সেপ্টেম্বরে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে জুনিয়র ডাক্তারদের অবস্থান। —ফাইল চিত্র।
দ্বিতীয় বার পূর্ণ কর্মবিরতি শুরু করার কি আদৌ প্রয়োজন ছিল? গত কয়েক দিন ধরেই এই নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বিভিন্ন মহলে। এমনকি চিকিৎসক মহলেও এই প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে শুরু করেছিল। বৃহস্পতিবার আরজি কর হাসপাতালের সিনিয়র ডাক্তারদের পরামর্শ নিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। সিনিয়রদের অনেকেই প্রস্তাব দিয়েছেন, পূর্ণ কর্মবিরতির পথ থেকে সরে এসে আন্দোলনের অন্য কোনও পন্থা বার করা হোক। কেউ কেউ আবার প্রস্তাব দিয়েছেন অন্তত আংশিক কর্মবিরতি প্রত্যাহার হোক। সিনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে বৈঠকের পর নিজেদের মধ্যে জিবি বৈঠকে বসেছিলেন আরজি করের জুনিয়র ডাক্তারেরা।
সিনিয়র ডাক্তারেরা যে পরামর্শ ও প্রস্তাব দিয়েছেন, তা নিয়ে আলোচনা করছেন জুনিয়রেরা। আরজি করের জিবি বৈঠকের পর রাতেই সবগুলি মেডিক্যাল কলেজের প্রতিনিধিদের নিয়ে পৃথক একটি জিবি বৈঠকও শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। পূর্ণ কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত থেকে কি সরে আসবেন তাঁরা? এই বৈঠকে কী সিদ্ধান্ত হয়, সে দিকেই আপাতত নজর চিকিৎসক মহলের।
সব মেডিক্যাল কলেজগুলিকে নিয়ে জিবি বৈঠকের আগে জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধি অনিকেত মাহাতোও জানিয়েছেন, কর্মবিরতির বদলে অন্য কী কী বিকল্প পন্থা হতে পারে, সেই নিয়ে আলোচনার জন্যই এই বৈঠক।
প্রসঙ্গত, ৩০ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর মামলার শুনানিতে জুনিয়র ডাক্তারদের আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংহ জানিয়েছিলেন, ওপিডি ও আইপিডি উভয় ক্ষেত্রেই জরুরি পরিষেবা দিচ্ছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। ইন্দিরা সুপ্রিম কোর্টে এই আশ্বাস দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরেই ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট’ বৈঠকে বসেছিল। প্রায় আট ঘণ্টার জিবি বৈঠকের পর পূর্ণ কর্মবিরতিতে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তাঁরা। এক দিকে যখন সুপ্রিম কোর্টে ইন্দিরা আশ্বাস দিয়েছেন, অন্য দিকে পর ক্ষণেই জুনিয়র ডাক্তারদের এই পূর্ণ কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত— এই ঘটনাগুলি কতটা প্রভাব ফেলতে পারে, তা নিয়েও চর্চা শুরু হয়েছে চিকিৎসক মহলে।
জুনিয়র ডাক্তারেরা যে ১০ দফা দাবি তুলেছিলেন, তার মধ্যে অন্যতম ছিল ‘হুমকি সংস্কৃতি’-র বিরুদ্ধে পদক্ষেপ। কর্মবিরতি প্রত্যাহার হবে কি না, সেই নিয়ে যখন চর্চা চলছে, ঘটনাচক্রে সেই সন্ধ্যাতেই আরজি কর হাসপাতালের আর্থিক দুর্নীতি মামলায় আশিস পাণ্ডেকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। ‘হুমকি সংস্কৃতি’-তে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধেও।
জুনিয়র ডাক্তারেরা যখন নির্যাতিতার বিচারের দাবিতে প্রথম বার কর্মবিরতি শুরু করেছিলেন, তখন থেকেই আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন সিনিয়র ডাক্তারেরা। প্রথম বারের কর্মবিরতির সময়ে রোগী পরিষেবায় জুনিয়র ডাক্তারদের অভাব অনেকাংশে পূরণ করেছিলেন সিনিয়র ডাক্তারেরা। অতিরিক্ত সময় কাজ করে রোগী পরিষেবা সচল রাখার চেষ্টা চালিয়েছেন সিনিয়রেরা। তবে দ্বিতীয় বারের পূর্ণ কর্মবিরতি ঘোষণার পর থেকে সিনিয়র ডাক্তারদের একাংশও আন্দোলনের বিকল্প পন্থা খোঁজার প্রস্তাব দিয়েছেন। সিনিয়রদের কারও কারও মতে, কর্মবিরতি ছাড়াও আন্দোলনকে জিইয়ে রাখার আরও অনেক পথ রয়েছে।
বৃহস্পতিবার আরজি করের সিনিয়র ডাক্তারদেরও কেউ কেউ বলেছেন, সরকারি হাসপাতালগুলিতে জুনিয়র ডাক্তারদের সাহায্য ছাড়া বিপুল রোগীর চাপ সামাল দিতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে তাঁদের। আন্দোলন জারি থাকলেও রোগীস্বার্থে কর্মবিরতি তুলে নেওয়া বা আংশিক শিথিল করার প্রস্তাব দিয়েছেন তাঁরা।
দ্বিতীয় বার পূর্ণ কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত ঘোষণার আগে যে আট ঘণ্টার জিবি বৈঠক হয়েছিল, সেখানও জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশ আপত্তি জানিয়েছিলেন। সূত্রের খবর, জিবি বৈঠকে পূর্ণ কর্মবিরতিতে ফেরার সিদ্ধান্ত সমর্থন করেননি অনেকেই। পূর্ণ কর্মবিরতিতে না গিয়ে বিকল্প কোনও পথে কি আন্দোলন জিইয়ে রাখা যায় না? এই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল সেই রাতের বৈঠকেও। দ্বিতীয় বার পূর্ণ কর্মবিরতি ঘোষণার সময় থেকেই এই সিদ্ধান্ত ঘিরে বার বার প্রশ্ন উঠেছে। বৃহস্পতিবার সিনিয়রদের সঙ্গে বৈঠক শুরুর আগে কিঞ্জল নন্দও জানিয়েছিলেন পূর্ণ কর্মবিরতির সিদ্ধান্তের পথ থেকে সরে দাঁড়ালে, কী হতে পারে আন্দোলনের বিকল্প পন্থা? সেই বিষয়টি নিয়ে চিন্তা ভাবনা চলছে ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্টের। এমন অবস্থায় সিনিয়রদের প্রস্তাব মেনে কি কিছুটা নমনীয় হবেন জুনিয়রেরা? জিবি বৈঠক শেষে কী বার্তা আসে, আপাতত সে দিকেই নজর সকলের।