার্থী বাড়বে। সেটা কিন্তু এই পরিকল্পনার জন্যই।’’
কমিশনারেটের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ভিআইপি রোডের মূল রাস্তার উপরে কোনও গাড়ি যাতে না দাঁড়ায়, সে ব্যাপারে সচেষ্ট থাকব। একই সঙ্গে মানুষ যাতে বিশৃঙ্খল ভাবে রাস্তার উপরে নেমে না পড়েন, তা-ও দেখা হবে।’’ কমিশনারেটের আর এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ট্র্যাফিকের কথা ভেবে প্রতি বছরই কিছু নিয়মকানুন থাকে। এ বার তা কার্যকর করতে প্রাথমিক পরিকল্পনা হয়েছে। কিছু চূড়ান্ত নয়।’’
পূর্ত ও পুলিশ— দুই দফতরের কর্তাদের মতে, এই চেষ্টায় সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল, শ্রীভূমি ও গোলাঘাটা সাবওয়ে কবে খুলবে? দফতরের ওই আধিকারিক বলেন, ‘‘মহালয়ার পরপরই ভূগর্ভস্থ পথ উদ্বোধনের লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছি। এখনও অঘটনের কিছু দেখছি না।’’