এই ধরনের ঘটনা রেল পুলিশের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন সমস্যার সুরাহার পাশাপাশি রেল সফরে উন্নততর নিরাপত্তা পরিষেবা দেওয়ার জন্য কলকাতা মেট্রোপলিটন এলাকার সব রেল থানা নিয়ে একটি রেল পুলিশ কমিশনারেট গঠনের তাগিদ অনুভর করছেন রেল পুলিশের শীর্ষ কর্তারা।
ফাইল চিত্র।
কামরাটি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত। অথচ সেই কামরায় উঠেই এক যুবক বিনা বাধায় এক তরুণীকে মারধর করে মাসখানেক আগে। এটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। যাত্রী-সুরক্ষার বড়াই করে রেল ঢাকঢোল পেটালেও চলন্ত ট্রেনে যৌন নিগ্রহ বা ছিনতাই হলে রেল পুলিশের দেখা পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ ওঠে আকছার।
এই ধরনের ঘটনা রেল পুলিশের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন সমস্যার সুরাহার পাশাপাশি রেল সফরে উন্নততর নিরাপত্তা পরিষেবা দেওয়ার জন্য কলকাতা মেট্রোপলিটন এলাকার সব রেল থানা নিয়ে একটি রেল পুলিশ কমিশনারেট গঠনের তাগিদ অনুভর করছেন রেল পুলিশের শীর্ষ কর্তারা। সেই কমিশনারেট আরও সংগঠিত ভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোকাবিলার সহায়ক হবে বলে আশা করছেন তাঁরা। ইতিমধ্যেই বিষয়টি নবান্নে রাজ্য পুলিশের শীর্ষ মহলকে জানানো হয়েছে। সেখান থেকে সবুজ সঙ্কেত মিললেই আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবের আকারে রেল পুলিশ কমিশনারেট গড়ার বিষয়টি পেশ করা হবে। গোটা দেশের মধ্যে এখন একমাত্র মুম্বইয়ে রেল পুলিশ কমিশনারেট রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে বর্তমানে সাত-সাতটি পুলিশ কমিশনারেট থাকলেও রেল পুলিশ এলাকায় একটিও নেই।
রাজ্যে রেল পুলিশের থানার সংখ্যা এখন ৪৬। রেল-জেলা চারটি— হাওড়া, শিয়ালদহ, শিলিগুড়ি ও খড়্গপুর। প্রতিটির দায়িত্বে আছেন এক জন রেল পুলিশ সুপার। মাথায় রয়েছেন এক জন ডিআইজি, এক জন আইজি এবং এক জন ডিজি। রেল পুলিশ সূত্রের খবর, পরিকল্পিত ‘কলকাতা মেট্রোপলিটন এরিয়া পুলিশ কমিশনারেট’-এর অধীনে হাওড়া ও শিয়ালদহ রেল পুলিশ জেলার ১২টি থানাকে রাখতে চাইছেন কর্তারা। তার মধ্যে থাকার কথা হাওড়া, শিয়ালদহ, নৈহাটি, দমদম, বালিগঞ্জ, চিৎপুর, যাদবপুর, শালিমার, বেলুড়, শেওড়াফুলি, ব্যান্ডেল, কামারকুন্ডুর রেল পুলিশ থানা। কর্তাদের ভাবনা অনুযায়ী আইজি পদমর্যাদার কোনও অফিসার হবেন রেল পুলিশ কমিশনার। তাঁর অধীনে থাকবেন এক জন ডিআইজি বা যুগ্ম কমিশনার। হাওড়া ও শিয়ালদহ দু’টি ডিভিশনে দু’জন ডেপুটি কমিশনার থাকবেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী পরিকল্পিত নতুন কমিশনারেটের সদর দফতর হবে দমদম রোডে, যেখানে এখন রেল পুলিশের কর্তারা বসেন।
রাজ্যের রেল পুলিশের কর্তারা জানান, অপরাধের ঘটনা কমাতে এবং যাত্রী-সুরক্ষার কথা মাথায় রেখেই এই পরিকল্পনা চলছে। এতে যেমন নিচু তলার উপরে নজরদারি বাড়ানো যাবে, তেমনই হাওড়া-শিয়ালদহের মতো সদাব্যস্ত স্টেশনগুলিতে জোরদার হবে পুলিশি ব্যবস্থা। পরিকল্পিত কমিশনারেট এলাকার বাইরে থাকা রেল পুলিশ থানাগুলির জন্য বেশ কয়েকটি রেল পুলিশ জেলা গড়া হবে। শিয়ালদহ রেল পুলিশ জেলার বাকি যে-সব থানা ও ফাঁড়ি থাকছে, সেই বারুইপুর, সোনারপুর, বারাসত, রানাঘাট, ডায়মন্ড হারবার, কৃষ্ণনগর, বনগাঁ, বহরমপুরকে নিয়ে দক্ষিণবঙ্গ রেল পুলিশ জেলা গড়ার কথা। হাওড়া রেল পুলিশ জেলার অধীনে থাকা বর্ধমান, সিউড়ি, কাটোয়ার মতো অবশিষ্ট রেল থানাগুলিকে নিয়ে গঠিত হবে নতুন আসানসোল রেল পুলিশ জেলা। রেল পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “সব কিছুই এখনও রয়েছে চিন্তাভাবনার স্তরে। ট্রেনযাত্রীদের উন্নত পরিষেবা দেওয়ার লক্ষ্যে আমরা নতুন কিছু করতে চাইছি।’’