কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
খাতায়কলমে তাঁরা সংস্থার ডিরেক্টর। কিন্তু সর্বোচ্চ পদে থেকেও সংস্থার আয়-ব্যয়, এমনকি কাজের ধরনটুকু পর্যন্ত তাঁরা জানেন না! দু’টি সংস্থার এমন পাঁচ ডিরেক্টরের বিরুদ্ধে ইডি তদন্তের নির্দেশ দিলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। ওই পাঁচ ডিরেক্টরকে বৃহস্পতিবারই জিজ্ঞাসাবাদ করতে বলা হয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থাকে। ইডির পাশাপাশি সিরিয়াস ফ্রড ইনভেস্টিগেশন অফিসের (এসএফআইও) আধিকারিকদেরও এই ঘটনার তদন্ত করতে বলেছেন বিচারপতি। জানিয়েছেন, প্রয়োজনে রাত ১০টা পর্যন্ত তিনি আদালতে থাকবেন।
ডেলটা লিমিটেড এবং ওলিসা রিয়্যালিটি প্রাইভেট লিমিটেড নামক দুই সংস্থার বিরুদ্ধে কয়েক জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী আদালতে মামলা করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, সংস্থার তরফে তাঁদের প্রাপ্য প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা দেওয়া হচ্ছে না। ওই মামলাতেই দুই সংস্থার পাঁচ জন ডিরেক্টরকে তলব করেছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার তাঁরা আদালতে হাজির হয়েছিলেন। বিচারপতি তাঁদের সংস্থা সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন করেন। কিন্তু তাঁরা কোনও প্রশ্নেরই উপযুক্ত জবাব দিতে পারেননি।
বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, দুই সংস্থা সম্পর্কে প্রায় কিছুই জানেন না এই পাঁচ ডিরেক্টর। সংস্থার আয়-ব্যয়, কার্যপ্রণালী সম্পর্কে কোনও প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি তাঁরা। জুট মিলের সুপারভাইজ়ার থেকে তাঁরা ডিরেক্টর হয়েছেন। কারা ডিরেক্টর হিসাবে তাঁদের নাম প্রস্তাব করেছেন, তা-ও বলতে পারেননি। পাঁচ ডিরেক্টরকে হাই কোর্টের শেরিফের অফিসে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘এই পাঁচ জন এখনও কোনও অপরাধ করেননি বলে মনে হচ্ছে। তবে জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন। হতে পারে, এঁদের বলির পাঁঠা করা হচ্ছে। এঁদের সামনে রেখে পিছন থেকে কেউ কাজ করছেন। এঁরা চাইলে পদত্যাগ করতে পারেন।’’ তবে পাঁচ জনকে এখনই গ্রেফতার করার প্রয়োজন নেই বলেও জানিয়েছেন বিচারপতি। শেরিফের প্রতিনিধিকে তাঁর নির্দেশ, পাঁচ ডিরেক্টরের সম্মানহানি যাতে না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
এসএফআইও-কে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় আগামী দু’ঘণ্টার মধ্যে প্রাথমিক ভাবে অনুসন্ধান শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদ করে কী পাওয়া গেল, তা আদালতকে জানাতে হবে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার মধ্যে ইডিকেও তা জানাবে এসএফআইও। বিচারপতি বলেন, ‘‘প্রয়োজনে রাত ১০টা পর্যন্ত আমি আদালতে থাকব।’’
এই দুই সংস্থার নেপথ্যে পাট শিল্পের ‘বড় বড়’ মাথা রয়েছেন বলে মন্তব্য করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘দুই সংস্থার পাঁচ ডিরেক্টরকে এখন থেকে হাই কোর্টের শেরিফের অফিসেই জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। সেখানে কোনও আইনজীবী প্রবেশ করতে পারবেন না। জিজ্ঞাসাবাদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেউ মোবাইল ফোন ফেরত পাবেন না। প্রাথমিক ভাবে কী পাওয়া গেল, আমাকে জানাতে হবে। এর নেপথ্যে পাট শিল্পের বড় বড় মাথা রয়েছেন। তাঁরা আমার বদলিও করতে পারেন। লক্ষ লক্ষ টাকার দুর্নীতি হচ্ছে। এ সব আমি বরদাস্ত করব না।’’
এসএফআইও-র কাছ থেকে তথ্য নিয়ে বৃহস্পতিবারের মধ্যেই তদন্ত শুরু করতে হবে ইডিকে। বিচারপতি জানিয়েছেন, মামলার তদন্তের প্রয়োজনে যে কোনও সময় আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারবে ইডি।