(বাঁ দিক থেকে) অনিকেত মাহাতো, দেবাশিস হালদার এবং কিঞ্জল নন্দ। — ফাইল চিত্র।
আরজি কর আন্দোলনের আবহে শাসকবিরোধী যে স্বর উঠেছিল, তার প্রতিফলন দেখা যায়নি রাজ্যে সদ্যসমাপ্ত উপনির্বাচনে। ছ’টি আসনের ছ’টিতেই জিতেছে শাসকদল তৃণমূল। ভোটের ফলপ্রকাশের প্রায় ১০ দিন পর বুধবার তা নিয়ে মুখ খুললেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। তাঁরা প্রশ্ন তুললেন, কেন আরজি কর আন্দোলনকে ভোট-রাজনীতির মাপকাঠিতে ফেলে দেখা হচ্ছে?
বুধবার একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে ‘জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট’-এর তরফে। তাতে বলা হয়েছে, ‘‘এই ক’দিন আগে আমরা দেখলাম পশ্চিমবাংলায় ছ’টি আসনে উপনির্বাচন হল এবং সেই আসনগুলিতে শাসকদল জিতেছে বলে এক প্রকার ভাবে আমাদের নাগরিক আন্দোলনকে ব্যঙ্গাত্মক ভাবে আক্রমণ হল— বলা হল, ‘কী হল এত আন্দোলন করে, সেই তো শাসকদল জিতেই গেল!’ বার বার এই ভাবে আন্দোলনকে দলীয় রাজনীতির মাপকাঠিতে ফেলে দেওয়ার কদর্য প্রয়াসকে তীব্র নিন্দা আমরা আগেও জানিয়েছি, এখনও জানাচ্ছি।’’ জুনিয়র ডাক্তারদের সংগঠনের বক্তব্য, তাদের আন্দোলন স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় বদল, দুর্নীতি-হুমকি প্রথার বিরুদ্ধে। রাজনীতির সমীকরণকে এর সঙ্গে টেনে এনে আন্দোলনকে কালিমালিপ্ত করা চেষ্টা হচ্ছে বলেই তাদের অভিযোগ।
আগামী শুক্রবার স্বাস্থ্যভবন পর্যন্ত একটি মিছিলেরও ডাক দিয়েছে ‘জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট’। আরজি কর হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের চার্জশিটে রাজ্য সরকার কেন ছাড়পত্র দেয়নি এবং ‘হুমকি সংস্কৃতি’ (থ্রেট কালচার)-তে অভিযুক্ত চিকিৎসক অভীক দে-র বিরুদ্ধে কেন পদক্ষেপ করা হল না— মূলত এই দুই প্রশ্ন তুলে মিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছে।
জুনিয়র ডাক্তারদের সংগঠন জানিয়েছে, আগামী ৬ ডিসেম্বর, শুক্রবার দুপুর ৩টেয় ওয়েস্টবেঙ্গল মেডিক্যাল কাউন্সিলের সামনে জমায়েত করা হবে। তার পর সেখান থেকে মিছিল করে যাওয়া হবে স্বাস্থ্যভবন পর্যন্ত। মিছিলে অংশগ্রহণ করার জন্য চিকিৎসক-নার্স-সহ সকল স্বাস্থ্যকর্মীদের সংগঠন তো বটেই, সাধারণ মানুষের কাছেও আহ্বান জানানো হয়েছে।
আরজি করে ধর্ষণ-খুনের মামলায় অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে আগেই চার্জশিট জমা দিয়েছিল সিবিআই। সেই মামলায় বিচারপ্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। তার মধ্যেই আরজি করে আর্থিক দুর্নীতির মামলায় গত শুক্রবার সন্দীপ-সহ পাঁচ অভিযুক্ত এবং কয়েকটি সংস্থার বিরুদ্ধে ৮০ পাতার চার্জশিট জমা দেয় সিবিআই। কিন্তু অভিযোগ, রাজ্য সরকার ওই চার্জশিটে এখনও সম্মতি দেয়নি। সন্দীপ সরকারি আধিকারিক। সুতরাং, তাঁর বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করার জন্য আইনত রাজ্য সরকারের সম্মতির প্রয়োজন। চার্জশিটের ক্ষেত্রে ওই সম্মতি না থাকলে বিচারক চার্জশিট গ্রহণ না-ও করতে পারেন। তাতে মামলার চার্জগঠন ও বিচারপ্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছে ‘জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট’। তাদের বক্তব্য, রাজ্য সরকার প্রথম থেকেই যে সন্দীপদের ‘আড়াল’ করার চেষ্টা করছে, তা আরও একবার প্রমাণিত। সন্দীপদের আড়াল করে আসলে ‘সিন্ডিকেটরাজ’কে বহাল চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে তারা। শুধু তা-ই নয়, অভীকের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট জমা পড়ার পরেও কেন তাঁর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হল না, সেই প্রশ্নও তুলেছে ‘জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট’।
প্রসঙ্গত, ৯ অগস্ট আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে রাজ্য জুড়ে আন্দোলনের সময়েই মেডিক্যাল কাউন্সিলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। কাউন্সিলের নির্বাচিত সদস্য অভীক এবং পেনাল অ্যান্ড এথিক্যাল কমিটির মনোনীত সদস্য বিরূপাক্ষ বিশ্বাস কী ভাবে আরজি করের সেমিনার কক্ষে উপস্থিত ছিলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। পাশাপাশি, বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের পরীক্ষা ব্যবস্থা থেকে হুমকি প্রথা-সহ একাধিক দুর্নীতিতে তাঁরাই মূল পান্ডা বলেও অভিযোগ ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে। সেই সময়ে ওই দু’জনকে সমস্ত কাজকর্ম থেকে সরানোর নির্দেশিকা জারি করে কাউন্সিল। অভীক ও বিরূপাক্ষকে সাসপেন্ডও করে স্বাস্থ্য দফতর। গঠিত হয় তদন্ত কমিটি। আবার কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তদন্তের আওতাতেও রয়েছেন ওই দুই চিকিৎসক। এখন আরজি কর আন্দোলন ‘স্তিমিত’। সেই আবহে গত সোমবার মেডিক্যাল কাউন্সিলের বৈঠকে দেখা গিয়েছে অভীককে। তা নিয়েই ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ‘জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট’। তাঁকে ফেরানো ও বিরূপাক্ষের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তোলার প্রতিবাদে কাউন্সিলের সামনে অবস্থানও করেছে চিকিৎসকদের যৌথ মঞ্চ ‘জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অব ডক্টর্স’ (জেপিডি)।