গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
জাতীয় সঙ্গীত অবমাননার ঘটনায় ছুটির দিনেও পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় দেখা গেল কলকাতা পুলিশের বিশেষ বাহিনীকে। বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশন চললেও, শনি এবং রবিবার বন্ধ থাকে অধিবেশন। তাই স্বাভাবিক কারণেই বিধায়কেরা কেউই বিধানসভায় আসেননি। বিধানসভা সূত্রে খবর, শনিবার দুপুরের দিকে বিধানসভায় আসে কলকাতা পুলিশের একটি বাহিনী। সেই বাহিনীর সদস্যরা যেখানে জাতীয় সঙ্গীতের অবমাননা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে, সেখানকার ভিডিয়ো তোলার পাশাপাশি স্থির ছবিও তুলেছেন।
বিধানসভার একটি সূত্র জানাচ্ছে, বুধ এবং বৃহস্পতিবার তৃণমূল এবং বিজেপির ধর্না-পাল্টা ধর্না হয় বিধানসভায়। বুধবার সেখানে হাজির ছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নেতৃত্বে বিধানসভার অম্বেডকর মূর্তির পাদদেশে ধর্নায় বসেন শাসকদলের মন্ত্রী, বিধায়কেরা। ওই একই সময়ে তৃণমূলের ধর্নাস্থল থেকে মাত্র ৫০ মিটার দূরে বিধানসভার সিঁড়িতে বসে পাল্টা বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন বিজেপি বিধায়কেরা। তুলেছিলেন সরকার-বিরোধী স্লোগান। তৃণমূল বিধায়কেরা জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার সময়েও বিজেপি শিবির থেকে স্লোগান শোনা যাচ্ছিল বলে অভিযোগ।
এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জাতীয় সঙ্গীত অবমাননার অভিযোগ তোলেন। পরে বিধানসভার পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, উপমুখ্যসচেতক তাপস রায় ১২ জন বিজেপি বিধায়কের বিরুদ্ধে বিধানসভার স্পিকারের কাছে একটি অভিযোগপত্র জমা দেন। ওই ১২ জনের তালিকায় বিজেপি থেকে তৃণমূলে যোগ দেওয়া আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলালের নামও ছিল। পরে তা তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়।
বুধবারের পর বৃহস্পতিবারেও বিধানসভায় অনুরূপ ঘটনা ঘটে। সে দিনও একটি চিঠি যায় স্পিকারের কাছে। স্পিকার দু’দিনের দু’টি চিঠি লালবাজারে পাঠিয়ে দেন। তার পরেই হস্তক্ষেপ করে পুলিশ। শুক্রবার জানা গিয়েছিল, বিজেপির সাত জন বিধায়ককে লালবাজারে ডাকা হয়েছে। তাঁরা হলেন শঙ্কর ঘোষ, সুদীপ মুখোপাধ্যায়, মনোজ টিগ্গা, দীপক বর্মন, নীলাদ্রি শেখর দানা, বঙ্কিম ঘোষ এবং শিখা চট্টোপাধ্যায়। পরে জানা যায়, মিহির গোস্বামী, মালতী রায় রাভা এবং চন্দনা বাউড়িকেও নোটিস দেওয়া হয়েছে। দলীয় বিধায়কদের বিরুদ্ধে এই পুলিশি পদক্ষেপ আটকাতে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হবেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বিধায়কদের বিরুদ্ধে এফআইআর খারিজের বিষয়ে তিনি আইনি শলাপরামর্শ শুরু করেছেন বলে বিজেপি পরিষদীয় দলের সূত্রে খবর।
নোটিস পাওয়া এক দল বিধায়ককে সোমবার লালবাজারে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে। আর এক দল বিধায়ককে মঙ্গলবার লালবাজারে তলব করা হয়েছে। সেই তলবের পরেই বিধানসভায় এসে যাবতীয় ঘটনার তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহের কাজ করেছে কলকাতা পুলিশ। ঘটনার পরে বিধানসভায় এসে দু’বার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলেছেন কলকাতা পুলিশের ডিসি সেন্ট্রাল দীনেশ কুমার। বৃহস্পতিবার ডিসি সেন্ট্রালের সঙ্গে বিধানসভায় এসেছিলেন জয়েন্ট সিপি মীরাজ খালিদ এবং আরও এক ডিসি (এনফোর্সমেন্ট) রাহুল দে। শুক্রবার বিধানসভায় কলকাতা পুলিশের গতিবিধি সে ভাবে চোখে পড়েনি। কিন্তু শনিবার জাতীয় সঙ্গীতের অবমাননার মামলার তদন্তের গতি বৃদ্ধি করতে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করেছে তারা।