বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এবং তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখ (বাঁ দিক থেকে)। —ফাইল চিত্র।
আবার সন্দেশখালিকাণ্ডে মন্তব্য করলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এ বার একটি অনুষ্ঠান থেকে রাজ্য সরকারকেও নিশানা করলেন তিনি। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘যাঁর খোঁজে সন্দেশখালি গিয়েছিল ইডি, আমি মনে করি, রাত ১২টার মধ্যে তাঁর ইডি দফতরে হাজিরা দেওয়া উচিত।’’
শুক্রবার সকালে উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালিতে রেশন দুর্নীতির তদন্তে তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখের বাড়িতে হানা দেয় পাঁচ ইডি আধিকারিকের একটি দল। সরবেড়িয়া গ্রামে শাহজাহানের বাড়িতে ইডি আধিকারিকেরা পৌঁছনোর আগেই ঘিরে ফেলেন গ্রামবাসীরা। তার মধ্যে তৃণমূল নেতার বাড়ির সামনে গিয়ে তাঁকে ডাকাডাকি করেন ইডি আধিকারিকরা। ভিতর থেকে সাড়াশব্দ না মেলায় দরজা ভাঙার চেষ্টা হয়। ঠিক সেই সময়েই তাঁদের ঘিরে ফেলে মারধর শুরু হয় বলে অভিযোগ। সরিয়ে দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় বাহিনীকেও। এর পর ইডি আধিকারিকদের ধাওয়া করে এলাকা ছাড়তে বাধ্য করেন শাহজাহানের অনুগামীরা। ভাঙচুর চলে গাড়িতে। সেই সময়েই তিন ইডি আধিকারিক জখম হন বলে খবর। তাঁদের সল্টলেকের বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা চলছে। এই ঘটনায় রাজ্য রাজনীতি তোলপাড়। বিরোধীদের সমালোচনায় পড়েছে শাসকদল।
সন্দেশখালির ঘটনার সমালোচনা শোনা গিয়েছে আদালতের ভিতর থেকেও। সকালে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের মন্তব্য ছিল, ‘‘রাজ্যপাল কেন ঘোষণা করছেন না যে, রাজ্যে সাংবিধানিক কাঠামো ভেঙে পড়েছে?” বিচারপতির এই মন্তব্যের পর রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস কড়া বার্তা দিয়েছেন রাজ্য সরকারকে। অন্য দিকে, বিচারপতির ওই মন্তব্যের পর বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে এক পঙক্তিতে ফেলে তাঁকে আক্রমণ করেছেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। যদিও বিকেলে আবারও এ নিয়ে মন্তব্য করতে শোনা গিয়েছে বিচারপতিকে। নদিয়ার কল্যাণীতে একটি অনুষ্ঠানে সন্দেশখালি প্রসঙ্গে বিচারপতি বলেন, তিনি চান যে সন্দেশখালির ওই তৃণমূল নেতা যেন শুক্রবার রাত ১২টার মধ্যে ইডি দফতরে হাজিরা দেন। এর পাশাপাশি সাংবাদিকরা আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন করতেই বিচারপতির পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘ রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা আছে বলে আপনাদের মনে হয়?’’ বিচারপতিকে রাজ্যের বিভিন্ন ‘দুর্নীতি’ মামলা নিয়েও মন্তব্য করতে শোনা গিয়েছে। তিনি বলেন, ৩৪ বছরের একটি সরকার প্রত্যক্ষ করেছে বাংলা। সেখানেও নানা ঘটনা ছিল। কিন্তু এখনকার মতো নয়। বিচারপতির কথায়, ‘‘এমন অসভ্যতার মুখোমুখি কখনও হতে হয়নি। শাক দিয়ে অনেক মাছ ঢাকার চেষ্টা হয়েছে। চার দিকে একটি অপসংস্কৃতির সুর ধ্বনিত হচ্ছে। তবে আমি বিশ্বাস করি, বাঙালি আবার আগের জায়গায় ফিরে যাবে।’’
বস্তুত, সন্দেশখালিতে ইডি আধিকারিকদের ‘বাধা দেওয়া’ এবং তাঁদের উপর ‘হামলা’র ঘটনায় আদালতে বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্ত। পুরো ঘটনা তিনি বিচারপতির সামনে বর্ণনা করেন। সব শুনে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে জানতে চান বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর প্রশ্ন, “পুলিশ কী করছিল, পুলিশ কি ঘটনাস্থলে যায়নি?” এর পর তাঁর মন্তব্য ছিল, ‘‘রাজ্যপাল কেন ঘোষণা করছেন না, রাজ্যে সাংবিধানিক কাঠামো ভেঙে পড়েছে?” তদন্তকারী সংস্থা আক্রান্ত হলে তদন্ত কী ভাবে হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। যদিও বিচারপতির এই ‘পর্যবেক্ষণ’কে কটাক্ষ করে তৃণমূল। কুণাল ঘোষের কথায়, ‘‘সিপিএম, বিজেপি, কংগ্রেস, অভিজিৎ গাঙ্গুলি— এরা সবাই এক সূত্রে বাঁধা। বিচারপতি গাঙ্গুলি, তাঁর কোন এক্তিয়ার আছে যে, চেয়ারে বসে এই ধরনের কথাবার্তাগুলি বলবেন!’’