শাসনে মজিদ মাস্টারকে ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে মঙ্গলবার ফের হুমকি দিলেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। পাঁচ বছর ধরে বাড়ি ছাড়া সিপিএম নেতা মজিদ আলিকে শাসনে ফেরাবেন বলে জানিয়েছিলেন দলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক গৌতম দেব। প্রত্যুত্তরে এ দিন শাসনে কয়েক হাজার কর্মী সমর্থকদের নিয়ে মিছিল করে তৃণমূল। পরে জনসভায় তৃণমূলের জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয়বাবু বলেন, “আগেও বলেছি, এই কথা নিয়ে যতই বিতর্ক হোক, আবারও বলছি মজিদ শাসনে ঢুকলে এলাকার মহিলারা আঁশ বঁটি নিয়ে তৈরি থাকবে!”
বছরপাঁচেক ধরে এলাকা ছাড়া হয়ে থাকার পরে শাসনে ঢুকে সম্প্রতি হেনস্থার শিকার হয়েছিলেন মজিদ। তাঁর বাড়ি-গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছিল। এর পরেই গৌতমবাবু বলেছিলেন, “মজিদকে আমরা শাসনে ঢোকাবই!” চ্যালেঞ্জ জানিয়ে জ্যোতিপ্রিয়বাবু সে দিনই পাল্টা বলেছিলেন, “যাঁদের ছেলে-মেয়েদের খুন করেছে মজিদ মাস্টার, সেই মহিলারা আঁশ বঁটি নিয়ে তৈরি আছে। এলাকায় ঢুকলে মেয়ে-বউরা কেউ ছেড়ে কথা বলবে না।” এ বার শাসনে গিয়েও একই হুমকি দিয়েছেন তিনি।
একদা খাস তালুক শাসন হাতছাড়া হওয়ার পরে সিপিএম অকেটাই কোণঠাসা। গৌতমবাবু অবশ্য বলেছিলেন, তৃণমূলের কিছু লোক হেনস্থা করলেও শাসনে বহু মহিলা-পুরুষ মজিদকে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন। তাই মানুষের জোরেই তাঁরা মজিদকে ফেরাবেন। আর তার পর থেকেই লাগাতার হুমকি দিয়ে চলেছেন জ্যোতিপ্রিয়বাবু। মন্ত্রী হয়েও কী ভাবে তিনি এমন কথা বলেন, তা নিয়ে বিতর্কও চলছে। হিংসার রাজনীতির প্রতিবাদ জানিয়ে বিজেপি বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য যেমন এ দিন বলেছেন, “একটা দলের রাজনৈতিক কর্মসূচি, আদর্শ বলে কিছু নেই! তাদের তো আঁশ-বটিই থাকবে!”
জেলার রাজনৈতিক শিবিরের ব্যাখ্যা, সারদা থেকে বর্ধমান-কাণ্ড, নানা ঘটনায় বিব্রত তৃণমূল গৌতমবাবুর ঘোষণাকেও ছোট করে দেখছে না। রাজনৈতিক ডামাডোলের বাজারে সংখ্যালঘু নেতা তথা দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মজিদকে বাড়ি ফিরিয়ে নিজেদের জায়গা পুনরুদ্ধারের চেষ্টায় নেমে পড়েছে সিপিএমও। এ সব আঁচ করেই মজিদকে আটকাতে শাসনে খাদ্যমন্ত্রীর এ দিনের কর্মসূচি বলে মনে করা হচ্ছে।
জেলার বিভিন্ন প্রান্তের তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা এ দিন জড়ো হয়েছিলেন শাসনে। আমিনপুর থেকে মিছিল শুরু হয়ে মজিদের বাড়ির এলাকা শাসন বাজার হয়ে সহরা গ্রামে শেষ হয়। সেখানে মঞ্চ থেকে জ্যোতিপ্রিয়বাবু আরও বলেন, “ক’দিন আগে শাসনে ঢোকার পরে আমাদের নেতাদের কাছে জানতে চাই, খুনি মজিদ কী করে ঢুকল? বুদ্ধ, বিমান, গৌতমেরা যদি মনে করে শাসনে মজিদকে ঢোকাবেই, তা হলে মানুষ তা প্রতিরোধ করবে।” বসিরহাটের সাংসদ ইদ্রিস আলি, বিধায়ক শীলভদ্র দত্ত, পার্থ ভৌমিকও একই সুরে বলেন, “খুনি মজিদকে ঢুকতে দেব না। প্রতিরোধ করবই।”
গৌতমবাবু বলছেন, শাসনে ঢোকাবেনই। জ্যোতিপ্রিবাবু বলছেন, আঁশ-বঁটি তৈরি আছে! কী করবেন তিনি? মজিদ বলেন, “গৌতমবাবু আমাকে শাসনে নিয়ে যাবেন। মন্ত্রী সেখানে আমার গলা কাটবেন। আমার মাথা ঢুকবে, ধড় পড়ে থাকবে! আর কী করব?”