এ দিন সকালে ইডি-র অফিসে হাজিরা দিলেন শোভনবাবু।
এর আগে বেশ কয়েক বার হাজিরা এড়িয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকালে শেষমেশ ইডি-র দফতরে হাজিরা দিলেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। এর আগে বুধবার হাজিরা দিয়েছিলেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ ওরফে ববি হাকিম। শোভন রাজ্যের দ্বিতীয় মন্ত্রী যিনি ইডি-র ডাকে সাড়া দিয়ে দেখা করলেন।
আরও পড়ুন: যাব না বলেও ইডি-র কাছে মন্ত্রী ববি
এ দিন সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে ইডি দফতরে আসেন শোভনবাবু। এ দিন রাত ৮টা ৪৫ মিনিট নাগাদ তিনি ইডি-র দফতর থেকে বেরোন। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, পুরভবনে নিজের অফিসে বসে ছদ্মবেশী সাংবাদিক ম্যাথু স্যামুয়েলের কাছ থেকে শোভন চট্টোপাধ্যায় টাকার বান্ডিল নিচ্ছেন, সম্পাদিত ও অসম্পাদিত ফুটেজে এটা স্পষ্ট দেখা গিয়েছে। ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনের আগে শোভনবাবু এই ৫ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। ওই নির্বাচনে তিনি ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রে দলীয় প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্ট ছিলেন। ইডি-র তদন্তকারীদের কথায়, মূলত ওই টাকা তিনি কোন খাতে খরচ করেছেন, তা জানতে চাওয়া হবে। নির্বাচন কমিশনে দেওয়া খরচের হিসেবে ওই টাকার উল্লেখ রয়েছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখা হবে। যদিও ইডি দফতর থেকে বেরোনোর পর তিনি তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং তদন্তকারীদের সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দেন।
নারদ কাণ্ডে শোভনবাবুকে প্রথম বার ডাকা হয়েছিল ১০ জুলাই। কিন্তু, সেই সময় শোভনবাবুর হাজিরা দেননি। বরং প্রতিনিধি আইনজীবী মানসী নায়ারের মাধ্যমে নিজের বার্তা ইডি অফিসারদের কাছে পাঠিয়ে দেন। সেখানে তিনি হাজিরা না দেওয়ার কারণ হিসাবে উত্তর ২৪ পরগনায় সাম্প্রতিক অশান্তির কথা উল্লেখ করেন। রাজ্যের আইন শৃঙ্খলার পরিস্থিতি ভাল নয় বলেই তিনি যেতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন তদন্তকারীদের। প্রথমে চার সপ্তাহ ও পরে ই-মেল করে আরও দুই সপ্তাহ সময় চেয়ে নিয়েছিলেন তিনি। কলকাতার মেয়রের সঙ্গে উত্তর ২৪ পরগনার আইন-শৃঙ্খলার কী সম্পর্ক, তা নিয়ে সে বার প্রশ্ন তুলেছিল ইডি।
আরও পড়ুন: ফের বিজেপিকে ভারত ছাড়া করার ডাক মুখ্যমন্ত্রীর
এর পরে ইডি ফের তাঁকে ২৫ জুলাই হাজির থাকার জন্য নতুন করে সমন পাঠায়। কিন্তু সে বারও তিনি চিঠি পাঠিয়ে জানিয়ে দেন, আসতে পারবেন না। কারণ? বঙ্গোপসাগরের উপরে নিম্নচাপ! মেয়র দাবি করেছিলেন, ওই নিম্নচাপের জেরে দিন কয়েক ধরে টানা বৃষ্টিতে কলকাতার বেশ কিছু এলাকা জলমগ্ন। শহরের নিকাশি ব্যবস্থা ভাল নয়। বহু মানুষ অসুবিধার মধ্যে রয়েছেন। কলকাতার মেয়র হিসেবে তাঁর প্রাথমিক কর্তব্য, তাঁদের পাশে দাঁড়ানো। ফলে, এখনই তাঁর পক্ষে ইডি-র দফতরে হাজিরা দিতে যাওয়া সম্ভব নয়। নতুন করে আবার ৪ সপ্তাহ সময় চেয়েছিলেন তিনি।
সেই চিঠি পাওয়ার পরেই মেয়রকে ফের ই-মেল করে অগস্টের প্রথম সপ্তাহে হাজির থাকার জন্য বলে ইডি। বার বার ডাকা সত্ত্বেও না-এসে অসহযোগিতা করছেন বলে, তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার জন্য আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার আইনি সংস্থানের কথাও মনে করিয়ে দেন ইডি কর্তারা। এমনকী, সরাসরি তাঁকে গ্রেফতারও করা যায় বলেও ওই কর্তারা মন্তব্য করেন।
কিন্তু, তৃতীয় বার ডাকার পর শেষমেশ দেখাই করলেন মেয়র শোভনবাবু।