আরজি কর হাসপাতালে জুনিয়র চিকিৎসকদের বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র।
ধর্মতলার অনশন মঞ্চ থেকে নিজেদের কাজে ফিরে গিয়েছেন ওঁরা। তার পরে বিভিন্ন সময়েই প্রশ্ন উঠেছে আগামীতে কোন পথে এগোবে আন্দোলন। যদিও ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্টের সদস্যরা বারবার জানিয়েছেন ন্যায় বিচারের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা রাজপথে থাকবেন। সেই সূত্র ধরেই আগামী ৯ নভেম্বর, আর জি কর কাণ্ডের তিন মাস পূর্ণ হওয়ার দিনে সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে নামার ডাক দিয়েছেন ফ্রন্টের সদস্যরা। ন্যায় বিচারের দাবিতে সেই নাগরিক মিছিল কলেজ স্কোয়ার থেকে শুরু হয়ে যাবে ধর্মতলা পর্যন্ত।
আর জি করের ঘটনার তদন্ত করছে সিবিআই। ইতিমধ্যেই তারা প্রথম চার্জশিট জমা দিয়েছে। তাতে খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় একমাত্র সঞ্জয় রায়কে অভিযুক্ত বলা হয়েছে। যদিও তা মানতে নারাজ জুনিয়র চিকিৎসকেরা। তাই, ৯ তারিখকে বিচার না পাওয়া এবং বিচারের নামে প্রহসনের নব্বই দিন বলে উল্লেখ করে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট। সকালে আর জি করে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়েছে। এর পরে সমস্ত মেডিক্যাল কলেজে ‘দ্রোহের গ্যালারি’ প্রদর্শিত হবে। ডাক্তারি পড়ুয়া থেকে সাধারণ মানুষও তাতে অংশ নিতে পারবেন। আন্দোলন সম্পর্কিত বিভিন্ন ছবি, পোস্টার, ব্যানার, কবিতা, আর্ট-ইনস্টলেশনের প্রদর্শনী চলবে। এই সবের মাধ্যমে আন্দোলনের বিভিন্ন মুহূর্ত ও মূল সুরকে ধরে রাখা হবে বলে জানাচ্ছেন ফ্রন্টের সদস্যরা।
আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা জুনিয়র চিকিৎসক অনিকেত মাহাতো বলেন, ‘‘তিন মাস অতিবাহিত হলেও সিবিআই এক জনকেই অভিযুক্ত বলেছে। যদিও এই ঘটনায় এক জন জড়িত থাকতে পারে বলে আমাদের মনে হয় না। ওই ঘটনার নেপথ্যের কারণ কী, তা আজও অস্পষ্ট। তাই ন্যায়বিচারের দাবিতে আন্দোলন জারি থাকবে।’’ জানা যাচ্ছে, ওই দিন শুধু শহরের রাজপথ নয়, জেলারও বিভিন্ন প্রান্তে সাধারণ মানুষকে ন্যায় বিচারের দাবিতে মিছিল, সমাবেশ, মোমবাতি মিছিল, প্রতিবাদ সভা আয়োজন করার জন্য সাধারণ মানুষকে আহ্বান জানিয়েছে জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট। সংগঠনের সদস্যরা বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, নির্যাতিতার ন্যায়বিচার এবং আর একটাও যেন এমন ঘটনা না ঘটে সেটা তাঁদের অঙ্গীকার। সেটিকে যেন রাজনৈতিক দলের ফাঁকা আওয়াজ ভেবে নেওয়া না হয়। নির্যাতিতার ন্যায়বিচার না নিয়ে তাঁরা আন্দোলন থেকে সরবেন না, রাজপথও ছাড়বেন না।
তবে, ডিসেম্বরের গোড়া থেকে স্নাতকোত্তর স্তরের পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। তাই, এখন যে কর্মসূচি হবে তাতে আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা জুনিয়র চিকিৎসকদের অনেককেই হয়তো দেখা না-ও যেতে পারে। তার অপব্যাখ্যা যেন না হয় সেটিও বারবার করে মনে করিয়ে দিয়েছেন ফ্রন্টের সদস্যরা। যেমন, আর জি করের নাক-কান-গলা বিভাগের স্নাতকোত্তর স্তরের তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়া আশফাকউল্লা নাইয়া বলেন, ‘‘আমরা কয়েক জন পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য পড়াশোনায় ব্যস্ত হলেও আন্দোলনের পথ থেকে সরে গিয়েছি তেমনটা একেবারেই নয়। ন্যায় বিচারের দাবিতে আন্দোলন চলছে এবং চলবেও। যাঁদের এখন পরীক্ষা নেই তাঁরা এখন আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।’’
সূত্রের খবর, আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সোমবার রাতে ভার্চুয়াল মাধ্যমে জিবি (জেনারেল বডি) বৈঠক করেন ফ্রন্টের সদস্যরা। সেখানে ৯ নভেম্বরের পাশাপাশি অন্যান্য কর্মসূচির বিষয়ে আলোচনা হয়। শহরের রাজপথে থাকার পাশাপাশি জেলা স্তরের মানুষের কাছেও পৌঁছে যেতে চান ফ্রন্টের সদস্যরা। সেই সমস্ত কর্মসূচির রূপরেখা নিয়েও আলোচনা হয়। আজ, মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের শুনানি পর্যবেক্ষণ করে, আগামীর সেই সমস্ত কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারেন ফ্রন্টের সদস্যরা।