স্বাস্থ্য ভবন। —ফাইল চিত্র।
রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত পদাধিকারিরা অনেক সময়েই ইচ্ছা না থাকলেও অনেক কিছু মেনে নেন। আর জি করের ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে এক কনভেনশনের আয়োজন করেছিল ‘ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’-এর রাজ্য শাখা। সেখানেই উঠে আসা এমন মন্তব্য উস্কে দিল অনেক প্রশ্ন।
রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণকারী বিশেষ ক্ষমতাবান গোষ্ঠী ‘উত্তরবঙ্গ লবি’-র চাপে বহু আধিকারিককেই অনেক কাজ করতে হয় বলে অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। সেখানে কনভেশনে উপস্থিত চিকিৎসকদের এই মন্তব্যে আবারও স্পষ্ট হল, কী রকম ‘চাপ’-এর কাছে নতি স্বীকার করতে হয় স্বাস্থ্য প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত সিনিয়র চিকিৎসকদের। প্রাক্তন স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গ লবির আগেও কয়েক জন ছিলেন, যাঁদের থেকে বদলি, পদোন্নতি-সহ বিভিন্ন চাপ আসত। এখনও আসে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, যেটা ন্যায্য সেটা এবং নিজের স্বত্ত্বা বজায় রেখেই সব কিছু করতে হবে। যাঁরা চাপ দেন, তাঁদের কারও প্রশাসনের শীর্ষস্তরের সঙ্গে যোগ নেই। তাঁরা ওই সর্বোচ্চ স্তরের নাম নিয়ে এ সব কাজ করেন।’’
স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে দুর্নীতি বহু পুরনো হলেও, এখন সংগঠিত বলে অভিযোগ করেন ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ উৎপল দাঁ। তিনি বলেন, ‘‘নিয়োগ, বদলি, রাজ্য স্বাস্থ্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা, সর্বত্র টাকার খেলা চলছে। দয়া করে কেউ বদলির ভয়ে টাকা দেবেন না।’’ বর্তমান স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা নিয়োগ উপহাস বলেও দাবি তাঁর। পাশাপাশি, আর জি করের তরুণী চিকিৎসক-পড়ুয়া অনেক দুর্নীতি প্রকাশ্যে এনে ফেলেছিলেন। অন্যত্রও তেমন হচ্ছে। ফলে একই ঘটনার আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
জোরদার প্রতিবাদের এ দিন ব্যাখ্যা দেন ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট’-এর প্রতিনিধিরা। আবার আয়োজক সংগঠনের তরফে চিকিৎসক সৌরভ দত্ত দাবি তোলেন, রাজ্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থা থেকে ‘উত্তরবঙ্গ লবি’-কে সরাতেই হবে। তিনি বলেন, ‘‘আগে এক জন সিনিয়র চিকিৎসকের অঙ্গুলি হেলনে সব চলত। এখন নেটওয়ার্ক তৈরি হয়ে গিয়েছে। এঁদের বিরুদ্ধে সরব না হলে, শিক্ষক-চিকিৎসকেরা ছাত্রদের সামনে দাঁড়াতে পারবেন না।’’
‘উত্তরবঙ্গ লবি’র প্রভাবের উদাহরণ দিতে গিয়ে এনআরএসের অধ্যক্ষ পীতবরণ চক্রবর্তীর অভিযোগ, রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল নির্বাচনে হাই কোর্টের নির্দেশ মতো তিনি সিসি ক্যামেরার সামনেই ব্যালট জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। এ জন্য তাঁকে বিশেষ গোষ্ঠীর হুমকি শুনতে হয়। রাজ্য স্বাস্থ্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কাউন্সিলের আমূল সংস্কারের দাবি তোলেন ‘জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অব ডক্টর্স’-এর পুণ্যব্রত গুণ। কারণ, চিকিৎসক মহলের দাবি, ওই দু’টি সংস্থাও কব্জা করেছে ‘উত্তরবঙ্গ লবি’। সেখানকার ঘনিষ্ঠেরাই আর জি করের ঘটনায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ জড়িত বলে অভিযোগ।