উপাচার্যের দফতরে খোলা জুতো। সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ে। নিজস্ব চিত্র
প্রায় দুশো বছরের প্রাচীন একটি রীতিকে বাঁচিয়ে রাখতে চাইছে সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়। কারণ, সেই রীতির সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের নাম। তাঁকে সম্মান জানাতেই এমন ভাবনা।
সংস্কৃত কলেজে বিদ্যাসাগর যখন অধ্যক্ষ ছিলেন, তখন তাঁর ঘরে ঢুকতে হলে জুতো খুলে বাইরে রাখতে হত। সেই রেওয়াজই এত দিন ধরে চলে এসেছে। বছরখানেক হল সংস্কৃত কলেজ উন্নীত হয়েছে সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানেও জুতো খুলে রাখার রীতিকে বাঁচিয়ে রাখতে চান উপাচার্য পলা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছেন, ‘‘তৎকালীন সংস্কৃত কলেজে এখানেই দফতর ছিল বিদ্যাসাগরের। তাঁকে সম্মান জানাতেই এই সিদ্ধান্ত। যা কিছু ভাল, তাকে বাঁচিয়ে রাখাই তো উচিত।’’
১৮২৪ সালে প্রতিষ্ঠিত সংস্কৃত কলেজের ঐতিহ্যকে আঁকড়েই গড়ে উঠেছে সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হওয়ার আগে সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব যিনি সামলাচ্ছিলেন, সেই উপল সেন সেখানকারই ছাত্র। তিনি জানালেন, তাঁর বাবা এবং ঠাকুরদাও ওই কলেজেই পড়েছেন। তাঁদের কাছেই তিনি শুনেছিলেন, বিদ্যাসাগর অধ্যক্ষ থাকাকালীন দফতরে জুতো খুলে ঢুকতেন। এর পরেও সেই নিয়ম থেকে যায়। উপলবাবুও ছাত্রাবস্থায় অধ্যক্ষের ঘরে জুতো খুলে ঢোকার নিয়মই দেখেছেন। তিনি বলেন, ‘‘অধ্যক্ষ গুরুজন। তাঁর দফতরে জুতো খুলে ঢোকার অর্থ, তাঁকে সম্মান জানানো। পাশাপাশি, পরিচ্ছন্নতার প্রশ্ন তো আছেই।’’ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে তিনিও সেই নিয়মকেই চালু রেখেছিলেন।
শিক্ষাবিদ অমল মুখোপাধ্যায় অবশ্য জানালেন, মাঝে এই নিয়মে ছেদ পড়েছিল। পঞ্চাশের দশকে তিনি যখন প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্র ছিলেন, তখন তাঁর বিষয়ের মধ্যে সংস্কৃত ছিল। সেই ক্লাস করতে যেতেন সংস্কৃত কলেজে। তখন অধ্যক্ষ ছিলেন প্রবোধচন্দ্র লাহিড়ী। সে সময়ে ওই নিয়ম চালু ছিল না। পরে পঞ্চাশের দশকের শেষের দিকে গৌরীনাথ শাস্ত্রী অধ্যক্ষ হওয়ার পরে ওই নিয়ম পুনরায় চালু হয়। অমলবাবু বলেন, ‘‘সেই সময় থেকে বিদ্যাসাগরের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই ওই নিয়ম আবার চালু হয়। পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখাও আর একটি কারণ।’’ শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকারও জানালেন, ছাত্রাবস্থায় তিনি সংস্কৃত কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ গৌরীনাথ শাস্ত্রীর কাছে গিয়েছিলেন। তখন দেখেছিলেন, তাঁর দফতরে জুতো খুলেই ঢুকতে হয়।
উপাচার্য পলাদেবীর মতে, বিদ্যাসাগর যে দফতরে বসে কাজ করে গিয়েছেন, সেটা তাঁরও দফতর। ওই ঘরের ঐতিহাসিক মূল্য অসামান্য।