বরুণ বিশ্বাসের মূর্তি। নিজস্ব চিত্র
ন’বছর অতিক্রান্ত। এখনও সাজা পেল না সুটিয়া গণধর্ষণ কাণ্ডের অন্যতম সাক্ষী বরুণ বিশ্বাসের খুনিরা।
সোমবার ছিল বরুণের মৃত্যুদিন। দ্রুত মামলার নিষ্পত্তির দাবি তুলছেন এলাকার বাসিন্দারা। এ দিন সুটিয়া প্রতিবাদী মঞ্চের পক্ষ থেকে বরুণের বাড়ির কাছে আয়োজন করা হয়েছিল স্মরণসভার। শ’দেড়েক মানুষ এসেছিলেন। ওই সভা থেকে দাবি তোলা হয়, বরুণ খুনের মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করে খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।
প্রতিবাদী মঞ্চের সভাপতি ননীগোপাল পোদ্দার বলেন, ‘‘বরুণকে যারা খুন করেছিল, তারা গ্রেফতার হয়েছে। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা এখনও অধরা। তাদের গ্রেফতার করা হোক।’’ তাঁর কথায়, ‘‘বিচার ব্যবস্থার উপরে আমাদের আস্থা আছে। কিন্তু এ বার মামলার নিষ্পত্তি করা দরকার।’’
২০০০ সাল নাগাদ উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটার সুটিয়া এলাকায় বাড়ি থেকে বহু মহিলাকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে দুষ্কৃতীরা। পরে স্থানীয় মানুষজন এককাট্টা হয়ে দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। তৈরি হয় প্রতিবাদী মঞ্চ। তারই অন্যতম সদস্য ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা, কলকাতার মিত্র ইন্সটিটিউটশনের শিক্ষক বরুণ বিশ্বাস। ২০১২ সালের ৫ জুলাই গোবরডাঙা স্টেশন চত্বরে দুষ্কৃতীরা গুলি করে খুন করে তাঁকে।
রাজ্য পুলিশ ও জিআরপি গ্রেফতার করে ৬ জনকে। পরে তদন্তের দায়িত্ব নেয় সিআইডি। সুটিয়া গণধর্ষণ মামলায় আগেই ধরা পড়েছিল সুশান্ত চৌধুরী। জানা যায়, দমদম সেন্ট্রাল জেলে বসে খুনের ছক কষেছিল সে-ই। সুশান্ত-সহ ১০ জনের বিরুদ্ধে খুনের মামলায় চার্জশিট জমা হয় বনগাঁ আদালতে। পরে জেলেই মারা যায় সুশান্ত। মামলা এখনও বনগাঁ আদালতেই বিচারাধীন। তবে এক নাবালক অপরাধীর সাজা হয় জুভেনাইল আদালতে। দু’জন এখনও ফেরার পুলিশের খাতায়। কিন্তু খুনের মূল ষড়যন্ত্রকারীরা অধরা বলে দাবি প্রতিবাদী মঞ্চের। যারা জেলে আছে, তাদেরও সকলের সাজা ঘোষণা হয়নি।
ভাইয়ের খুনের বিচার চেয়ে দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করছেন বরুণের দিদি প্রমীলা রায়। তিনি বলেন, ‘‘সিআইডি আমাদের পরিবারের কারও সঙ্গে কথা বলেনি। আমাদের কাউকে চেনেও না। এর থেকে বোঝা যায় মামলার তদন্ত কেমন হয়েছে।’’ মামলাটি এখনও বনগাঁ মহকুমা আদালতে বিচারাধীন। আদালতের মুখ্য সরকারি আইনজীবী সমীর দাস বলেন, ‘‘বরুণ খুনের মামলাটি ফাস্ট ট্র্যাক-১ আদালতে চলছে। ওই আদালতে দীর্ঘদিন ধরে কোনও স্থায়ী বিচারক ছিলেন না। তা ছাড়া, করোনা পরিস্থিতিতে শুনানির কাজ ধীর গতিতে চলেছে। এখন স্থায়ী বিচারক এসেছেন। ৩ অগস্ট পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন রয়েছে। ওই দিন বরুণের বাবার সাক্ষ্য নেওয়া হবে।’’