ব্যাঙ্কশাল কোর্টে জামিন পেলেন কৌস্তুভ বাগচী। ফাইল চিত্র।
জামিন পেলেন কংগ্রেসের আইনজীবী নেতা কৌস্তুভ বাগচী। শনিবার ব্যাঙ্কশাল আদালত তাঁকে এক হাজার টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে জামিন দিল। তাঁর জামিনের পক্ষে আদালতে সওয়াল করেন আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য-সহ অন্য আইনজীবীরা। তাঁরা অবিলম্বে কৌস্তুভকে ব্যক্তিগত বন্ডে জামিন দেওয়ার দাবি জানান। সরকারি কৌঁসুলি আদালতে জানান, কৌস্তুভের ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ মন্তব্যের জন্য দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে কৌস্তুভের আইনজীবীরা প্রশ্ন তোলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতার করছে না কেন?
বিকাশরঞ্জন আদালতে কংগ্রেস নেতার জামিনের পক্ষে সওয়াল করে বলেন, “পুলিশ মাঝরাতে বাড়ি চলে যাচ্ছে। এ বার তো বিচারকদের বাড়িও চলে যাবে।” নোটিস ছাড়াই পুলিশ কীভাবে কৌস্তুভকে গ্রেফতার করল, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। সুপ্রিম কোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও পুলিশ মধ্যরাতে অভিযুক্তের বাড়ি গেল কীভাবে, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। মাঝে দুই পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে বিবাদের জেরে আদালতকক্ষ ছেড়ে বেরিয়ে যান ব্যাঙ্কশাল আদালতের বিচারক।
হুমকি এবং অশান্তি ছড়ানোর অভিযোগে শুক্রবার গভীর রাতে কৌস্তুভের ব্যারাকপুরের বাড়িতে হানা দেয় পুলিশ। অভিযোগ, ‘বিনা কারণে’ বড়তলা থানার পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করেছে। কৌস্তুভের গ্রেফতারির পর কংগ্রেস এবং বাম আইনজীবীরা তাঁর পাশে দাঁড়ান। প্রদেশ কংগ্রেস এবং বামমহল কৌস্তুভের গ্রেফতারির কড়া নিন্দা করে। তাঁরা জানায়, এই ঘটনা নিয়ে তাঁরা জাতীয় স্তরে আন্দোলন করবেন। পুলিশের বক্তব্য, কৌস্তুভকে হুমকি এবং অশান্তি ছড়ানোর দায়ে গ্রেফতার করা হয়েছে।
শনিবার গ্রেফতারের সময় কোন ধারায় তাঁকে গ্রেফতার করা হচ্ছে, তা নিয়েও পুলিশের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় কৌস্তুভের। সকালের দিকে পুলিশের নতুন বাহিনী যায় তাঁর বাড়িতে। পরে সেখানেই গ্রেফতার করা হয় এই আইনজীবী নেতাকে। গ্রেফতারির পর কৌস্তুভ বলেন, ‘‘বিনা কারণে আমায় হয়রানি করা হচ্ছে। এখানে আইনের শাসন নয়, শাসনের আইন চলছে। আমায় গ্রেফতার করায় আমার জয় হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী ভয় পেয়ে গিয়েছেন!’’
বৃহস্পতিবার মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘি উপনির্বাচনে কংগ্রেসের জয়ের পরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিছু মন্তব্য করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন অধীরের কন্যার আত্মহত্যা এবং তাঁর গাড়িচালকের মৃত্যু নিয়ে তিনি ‘অনেক কথা’ জানেন। তিনি ‘মুখ খুললে’ বিপদ হবে! তার জেরেই শুক্রবার পাল্টা সাংবাদিক বৈঠক করেন কৌস্তুভ। সেখানে তিনি তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রাক্তন আমলা দীপক ঘোষের একটি বইয়ের প্রসঙ্গ তুলে মুখ্যমন্ত্রীকে ‘ব্যক্তি আক্রমণ’ করেন বলে অভিযোগ। শনিবার কংগ্রেসের মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায় জানান, সেই কারণেই কলকাতা পুলিশ কৌস্তুভকে গ্রেফতার করেছে!
কৌস্তুভ তাঁর সাংবাদিক বৈঠকে জানান, তিনি দীপকের লেখা বইয়ের ‘সফ্ট কপি’ ছড়িয়ে দেবেন। আরও বলেছিলেন, এর জন্য তাঁর বা তাঁর কোনও সতীর্থের কোনও ক্ষতি হলে তার জন্য ‘দায়ী’ থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। তিনি বলেছিলেন, “দুটো হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর দিয়েছি। দীপক ঘোষ মমতাকে নিয়ে যা লিখেছিলেন, তার সফ্ট কপি চাইলেই যে কেউ পাবেন।” পাশাপাশিই তিনি দাবি করেছিলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য হুমকি ফোন আসছে। আমার বা আমার কোনও সতীর্থের কিছু হলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দায়ী থাকবেন।”