ফাইল চিত্র।
পশ্চিমবঙ্গ সরকার কেএলও সদস্যদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়ে যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, তা নেবেন না বলে জানিয়েছেন কেএলও প্রধান জীবন সিংহ। পুত্র দেবরাজ সিংহ মারফত জীবন জানিয়ে দেন, এত বছর ধরে জঙ্গলে জীবন কাটিয়ে, খোলা আকাশের নীচে শোয়ার পরে এখন আড়াই হাজার টাকা ঘর ভাড়ার জন্য তাঁরা পশ্চিমবঙ্গে ফিরবেন না। তিনি জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকার ও অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মার আন্তরিক আহ্বানে সাড়া দিয়ে তিনি শান্তি আলোচনায় রাজি হয়েছেন। কিন্তু অসমের সদিচ্ছা ও সম্মানেরসঙ্গে বঙ্গের প্রলোভনের রাজনীতির ফারাক রয়েছে। বাংলার এই প্রস্তাবকে তিনি কেএলও-র এত বছরের ‘সংগ্রাম’-এর পক্ষে অপমান বলে ব্যাখ্যা করেছেন।
যদিও কোচবিহার, আলিপুরদুয়ারের তৃণমূল নেতাদের কথায়, কেএলও জঙ্গি গোষ্ঠী। তাই তাদের নাশকতামূলক কাজকে সংগ্রাম বলা অর্থহীন।
সম্প্রতি বঙ্গ প্রশাসন জানিয়েছিল, আত্মসমর্পণকারীদের প্রথম তিন বছর আইনি প্রক্রিয়ায় থাকতে হবে। মামলার খরচ চালাবে রাজ্য সরকার। পুনর্বাসন বাবদ তারা এককালীন ৫০ হাজার টাকা ও তিন বছর ধরে মাসিক চার হাজার টাকা করে পাবে। দু'বছর পরে স্বনির্ভর হওয়ার জন্য পাবে দুই লক্ষ টাকা। অবশ্য আত্মসমর্পণকারীরা সরকারের দেওয়া চাকরি গ্রহণ করলে আর সেই টাকা দেওয়া হবে না।
জীবন ধর্মপুত্র মারফত জানিয়েছেন, তাঁরা পুনর্বাসনের লোভে নয়, কোচ-কমতাপুরিদের অধিকার অর্জনের জন্য লড়াই শুরু করেছিলেন। কেন্দ্র ও অসম সরকার সেই অধিকার নিয়ে আলোচনার জন্য আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাদের 'স্বৈরাতান্ত্রিক' মনোভাব নিয়ে টাকা ও হোমগার্ডের চাকরির কথা বলে সকলকে ফিরে আসতে বলেছে। তাদের আবেদনে কোথাও কোচ-রাজবংশীদের অধিকার নিয়ে আলোচনার প্রসঙ্গ নেই।
দেবরাজ বলেন, “বাবা ইতিমধ্যেই শান্তি আলোচনায় অংশ নেওয়া ও দিল্লি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পুনর্বাসন বা প্যাকেজ বা সরকার স্বীকৃত শিবিরের বিষয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত হবে।”
তৃণমূলের তরফে বলা হয়েছে, এর আগে প্রাক্তন কেএলও-দের মুক্তি দিয়ে মূল স্রোতে ফেরানোরব্যবস্থা এই সরকারই করেছিল। কুমারগ্রামের বাসিন্দা তথা তৃণমূলের আলিপুরদুয়ার জেলা সহ-সভাপতি প্রেমানন্দ দাস বলেন, “জীবন সিংহ-সহ বেশিরভাগ কেএলও নেতাই এ রাজ্যের বাসিন্দা। তা ছাড়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার দমন-পীড়ন নীতিতে বিশ্বাসী নয়। তাই উভয় পক্ষকে আরও সদর্থক ভূমিকা নিয়ে আলোচনার টেবিলে বসে প্যাকেজ-সহ সমস্ত সমস্যার সমাধানের রাস্তা বের করা উচিত।’’ সরকারের প্যাকেজ গ্রহণ করলে আর কোনও সমস্যা থাকবে না, বলেছেন তৃণমূলের কোচবিহার জেলার চেয়ারম্যান গিরীন্দ্রনাথ বর্মণও।