State News

বক্তৃতার বাইরে ধনখড়ের কথা নথিতে যাবে না

রাজ্যপালের সঙ্গে সংঘাতের কারণেই এ বারের বাজেট অধিবেশনের সূচনাপর্বে বাড়তি সতর্ক থাকছে সরকার পক্ষ।

Advertisement

রবিশঙ্কর দত্ত 

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২০ ০৪:৪৮
Share:

—ফাইল চিত্র।

বাজেট বক্তৃতার বাইরে রাজ্যপালের কোনও মত বা মন্তব্য বিধানসভার নথিতে গ্রাহ্য হবে না। রাজ্যের বাজেট অধিবেশনের আগে পরিষদীয় মহলে এই মনোভাব স্পষ্ট। তবে কেরলের কথা মাথায় রেখে অধিবেশনকক্ষে নিজেদের ‘প্রস্তুতি’ রাখছে শাসক দল। ৭ ফেব্রুয়ারি রাজ্যপালের বক্তৃতার আগে পরিষদীয় দলের বৈঠকে তা নিয়ে আলোচনা সেরে রাখার কথা ভেবেছে তারা। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রাজ্যপাল কী করতে পারেন, তা নির্দিষ্ট। আশা করব, তিনি তা জানেন এবং বাজেট বক্তৃতাও সেই মতো হবে।’’

Advertisement

রাজ্যপালের সঙ্গে সংঘাতের কারণেই এ বারের বাজেট অধিবেশনের সূচনাপর্বে বাড়তি সতর্ক থাকছে সরকার পক্ষ। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিষয়ে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় গত কয়েক মাসে যে রকম মনোভাব প্রকাশ্যে এনে সরকারকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছেন। প্রতিবারই তা নস্যাৎ করে পাল্টা আক্রমণে গিয়েছে নবান্ন। সেই সূত্রেই বাজেট অধিবেশন ঘিরে এই ভাবনা তৈরি হয়েছে। তৃণমূলের পরিষদীয় দলের অনেকেই মনে করছেন, রাজ্যপাল যে ভাবে সংঘাত ডেকে এনেছেন, তাতে বাজেট অধিবেশনেও তার ছায়া পড়তে পারে। কারণ বিভিন্ন সময় তিনি যে মত জানিয়েছেন, সরকারি ভাষণে তা থাকা সম্ভব নয়। পরিষদীয় দায়িত্বে থাকা অনেকে মনে করছেন, কোনও রকম উচ্চবাচ্য না করে সরকারি ভাষণ পড়ে গেলে তাঁর আগের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন করার সুযোগ তৈরি হবে বলে মনেও করতে পারেন ধনখড়।

শিক্ষাঙ্গনের সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা নিয়েও রাজ্যপাল প্রকাশ্যে রাজ্যের দিকে আঙুল তুলেছেন। সে ক্ষেত্রে বাজেট বক্তৃতায় শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে তাঁর নিজস্ব অসন্তোষের কথা টেনে আনলে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলেও মনে করছেন সরকার পক্ষের অনেকে। একাধিক প্রকল্প নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্য সরকারের মতবিরোধ রয়েছে। কেন্দ্রীয় প্রকল্প প্রত্যাখ্যান করে রাজ্য যে অবস্থান নিয়েছে, সে সব নিয়ে রাজ্যপাল নিজের মত জুড়তে চাইলেও একই অবস্থা তৈরি হতে পারে বলেই ধারণা অনেকের।

Advertisement

আরও পড়ুন: প্রশাসনিক জটেই নয়া পেনশনে দেরি

এ নিয়ে আলোচনা করলেও সরকার পক্ষের কেউই আগে থেকে তা নিয়ে মুখ খুলতে চাইছেন না। সরকার পক্ষের পরিষদীয় দায়িত্বে থাকা এক নেতা জানান, ঘরোয়া আলোচনায় এ সব নিয়ে কথা হয়েছে। অধিবেশন বসার আগে আনুষ্ঠানিক ভাবে তা নিয়ে আলোচনা হবে।’’ সেই কারণেই বাজেট অধিবেশনের প্রথম দিনই সরকার পক্ষের বিধায়কদের তাঁদের করণীয় জানিয়ে দেওয়া হবে। বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নানও মনে করেন রাজ্যপাল নিজস্ব কোনও মত বাজেট বক্তৃতায় ঢুকিয়ে দিতে পারেন না। তিনি বলেন, ‘‘এখন যা ঘটছে সে সবের নজির নেই। সংবিধান তৈরির সময়ও এই রকম রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা প্রণেতারা ভাবেননি। তবে রাজ্যপালকে সরকার বক্তৃতাকেই মান্যতা দিতে হবে।’’ বাম পরিষদীয় দলের নেতা সুজন চক্রবর্তীও মনে করেন, ‘‘রাজ্যের সঙ্গে রাজ্যপাল যে কোনও বিষয়ে আলোচনা করতে পারেন। কিন্তু এখানে তাঁর আলাদা মত দেওয়ার সুযোগ নেই। সংবিধান মেনে সরকারের বক্তব্য পড়াই রেওয়াজ।’’

নিয়ম অনুযায়ী সরকারের বক্তৃতায় আপত্তি থাকলে রাজ্যপাল তা জানাতে পারেন। তবে সরকার তা চূড়ান্ত করে জানালে সেই বক্তৃতা বদলে তাঁর কোনও ভূমিকা থাকে না। তখন বিধানসভার অধিবেশনে তাঁকে তা পড়তে হয়। বিধানসভার সচিবালয়ও জানাচ্ছে, লিখিত বক্তৃতার বাইরে রাজ্যপালের কিছু বলার থাকে না। তার পরেও কিছু বলা হলে তা নথিবদ্ধ করার পূর্ণ এক্তিয়ার স্পিকারেরই। বক্তৃতার পরে নেওয়া সিদ্ধান্ত রাজ্যপালের উপস্থিতিতে বা অনুপস্থিতিতে স্পিকার তা জানিয়ে দেবেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement