বিচারপতি অমৃতা সিংহ। —ফাইল চিত্র।
বেআইনি ভাবে তৈরি বাড়ি ভেঙে দিলে এলাকায় রক্ত ঝরবে বলে আদালতকে জানিয়েছিল পুরসভা। শুনে বিস্মিত বিচারপতির প্রশ্ন, এই ভয়ে কি আইন পথভ্রষ্ট হবে? অশান্তির ভয়ে কি মান্যতা দিতে হবে বেআইনি নির্মাণকে?
বেআইনি নির্মাণ সংক্রান্ত একটি মামলায় সোমবারই কলকাতা হাই কোর্ট ভর্ৎসনা করেছিল কলকাতা পুরসভাকে। প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম এক লক্ষ টাকা জরিমানা দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন পুরসভা কর্তৃপক্ষকে। এর পরেই মঙ্গলবার কলকাতা সংলগ্ন ব্যারাকপুরের পুরসভার একটি মামলা ওঠে হাই কোর্টে। বিচারপতি অমৃতা সিংহের এজলাসে মামলাটির শুনানি ছিল। সেখানেই বেআইনি নির্মাণ ভাঙার ক্ষেত্রে ব্যারাকপুর পুরসভার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি। তিনি বলেন, ‘‘বেআইনি নির্মাণ রয়েছে জেনেও পুরসভা চুপ করে থাকতে পারে না। বেআইনি নির্মাণ ভাঙতে যে কোনও মূল্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা উচিত।’’
ব্যারাকপুর উত্তর পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডে বেআইনি নির্মাণ এবং দখলের অভিযোগ ওঠে কয়েক জনের বিরুদ্ধে। ওই পুরসভায় অভিযোগ জানান স্বপনকুমার দেবনাথ নামে এক ব্যক্তি। গত ২ জানুয়ারি পুরসভা খতিয়ে দেখে জানায়, ওই নির্মাণের ১২৪.৫৯ স্কোয়ার মিটার বেআইনি। আদালত পুরসভাকে নির্মাণটি ভাঙতে নির্দেশ দেয়। হাই কোর্টে পুরসভা পাল্টা জানায়, এই নির্মাণ ভাঙার ক্ষেত্রে বাধা রয়েছে।
কী বাধা, তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়ে আদালতকে পুরসভা বলেছিল, ‘‘তাদের পক্ষে ওই নির্মাণ ভাঙা সম্ভব নয়। ভাঙতে গেলে যে সংঘর্ষ হবে, তাতে রক্ত ঝরবে।’’ পুরসভার ব্যাখ্যা শুনে বিস্মিত বিচারপতি বলেন, ‘‘অশান্তির ভয়ে পুরসভা মুখ বুজে থাকবে? যা-ই হোক না কেন, বেআইনি নির্মাণ থাকতে পারে না। আইন মেনে তা ভাঙতেই হবে।’’
এর পরেই ব্যারাকপুরে বেআইনি নির্মাণ ভাঙার নির্দেশ দিয়ে বিচারপতি সিংহ বলেন, ‘‘বেআইনি নির্মাণ এবং দখলদারি উচ্ছেদ করতে সব রকম পদক্ষেপ করবে পুলিশ। ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট এবং নোয়াপাড়া থানাকে ভাঙার কাজ শুরু করতে হবে। আগামী ২৪ জানুয়ারি আদালতে এই ভাঙার কাজ কত দূর এগোল, তার রিপোর্ট দিতে হবে।’’