(বাঁ দিকে) অপর্ণা সেন। কবীর সুমন (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
পঞ্চায়েত ভোটে হিংসার অভিযোগ তুলে প্রতিবাদ জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে খোলা চিঠি লিখেছিলেন অভিনেত্রী অপর্ণা সেন-সহ বিশিষ্টজনদের একাংশ। এ বার তারই জবাব দিলেন বিশিষ্টজনদের অন্য একটা অংশ। বুধবার প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক বৈঠক করে পাল্টা বিবৃতি দিয়েছেন তাঁরা। প্রশ্ন তুলেছেন, বাংলার পঞ্চায়েত ভোটে অশান্তি কবে হয়নি? বুধবারের ওই সাংবাদিক বৈঠকে গায়ক কবীর সুমন ছাড়াও ছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু, চিত্রশিল্পী তথা প্রাক্তন রাজ্যসভার সাংসদ যোগেন চৌধুরী, লেখক আবুল বাশার, নাট্যব্যক্তিত্ব অর্পিতা ঘোষ প্রমুখ। এমনিতে বিদ্বজ্জনদের এই অংশটি ‘তৃণমূল ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত। বুধবার রাজ্যের উন্নয়নকে সামনে রেখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের ভূয়সী প্রশংসাও করেন তাঁরা। একই সঙ্গে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে সরানোর ডাকও দেন বিদ্বজ্জনদের ওই অংশটি।
গত ২০ জুলাই, বৃহস্পতিবার ভারতসভা হলে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা একটি সংগঠনের আলোচনাচক্রে মমতার উদ্দেশে খোলা চিঠি পাঠ করেন অপর্ণা। পরে তিনি বলেছিলেন, ‘‘এই পরিবর্তন আমরা কেউ চাইনি।’’ সেই বক্তব্যের রেশ টেনে বুধবার সুমন বলেছেন, ‘‘যাঁরা বলছেন, এই পরিবর্তন চাইনি, তাঁদের কাছে আমার প্রশ্ন, ঠিক কোন পরিবর্তন চেয়েছিলেন আপনারা?’’ সুমনের মতে, বাংলার ভোটে অশান্তি নতুন নয়। পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতেও তাই নতুন কিছু দেখেননি সুমন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা যারা ভোটে লড়াই করেছি, তারা জানি ভোট হয় না। ভোট করানো হয়। জন্ম থেকে দেখে আসছি, পঞ্চায়েতে নল (পড়ুন বন্দুকের নল) দিয়ে ভোট করানো হয়। আগেও তেমন ঘটনা ঘটত, এখনও ঘটছে।’’
কলকাতা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক বৈঠকে কবীর সুমনরা। —নিজস্ব চিত্র।
মমতা সরকারের উন্নয়নমূলক দিকগুলি দেখিয়ে সুমন বলেছেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের সঙ্গে সব বিষয়ে আমি একমত না-ও হতে পারি। কিন্তু যে ভাবে এখানে হাসপাতাল, রাস্তাঘাটের সৌন্দর্যায়ন হয়েছে, তাতে বলি উনি যথেষ্ট ভাল কাজ করেছেন। আমাদের রাজ্যে এখন মমতা ও অ-মমতা মেরুকরণ হয়ে গিয়েছে। আমি মহাশ্বেতা দেবীকে উদ্ধৃত করে বলি, ‘মমতার বুকে মাথা রেখে কাঁদা যায়’।’’
লেখক আবুল বাশারের মতে, সমাজের নিম্ন শ্রেণিকে সুরক্ষা দিয়েছেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘মমতার বিশেষত্ব, তিনি নিম্ন শ্রেণিকে নিরাপদে রেখেছেন। তাঁদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা দিয়েছেন। মমতা যে কর্মযজ্ঞে নেমেছেন, তাতে বিঘ্ন ঘটাবেন না। দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা দরিদ্রতম মুখ্যমন্ত্রীকে কাজ করতে দিন।’’
শিল্পী যোগেন জানিয়েছেন, নিউটাউনে শিল্পকলা সংগ্রহের মিউজিয়াম করার জন্য ১০ একর জমি দিয়েছেন মমতা। স্বাধীনতার পর থেকে এমন দানের নজির আর নেই বলে দাবি তাঁর।
ঘটনাচক্রে, সুমনদের বিবৃতি অপর্ণাদের চিঠির সম্পূর্ণ বিপরীত। অপর্ণারা পঞ্চায়েত হিংসার জন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে মমতাকেই ‘দায়ী’ করেছিলেন। অবিলম্বে রাজ্যে নিরপেক্ষ প্রশাসনিক ব্যবস্থা চালু করার আবেদনও জানিয়েছিলেন তাঁরা। অপর্ণা অবশ্য শুধু তৃণমূল নয়, সব রাজনৈতিক দলকেই ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ বলে দাবি করেন। তাঁদের বক্তব্যের পাল্টা দিয়ে রাজ্যের শাসক দলের পাশে দাঁড়িয়ে বিপরীত অবস্থান স্পষ্ট করলেন সুমন-সহ অন্যেরা।