লাগাতার জালিয়াতির ঘটনায় ব্যাঙ্ক কর্মীদের একাংশের জড়িত থাকার অভিযোগ করেছিলেন গ্রাহকেরা। এ বার ব্যাঙ্ক তদন্তে নেমে সেই অভিযোগের কিছুটা সত্যতা পেয়েছে কলকাতা পুলিশও। জালিয়াতি চক্রের চাঁই ও অভিযুক্ত ব্যাঙ্ককর্মীদের ধরা না পড়লেও চক্রের তিন সদস্য গৌতম সিংহ, বাবু সিংহ ও জিতু যাদবকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আদালতের নির্দেশে তিন জনই আপাতত পুলিশি হাজতে।
পুলিশের দাবি, ব্যাঙ্ক কর্মীদের একাংশই গ্রাহকদের অ্যাকাউন্টের তথ্য জালিয়াতদের হাতে তুলে দিচ্ছে। তাতেই কাজ সহজ হচ্ছে অপরাধীদের। সহজেই ধনী গ্রাহকদের সন্ধান পেয়ে যাচ্ছে তারা। গৌতমেরা অবশ্য টাকা হাতানোর আগেই ধরা পড়ে গিয়েছে। কিন্তু এর আগে এমন কাণ্ড আরও ঘটিয়েছে বলে ধৃতেরা স্বীকার করেছে। এমন আরও অনেক চক্র রাজ্যে সক্রিয় রয়েছে বলেই সন্দেহ করছে পুলিশ। অভিযুক্ত ব্যাঙ্ককর্মীদের পাক়ড়াও করতে পারলেই বাকি চক্রগুলির হদিস মিলবে বলে মনে করছেন তাঁরা। এক পুলিশকর্তা বলছেন, ‘‘ব্যাঙ্ক জালিয়াতি নানা ভাবে ঘটে। তা রোখার কায়দাও বার করা হচ্ছে। কিন্তু সর্ষের মধ্যে এমন ভূত থাকলে জালিয়াতি রোখা কঠিন হয়ে ওঠে।’’
পুলিশ জানায়, গত সপ্তাহে কাশীপুরের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ম্যানেজার চেক জালিয়াতির অভিযোগ দায়ের করেন। তাতে বলা হয়, বরাহনগরের বাসিন্দা গৌতম সিংহের অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়ার জন্য বর্ধমানের এক গ্রাহক চেক জমা দিয়েছেন। অথচ ওই ব্যক্তির দাবি, তিনি কিছুই জানেন না। চেকটি খতিয়ে দেখার পরে ব্যাঙ্ক ম্যানেজার বুঝতে পারেন, সেটি জাল।
কাশীপুর থানার পুলিশ গৌতমকে জেরা করে জানতে পারে, টাকার লোভ দেখিয়ে কিছু পরিচিত যুবক তাঁর কাছ থেকে চেক বই নিয়েছিল। ওই যুবকেরা গৌতমকে জানিয়েছিলেন, তাঁর অ্যাকাউন্টে মোটা টাকা জমা পড়বে ও তার ভাগ তাঁকেও দেওয়া হবে। সেই টোপে পা দিয়েই এই চক্রে জড়িয়ে পড়ে সে। পুলিশ জানিয়েছে, জালিয়াতি চক্রের নানা সদস্য নানা কাজ করত। কেউ ব্যাঙ্ক কর্মীদের থেকে গ্রাহকদের তথ্য জোগাড় করত। কেউ গৌতমের মতো নিরীহ লোকেদের টোপ দিয়ে চক্রের কাজে লাগাত। প্রথমে লোকেদের ফাঁসিয়ে চেক বই হাতিয়ে নেওয়া হতো। পরে ধনী গ্রাহকদের চিহ্নিত করে গৌতমের চেক থেকে কারসাজি করে ধনী গ্রাহকদের অ্যাকাউন্টের জাল চেক তৈরি করা হতো। সেই চেক ব্যবহার করেই অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা হাতিয়ে নিত।
লালবাজারের এক কর্তা জানান, কাশীপুর ব্যাঙ্কের ম্যানেজারের চেক দেখে সন্দেহ হওয়ায় তিনি সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের শাখায় যোগাযোগ করেন। গ্রাহকের সঙ্গে যোগাযোগ করতেই জালিয়াতির বিষয়টি সামনে আসে। পুলিশ জানায়, গৌতমকে পাকড়াও করে জেরা করতেই বাকিদের নাম জানিয়ে দেয় সে। এই চক্রের অন্যতম মাথা শ্যামনগরের বাসিন্দা জিতু চেক জাল করতে সিদ্ধহস্ত। বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।