2020 Kolkata International Book Fair

প্রতিবাদের সুরেই শেষ হল বইমেলা

শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বইমেলার মাঠেই ছিল সিএএ বিরোধী প্রচারের ছড়াছড়ি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০২:৫০
Share:

দু’পক্ষ: (বাঁ দিকে) বইমেলা চত্বরে পোস্টার হাতে সিএএ-এনআরসি বিরোধী প্রতিবাদ মিছিলে। (ডান দিকে) বিশ্ব হিন্দু পরিষদের স্টলের সামনে পুলিশের সঙ্গে কথা কাটাকাটি কয়েক জন যুবকের। রবিবার, সল্টলেকে। ছবি: সুমন বল্লভ

কলকাতার বিভিন্ন সিএএ-বিরোধী মিছিলে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের মুখ আঁকা প্রকাণ্ড লাল পতাকা হাতে দেখা গিয়েছিল মেয়েটিকে। এমনকি নরেন্দ্র মোদীর কলকাতা সফরের দিনেও ধর্মতলায় ব্যারিকেডের একেবারে সামনে তাঁকে দেখা গিয়েছে। হুগলির একটি কলেজে আইনের ছাত্রী সেই তরুণী ঊর্মিমালা রায়ের কাছে এ বারের বইমেলার শেষটা রীতিমতো তেতো হয়ে থাকল।

Advertisement

শনিবার সন্ধ্যায় বইমেলার মাঠে ৩৭৬ নম্বর স্টলের (একটি বিজেপিপন্থী পত্রিকার দোকান) সামনে সিএএ-বিরোধী পোস্টার হাতে দাঁড়িয়েই তাঁকে মার খেতে হয়েছে বলে তিনি পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছেন। রীতিমতো কাঠখড় পুড়িয়ে বিধাননগর উত্তর থানায় জমা দেওয়া অভিযোগপত্রে তিনি জানিয়েছেন, বেশ কয়েক জন দুষ্কৃতী এবং পুরুষ পুলিশকর্মী তাঁকে নিগ্রহ এবং অশালীন ভাবে হেনস্থা করেন। তবে অভিযোগ জমা দেওয়ার পরে রবিবার রাত পর্যন্ত পুলিশের তরফে কেউ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। বিধাননগর পুলিশের কমিশনার লক্ষ্মীনারায়ণ মিনা থেকে উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের বারবার ফোন করে এবং এ বিষয়ে বার্তা পাঠিয়েও উত্তর মেলেনি।

শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বইমেলার মাঠেই ছিল সিএএ বিরোধী প্রচারের ছড়াছড়ি। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর এনআরসি-বিরোধী বক্তৃতা পর্যন্ত তারস্বরে বইমেলার মাঠে প্রচার করা হয়েছে। তবু সিএএ-এনআরসি বিরোধী প্রতিবাদ সামলাতে গিয়েই শেষবেলায় কার্যত মুখ পুড়ল স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসনের। কেন, বইমেলার মাঠে প্রচারপুস্তিকা বিলি বা পোস্টার প্রদর্শন করতে গিয়ে মার খাবেন সাধারণ প্রতিবাদীরা? কেন বইমেলার মাঠে অজস্র লোক দেখবেন, মাটিতে ফেলে টানাহ্যাঁচড়া করে প্রতিবাদীদের কন্ট্রোলরুমে আটক করছে পুলিশ? রবিবার, বইমেলার শেষ দিনও প্রশ্নগুলিই খচখচ করেছে।

Advertisement

শেষ দিনে বইমেলার মাঠে প্রতিবাদ-মিছিলে স্লোগান উঠেছে, ‘পুলিশ তুমি উর্দি ছাড়ো/তৃণমূলের ঝান্ডা ধরো’ কিংবা ‘ফ্যাসিবাদের ঝান্ডা ধরো’! যাঁরা আগের দিন পুলিশের বা দুর্বৃত্তদের হাতে মার খেয়েছেন বা অভব্য আচরণের শিকার হয়েছেন, তাঁরা অনেকেই রিং রোড ধরে প্রতিবাদ-মিছিলে শামিল হন। অনেকেরই অভিযোগ, পুলিশ নিগ্রহ ও হেনস্থা করার পরে বিধাননগর উত্তর থানা অভিযোগ নিতে না-চাওয়ায় জটিলতা বাড়ে। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী উৎসা শারমিন জানিয়েছেন, পুলিশ তাঁদের ‘কীরে কখনও রেপ্‌ড হয়েছিস’ বলে পরোক্ষ হুমকি দেয়। ঋতজা, যশোমতী, অনিমেষ দত্ত, দেবপর্ণা, শ্রেয়ার মতো পুলিশের হাতে আটক অনেক মুখই এ দিনও মিছিলে ছিলেন।

বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধেও অবশ্য পরে এক পুলিশকর্মী মহিলাকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। বিজেপিপন্থী পত্রিকাটির তরফে অমিতাভ রায় বলেন, ‘‘বিক্ষোভকারীরাই স্টলের সামনে দিনের পর দিন গালিগালাজ করে প্ররোচনা ছড়িয়েছেন। এর ফলেই যা ঘটার ঘটেছে।’’ এ দিন ওই স্টলগুলির দিকে পুলিশ পাহারা ছিল দেখার মতো। তাও পুলিশের সঙ্গে কথা কাটাকাটিতে জড়িয়ে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের স্টলের কয়েক জন যুবক বইমেলায় সমস্বরে ‘হনুমান চালিসা’ আবৃত্তি শুরু করেন। এ দিনও গোলমালের অভিযোগে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের স্টলের সামনে দু’জন যুবককে আটক করার অভিযোগ উঠেছে। বইমেলার শেষ দু’দিনের গোলমাল দুঃখজনক বলে মনে করেন পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক সুধাংশুশেখর দে। ভবিষ্যতে গন্ডগোল ঠেকাতে স্টল সাজানোর সময় থেকেই আরও সতর্ক থাকা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement