মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই।
রাজ্যে বিধানসভা ভোটের মুখে হিন্দি ভাষাভাষী মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার ভার দলের রাজ্যসভার সদস্য দীনেশ ত্রিবেদীকে দিল তৃণমূল। এই কাজে তাঁর সঙ্গে থাকবেন তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ বিবেক গুপ্ত। আজ হিন্দি দিবসে সকালেই এই হিন্দি সেল গঠন নিয়ে ভিডিয়ো মাধ্যমে একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন দীনেশ এবং বিবেক। তার আগে মুখমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইট করে বলেন, ‘হিন্দি দিবসে উষ্ণ শুভেচ্ছা। বাংলার মাটি সবাইকে নিয়ে চলার কথাই বলে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার হিন্দি শিক্ষা ও সংস্কৃতিকে শক্তিশালী করা এবং হিন্দিভাষী সম্প্রদায়ের কল্যাণের জন্য বিভিন্ন ভাবে উদ্যোগ হয়েছে।’ মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘সমস্ত ভাষার সামগ্রিক উন্নতির জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার হিন্দি, উর্দু, অলচিকি, রাজবংশী, কামতাপুরি, গুরুমুখির মতো ভাষাগুলিকে স্বীকৃতি দিয়েছে। আমি কেন্দ্রকে অনুরোধ করছি বাংলাকে শাস্ত্রীয় ভাষা তালিকার অর্ন্তভুক্ত করতে।’
রাজনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের সময় থেকেই রাজ্যে হিন্দিভাষী ভোটে টান লক্ষ্য করেছিল তৃণমূল। সেই কারণেই ২০১৮ সালে সেই সময়ে দলের বিধায়ক অর্জুন সিংহকে সামনে রেখে হিন্দিভাষীদের মধ্যে শক্তি বৃদ্ধির চেষ্টাও শুরু করেছিলেন মমতা। কিন্তু সেই কমিটি কাজে আসেনি। তাই দীনেশ ও বিবেককে সামনে রেখে কমিটি গড়ে বিভিন্ন জেলা ও ব্লক স্তরে হিন্দিভাষী মানুষের কাছে পৌঁছনোর পরিকল্পনা করেছে তৃণমূল। এ দিন এ সংক্রান্ত কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দীনেশ ও সভাপতি হিসেবে বিবেকের নাম অনুমোদন করেছেন মমতা।
হিন্দি বলয়ের দল বিজেপি-কে মাথায় রেখে রাজ্যের হিন্দি ভাষাভাষী মানচিত্রটির দিকে স্বাভাবিক ভাবেই নজর রাখছে তৃণমূল। কলকাতার দু’টি লোকসভা আসনের অন্তর্গত একাধিক বিধানসভা কেন্দ্রে হিন্দিভাষী ভোটের প্রভাব আছে। তা ছাড়াও বিধাননগর, উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুর, আসানসোল, ও উত্তরবঙ্গের কয়েকটি বিধানসভা আসনে হিন্দিভাষীরা গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুন: বিরোধী কণ্ঠ দমন চলছে লৌহমুষ্টিতে: সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি
আজ এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে অবশ্য বিবেক গুপ্ত বলেন, “বিজেপি হিন্দি ভাষার একচেটিয়া মালিকানা নিয়ে বসে নেই। তারা তাদের মতো কাজ করবে, আমরা আমাদের মতো করব।” দীনেশের কথায়, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারই সিদ্ধান্ত নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গে হিন্দি বিশ্ববিদ্যালয় করা হবে। তিনি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরই জানিয়েছিলেন, যে সব এলাকায় হিন্দি ভাষাভাষী বেশি, সেখানে সরকারি কর্মচারীরা হিন্দিতে কথা বলতে পারবেন। ফলে পশ্চিমবঙ্গে হিন্দি ভাষাভাষীদের জন্য কাজ করার চেষ্টা নতুন নয়।” তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে আজ তৃণমূল যখন হিন্দি নিয়ে সরব তখন প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও হিন্দি-দিবস উপলক্ষে টুইট করেছেন। অমিত শাহের কথায়, ‘হিন্দি ভারতীয় সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এই ভাষা শতাব্দীর পর শতাব্দী গোটা দেশকে একসঙ্গে জুড়েছে। স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় থেকেই দেশের ঐক্যের প্রতীক হিন্দি।’ তাঁর কথায়, নতুন শিক্ষানীতিতে হিন্দি এবং অন্যান্য ভাষার সমান্তরাল উন্নতি হবে।
হিন্দি নিয়ে এই উৎসবের মধ্যে কর্নাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এইচ ডি কুমারস্বামী টুইট করে জানিয়েছেন, এই হিন্দি দিবসের অনুষ্ঠান আসলে বিভিন্ন ভাষাভাষী সম্বলিত এই দেশে জোর করে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়া চেষ্টা। তাঁর কথায়, “ভারতে বিবিধ সংস্কৃতি, ভাষা এবং ঐতিহ্য রয়েছে। কিন্তু বহু ভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে হিন্দি চাপিয়ে দিতে। গর্বিত কন্নড়ভাষীরা এই হিন্দি দিবসের প্রতিবাদ করছে। কারণ এটা ভাষাগত ঔদ্ধত্যের প্রতীক।”