মর্মান্তিক: গাড়ির ধাক্কায় দুমড়ে গিয়েছে অটোটি।
দুর্ঘটনা ঠেকাতে রাস্তা জুড়ে বসানো হয়েছে স্পিড ব্রেকার। রাজ্য জুড়ে ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’-এর লাগাতার প্রচারও চলছে। কিন্তু গাড়িচালকদের একাংশ যে বিন্দুমাত্র সচেতন হচ্ছেন না, বাসন্তী হাইওয়েতে বারবার পথ দুর্ঘটনা তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। শনিবার গভীর রাতে সায়েন্স সিটির অদূরে বাসন্তী হাইওয়েতে ফের বেপরোয়া গাড়ির মুখোমুখি ধাক্কায় প্রাণ হারালেন অটোচালক-সহ তিন জন। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের নাম বাবলু দাস (৩৫), সুবীর সাঁপুই (৬৭) এবং সন্দীপ দাস (৩৬)। সুদর্শন বর্মন (৫৬) নামে আর এক ব্যবসায়ী আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
পুলিশ সূত্রের খবর, শনিবার রাত পৌনে তিনটে নাগাদ চৌবাগা থেকে অটোয় চেপে মাছ কিনতে শিয়ালদহ রওনা দিয়েছিলেন ওই তিন মাছ ব্যবসায়ী। তাঁরা সকলেই স্থানীয় বাসিন্দা। অটোর পিছনের আসনে বসেছিলেন তিন ব্যবসায়ী। পুলিশ জানায়, রাত তিনটে নাগাদ আড়ুপোতার কাছে বাসন্তী হাইওয়ের উপরে একটি গাড়ি ওই অটোটিকে মুখোমুখি ধাক্কা মারে। এই ঘটনায় অটোচালক সন্দীপ-সহ তিন জন ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। পুলিশ জানিয়েছে, অন্য জনকে কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
আরও পড়ুন: চলন্ত বাসে মার খেল উর্দি পরা পুলিশ
তদন্তকারীরা জানান, অটোটি চৌবাগা থেকে পাঁচশো মিটার যাওয়ার পরেই আড়ুপোতা মোড়ের কাছে সায়েন্স সিটির দিক থেকে আসা একটি বেপরোয়া গাড়ি অটোটিকে ধাক্কা মারে। পুলিশ জানিয়েছে, তার পরেই গাড়িটি ঘটনাস্থল ছেড়ে পালিয়ে যায়। গাড়ির ধাক্কায় অটোটি পুরোপুরি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। রাতে টহলরত প্রগতি ময়দান থানার পুলিশ দুর্ঘটনার খবর পেয়ে চার জনকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে। পুলিশ জানিয়েছে, ঘাতক গাড়িটির গতি এতটাই বেশি ছিল যে মুখোমুখি ধাক্কার ফলে দু’জনের দেহ ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পুলিশ অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে তাঁদের কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চালক-সহ তিন জনকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। অন্য এক ব্যবসায়ী সুদর্শন বর্মন আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি।
দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পরে সুবীর সাঁপুইয়ের স্ত্রী রেবতী।
দুর্ঘটনায় মৃত সন্দীপ দাস ট্যাংরার বাসিন্দা। তাঁর প্রতিবেশী শঙ্কর মণ্ডল বলেন, ‘‘রবিবার আমরা একটি গাড়িতে করে ফুল বিক্রি করতে হাওড়া যাচ্ছিলাম। দুর্ঘটনাগ্রস্ত অটোটির কিছুটা পিছনেই ছিলাম। তিনটে দশ নাগাদ আড়ুপোতা মোড়ের কাছে পৌঁছতেই দেখি, অটোটি বীভৎস ভাবে ভাঙাচোরা অবস্থায় রাস্তায় পড়ে রয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে সন্দীপের বাড়ির লোককে খবর দিই।’’
এ দিন দুপুরে চৌবাগায় মৃতদের বা়ড়িতে গিয়ে দেখা গেল, শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মৃত সুবীর সাঁপুইয়ের স্ত্রী রেবতী সাঁপুই বারবার আক্ষেপ করছিলেন, ‘‘অন্য দিন ছেলেই শিয়ালদহে মাছ কিনতে যেত। আজ ওর বাবাই রাত আড়়াইটে নাগাদ বাড়ি থেকে রওনা দেন। ঘাতক গাড়িটিকে পুলিশ খুঁজে বের করে চালকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিক, এটাই এখন চাইছি।’’ এক চিলতে বাড়িতে স্ত্রী এবং ছোট দুই ছেলে-মেয়ের সঙ্গে ভাড়া থাকতেন সন্দীপ দাস। তাঁর স্ত্রী দেবিকা দাস এ দিন বলেন, ‘‘পরিবারের একমাত্র রোজগেরে ছিলেন আমার স্বামী। দুই শিশুকে নিয়ে আমি কী ভাবে বাঁচব।’’ দুর্ঘটনায় মৃত অটোচালক বাবলু দাসের ট্যাংরার গোবিন্দ খটিক রোডের বাড়িতে এ দিন দুপুরে গিয়ে দেখা গেল, বাবা বাসু দাস এবং মা খুশি দাস বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন। চার ছেলের মধ্যে মেজ বাবলুর অটোটি অন্য দিনের মতোই শনিবারও ভাড়া করেছিলেন চৌবাগার ওই মাছ ব্যবসায়ীরা। বাবা বাসু দাস বলেন, ‘‘রাত আ়ড়াইটা নাগাদ বা়ড়ি থেকে বেরিয়েছিল ছেলে। সকালে পুলিশের কাছ থেকে দুর্ঘটনার খবর পাই।’’
—নিজস্ব চিত্র