পুড়ে গিয়েছে ঘরের আসবাব ও জিনিসপত্র। বুধবার, বেহালায়। নিজস্ব চিত্র
মেয়েকে একা ঘরে রেখে কাজে বেরিয়েছিলেন মা। কাজের মাঝেই খবর পান, আগুন লেগে মৃত্যু হয়েছে ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ মেয়ের। ফিরে মহিলা দেখেন, তাঁর নিজের ঘরের পাশাপাশি জ্বলছে আশপাশের আরও তিনটি ঘর। ঘরের মধ্যে বিছানায় অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় পড়ে মেয়ের মৃতদেহ।
পুলিশ জানায়, বুধবার দুপুরে বেহালার ভূপেন রায় রোডের সুভাষপল্লির এই ঘটনায় মৃতার নাম চন্দনা দাস (৩৫)। বেহালা থানার পুলিশ ঘরের দরজা ভেঙে চন্দনার দেহ উদ্ধার করে ময়না-তদন্তের জন্য স্থানীয় বিদ্যাসাগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, এটি আত্মহত্যা। তবে অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে এ দিন দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছলেও কাজ করতে পারেনি দমকল। ঘিঞ্জি এলাকা এবং দমকলের গাড়ি যাওয়ার পথ না থাকায় আটকে ছিল দমকলের গাড়ি। স্থানীয়েরাই পাড়ার পুকুর থেকে জল এনে আগুন নিভিয়েছেন বলে দাবি তাঁদের।
সুভাষপল্লিতে মা সনকা দাসের সঙ্গে থাকতেন চন্দনা। পল্লির একেবারে ভিতরের দিকে তাঁদের বাড়ি। পাশেই অন্য একটি ঘরে স্ত্রীর সঙ্গে থাকেন চন্দনার ভাই বিশ্বজিৎ দাস। সনকা জানান, এ দিন সকালে নিজেই বাজার করেন চন্দনা। তবে বাজার করা নিয়ে মায়ের সঙ্গে তাঁর তর্কাতর্কি হয়। এর পরে মেয়েকে ঘরে রেখে কাজে চলে যান তিনি। কিন্তু এমন ঘটনা কী ভাবে ঘটল, তা বুঝতে পারছেন না বলে দাবি সনকার। চন্দনার আত্মীয় শর্মিলা দাস বলেন, ‘‘পাশাপাশি ঘর আমাদের। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ হঠাৎ কিছু ফাটার শব্দ পাই। বেরিয়ে দেখি চন্দনাদের ঘরে আগুন জ্বলছে।’’
গণেশ ঘোষ নামে এক যুবকের ঘরও চন্দনাদের ঘর লাগোয়া। তিনি জানান, ঘটনার সময়ে চন্দনাদের ঘরের দরজায় ভিতর থেকে তালা দেওয়া ছিল। তাই আগুন লেগেছে দেখেও তাই দরজা ভাঙতে পারেননি পড়শিরা। পুলিশ এবং দমকলকে খবর দেওয়া হয়। শেষে পুলিশ গিয়ে ঘরের দরজা ভাঙে। পুলিশ জানায়, দমকলের গাড়ি আগুন লাগা ঘরের কাছে পৌঁছতে না পারায় পাশের তিনটি ঘরেও আগুন ধরে যায়। ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসেন বাসিন্দারা। এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, চন্দনাদের ঘরে অস্থায়ী কাঠামো বানিয়ে দোতলায় ওঠার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঘরের মধ্যেই সেই পোড়া কাঠামো ভেঙে পড়েছে। পাশের তিনটি ঘরের টালির চালও আগুনে পুড়ে ঘরের মধ্যে ভেঙে পড়ছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, চন্দনার বাবা তাঁদের সঙ্গে থাকেন না। তাঁদের দাবি, চন্দনার কিছু মানসিক সমস্যা ছিল। মাঝেমধ্যেই তিনি অজ্ঞানও হয়ে যেতেন। কয়েক বছর আগে মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন চন্দনার মা। তবে চন্দনা স্বামীর সঙ্গে থাকেননি। মায়ের সঙ্গেই সুভাষপল্লিতে থাকতেন। মায়ের মতোই চন্দনাও কয়েকটি বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করতেন বলে জানান স্থানীয়েরা। চন্দনার মা সনকা এ দিন বলেন, ‘‘বারুইপুরে এক চিকিৎসকের কাছে মেয়েকে দেখাতাম। অনেক চেষ্টা করেছি ওকে ভাল করার জন্য। এমন ঘটনা যে ঘটতে পারে, ভাবিনি।’’