—প্রতীকী চিত্র।
কামদুনিতে গণধর্ষণ করে খুনের ঘটনার ১০ বছর পার হল বুধবার। কেন এত বছরেও আদালতে চিহ্নিত দোষীদের শাস্তির প্রক্রিয়াত্বরান্বিত হল না? এই প্রশ্ন তুলে এ দিন বিকেলে মিছিল করলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। দশ বছর আগের সেই নৃশংস ঘটনায় ফুঁসে উঠেছিল গোটা রাজ্য। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনীতির জল কম ঘোলা হয়নি কামদুনিতে। এক সময়ে আলোচনা ও রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা কামদুনি ধীরে ধীরে আড়ালে চলে যায়। চাপা পড়ে যায় দীর্ঘদিন ধরে চলা মামলাটিও।
কামদুনির ঘটনার ১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সেখানে এ দিন প্রতিবাদসভার ডাক দেওয়া হয়েছিল গ্রামবাসীদের তরফে। সেখানেই ‘দোষীদের শাস্তি হল না কেন, মুখ্যমন্ত্রী জবাব দাও’, ‘জবাব তোমায় দিতেই হবে’ — এই সব স্লোগান দিয়ে মিছিলে হাঁটলেন সিপিএমের রমলাচক্রবর্তী ও তন্ময় ভট্টাচার্য, কংগ্রেস নেতা ও আইনজীবী কৌস্তভ বাগচী, কামদুনির প্রতিবাদী মুখ মৌসুমী ও টুম্পা কয়াল, নির্যাতিতারস্কুলের শিক্ষক প্রদীপ মুখোপাধ্যায়-সহ শতাধিক গ্রামবাসী। কামদুনি মোড় থেকে মিছিল পৌঁছয়ঘটনাস্থলে। নির্যাতিতার স্মৃতিতে শ্রদ্ধা জানানো হয়। পরে বক্তব্য রাখেন রমলা ও কৌস্তভেরা। সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দোষীদের শাস্তির দাবিতে অডিয়ো-বার্তা পাঠিয়ে পাশে দাঁড়ালেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী।
২০১৩ সালের ৭ জুন। কামদুনিতে ২১ বছরের এক কলেজছাত্রীকে গণধর্ষণের পরে নৃশংস ভাবে খুনকরা হয়। ওই ঘটনায় মোট ছ’জনকে দোষী সাব্যস্ত করে কলকাতার নগর দায়রা আদালত। তিন জনকে ফাঁসি ও তিন জনকে যাবজ্জীবনের সাজা শোনান বিচারক। অভিযুক্তেরা রায়েরবিরুদ্ধে কলকাতা হাই কোর্টে আবেদন করে। এখনও বিচারাধীন সেই মামলা। এ দিন প্রথমে কামদুনির নির্যাতিতার স্মৃতিবেদিতে মোমবাতি জ্বালিয়ে স্মরণ করা হয়। মিছিল থেকেই দাবি ওঠে, দোষীদেরশাস্তির আইনি প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ বলেন, ‘‘দুঃখজনক ঘটনায়বর্ষপূর্তি করাটা ঠিক নয়। সরকার দোষীদের শাস্তি দেওয়ার জন্য গ্রেফতার করেছে এবং যাবতীয় সহযোগিতা করেছে। বিষয়টি বিচারাধীন। এর ফলেই দেরি হচ্ছে। কিন্তু, বিরোধীরা হাওয়া গরম করছেন।’’
মামলার বিচারপর্ব শুরু হয়েছিল বারাসত আদালতে। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে সেই মামলা নগর-দায়রা আদালতে স্থানান্তরিত হয়। ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি অভিযুক্ত আট জনের মধ্যে ছ’জনকে দোষী সাব্যস্ত করে কলকাতার নগর-দায়রা আদালত। শেখ আমিন ও রফিকুল গাজি বেকসুর খালাস পায়। আনসার আলি, সইফুল আলি এবং আমিন আলিকে ফাঁসির সাজা শোনান বিচারক। গোপাল নস্কর, ভোলা নস্কর এবং আমিনুর ইসলামকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয় আদালত। গোপাল আলিপুর সংশোধনাগারে থাকাকালীন মারা যায়। ওই মামলার দায়িত্বে রাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডি।
কামদুনির ঘটনার পরে সেখানে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে ঘিরেও বেনজির বিক্ষোভের ছবি ধরা পড়েছিল। সেই বিক্ষোভের অন্যতম মুখ ওমুখ্যমন্ত্রীর ‘বিরাগভাজন’ হওয়া মৌসুমী কয়াল বলেন, ‘‘কথা রাখেননি মুখ্যমন্ত্রী। উনি বলেছিলেন, ১৫ দিনে চার্জশিট আর ৩০ দিনে সাজা ঘোষণা হবে। ১০ বছর হয়ে গেল, দোষীদের শাস্তি কার্যকর হল না। বরং পিছন থেকে নেতা-মন্ত্রীরা হুমকি দিয়েসরিয়ে দিচ্ছেন মামলার আইনজীবীদের। সরকারের দেওয়া ১৪ জন আইনজীবী মামলা ছেড়ে চলে গিয়েছেন। দুই আইনজীবী, জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় ও শীর্ষেন্দু সিংহরায় লড়ছেন বর্তমানে।’’
নির্যাতিতার শিক্ষক প্রদীপ মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘সরকারপক্ষ ইচ্ছে করে বিচার প্রক্রিয়া পিছোচ্ছে। সরকারি আইনজীবীরা মামলা না লড়ে সরে যাচ্ছেন। সরকার সবই জানে। ছ’বছর ধরে মামলা চলছে হাই কোর্টে। আমরা আশাবাদী যে, নগর দায়রা আদালতের রায়ই বহাল থাকবে সুপ্রিম কোর্টে।’’