মুঙ্গেরকে অস্ত্র দেয় কলকাতা শহরতলিই!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৯ ০৫:৩৬
Share:

প্রতীকী ছবি।

এটাও যেন এক আউটসোর্সিং!

Advertisement

বিহারের মুঙ্গের গোটা দেশেই অস্ত্রের আঁতুড়ঘর বলে পরিচিত। সেই আঁতুড়ের জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্র বরাত দিয়ে তৈরি হচ্ছে কলকাতার উপকণ্ঠে। সাত অস্ত্র কারবারিকে গ্রেফতারের পরে এই তথ্য উঠে এসেছে কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স বা এসটিএফের গোয়েন্দাদের হাতে।

বৃহস্পতিবার ওই সাত জনকে গ্রেফতারের পরে রাজারহাটে নারায়ণপুর থানা এলাকার দোননগর ও ছোটগাঁথিতে বেআইনি অস্ত্র কারখানার হদিস পায় পুলিশ। ওই দুই জায়গা থেকে গোয়েন্দারা বাজেয়াপ্ত করেন অর্ধেক তৈরি ৯০টি দেশি নাইন এমএম আগ্নেয়াস্ত্র। সঙ্গে মেলে প্রায় ৮৮ হাজার টাকার জাল ভারতীয় নোট এবং চারটি সেভেন এমএম আগ্নেয়াস্ত্রের কার্তুজ। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে অস্ত্র তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জামও।

Advertisement

গোয়েন্দাদের দাবি, বেআইনি অস্ত্রের তৈরির জন্য কুখ্যাত মুঙ্গেরের বিভিন্ন এলাকায় লেদ কারখানার উপরে নজরদারি কঠোর করেছে সেখানকার পুলিশ। সেই সঙ্গে চলেছে ধড়পাকড়। তাই অস্ত্র তৈরিতে ওস্তাদ কারিগরেরা ঘাঁটি গেড়েছে কলকাতা শহরতলির বিভিন্ন জায়গায়। নারায়ণপুরের ওই দু’টি জায়গার আগে কাঁকিনাড়া, আগরপাড়া, বারুইপুর, মহেশতলা-সহ বিভিন্ন জায়গায় অস্ত্র কারখানার সন্ধান মিলেছিল। প্রতিটি জায়গাতেই কিছু স্থানীয় বাসিন্দার সাহায্য নিয়ে কারখানা চালাত মুঙ্গেরের অস্ত্রের কারবারিরা। কোনও কারখানাতেই পুরো অস্ত্র তৈরি করা হত না। অর্ধেক তৈরি অস্ত্রই বিক্রি করা হত হাজার তিনেক টাকায়। এক তদন্তকারী জানান, নারায়ণপুরে তৈরি অস্ত্র মুঙ্গের ছাড়াও বাংলাদেশে যেত। আগরপাড়া-কাকিনাড়ায় ধৃত অস্ত্রের কারবারিরাও জেরায় জানিয়েছে, জাল নোটের বিনিময়ে বাংলাদেশে ওই অস্ত্র পাঠাত তারা। অস্ত্রের অন্য একটি অংশ চলে যেত মুঙ্গেরে। সেখান থেকে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ত।

পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে ধর্মতলায় ধরা পড়ে মহম্মদ সাদাকত আনসারি, মহম্মদ টারজান, ঋষি কুমার ও সুমন কুমার নামে চার অস্ত্র ব্যবসায়ী। ঋষি বিহারের বাঁকার বাসিন্দা, অন্য তিন জনের বাড়ি মুঙ্গেরে। উদ্ধার হয় অর্ধেক তৈরি ৩০টি দেশি নাইন এমএম আগ্নেয়াস্ত্র। ধৃতদের জেরা করে দোননগরে একটি বাড়িতে অস্ত্র কারখানার সন্ধান মেলে। সেখানে যন্ত্রপাতির সঙ্গেই পাওয়া যায় বহু অস্ত্র। গ্রেফতার করা হয় মহম্মদ সনু, শেখ আলি হোসেন ওরফে মুন্না, মহম্মদ শামিম আলম নামে তিন জনকে। লেদের কাজের জন্য বাড়িটি এক মাস আগে ভাড়া নিয়েছিল মুন্না। সেখানে লেদ ও বল-বিয়ারিংয়ের কাজ হচ্ছে বলে জানতেন এলাকাবাসী। তাঁরা জানান, স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ছোটগাঁতিতে থাকত মুন্না। তাকে জেরা করে তার ছোটগাঁতির বাড়িতে হানা দেন গোয়েন্দারা। সেখানেও মেলে অস্ত্র তৈরির যন্ত্র। পুলিশ জানায়, অর্ধসমাপ্ত অস্ত্রকে চূড়ান্ত রূপ দিতে বাড়িতে কারখানা গড়েছিল মুন্না।

তদন্তকারীরা জানান, মুন্না অস্ত্র কারবারের অন্যতম পান্ডা। মূল পান্ডার বাড়ি মুঙ্গেরে। তার সঙ্গে মিলেই নারায়ণপুর এলাকায় কারখানা তৈরি করা হয়েছিল। মূলত মুঙ্গেরের ওই বাসিন্দাই অস্ত্রের বরাত দিত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement