Tajpur Port

মন্দারমণিতে কি বন্দর তাজপুরের বদলে, জোর চর্চা

মন্দারমণি সংলগ্ন রামনগর-২ ব্লকে রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের হাতে থাকা জমিতে হতে পারে প্রস্তাবিত বন্দর। ইতিমধ্যে প্রশাসনের একটি দল সেখানে ঘুরেও এসেছে।

Advertisement

কেশব মান্না

মন্দারমণি শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৪:৫৩
Share:

বন্দরের জন্য দাদনপাত্র বাড়ের এই জমি ব্যবহার হতে পারে বলে চর্চা। ছবি: শুভেন্দু কামিলা।

বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরেই সংশয় দানা বেঁধেছিল। পরে বিজেপির তরফে দাবি করা হয়, আদানিরা বন্দরের জন্য তাজপুরের বদলে মন্দারমণিতে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। এ বারে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের তোড়জোড়ও ইঙ্গিত করছে, সম্ভবত ঠাঁই বদলাচ্ছে তাজপুর বন্দরের। মন্দারমণি সংলগ্ন রামনগর-২ ব্লকে রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের হাতে থাকা জমিতে হতে পারে প্রস্তাবিত বন্দর। ইতিমধ্যে প্রশাসনের একটি দল সেখানে ঘুরেও এসেছে।

Advertisement

তাজপুরে গভীর সমুদ্র বন্দর তৈরির প্রস্তাব দীর্ঘ দিনের। যা নিয়ে আদানিদের সঙ্গে রাজ্যের আগ্রহপত্র দেওয়া-নেওয়াও হয়ে গিয়েছে। তবে সম্প্রতি বিশ্ববঙ্গ সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী আগ্রহীদের নতুন করে দরপত্র দেওয়ার কথা বলায় সংশয় তৈরি হয়। এর পরে বিজেপিও দাবি করে, তাজপুরে বন্দর গড়ার প্রস্তাব আদানিরা আগেই নাকচ করে দিয়েছে। পরিবর্তে মন্দারমণিতে নজর রয়েছে গৌতম আদানির।

সূত্রের খবর, জেলার জনপ্রিয় সৈকত পর্যটন কেন্দ্র মন্দারমণি লাগোয়া রামনগর-২ ব্লকে প্রায় ১৭০০ একর জমি সম্প্রতি রাজ্য সরকার শিল্পোন্নয়ন নিগমকে চুক্তি মারফত তুলে দিয়েছে। দাদনপাত্র বাড়, দক্ষিণ পুরুষোত্তমপুর এবং মানিয়া— এই তিনটি মৌজার অন্তর্ভুক্ত এই জমি পুরোটাই ফাঁকা পড়ে রয়েছে। জানা গিয়েছে, গত বুধবার ভূমি দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে প্রশাসনের এক প্রতিনিধিদল এলাকায় গিয়েছিল। তাঁরা ঘুরে দেখেন, জমির কোথাও জবরদখল রয়েছে কি না। তিনটি মৌজার বর্তমান পরিস্থিতি কী, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তা জানতে চাওয়ার পরেই এই পরিদর্শন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর। বিশদে কিছু না বললেও জেলাশাসক তনবীর আফজল মানছেন, ‘‘খোঁজখবর চলছে।’’

Advertisement

তাজপুরের বদলে মন্দারমণি সৈকত লাগোয়া এলাকা বন্দর হতে পারে বলে এলাকাতেও চাউর হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা অমিতশঙ্কর দাস বলছেন, ‘‘এখানে তো দীর্ঘদিন ধরে একরের পর একর জমি ফাঁকা পড়ে রয়েছে। এখন শুনছি এখানেই নাকি বন্দর হবে।’’ এলাকাবাসী এ-ও মনে করিয়ে দিচ্ছেন, মস্ত এই ফাঁকা জমি ঘিরে অতীতেও নানা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। তবে সে সব কিছুই হয়নি। এক সময় এখানে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের হাত ধরে গড়ে উঠেছিল ‘বেঙ্গল সল্ট লিমিটেড’। রাজ্য সরকারের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে সেই কারখানা দীর্ঘদিন চলেওছিল। তবে নব্বইয়ের দশকে বন্ধ হয় সেই কারখানা।

২০১১ সালে তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় এসে প্রথমে এখানে বায়ু চালিত বিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরির কথা জানিয়েছিল। তৎকালীন বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্তের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল এলাকা পরিদর্শনও করেছিলেন। তার পর ২০১৯ সালে এই জমিতেই ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। ৭৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে জার্মান সংস্থা কেএফডব্লিউ এই প্রকল্প গড়ে তুলবে বলে চুক্তিও সই হয়। অধিগৃহীত জমির সীমানা চিহ্নিতকরণের কাজ শুরু হওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই তা বন্ধ হয়ে যায়। একই সঙ্গে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, দাদনপাত্র বাড়ে অধিগৃহীত সরকারি জমিতে অন্য কোনও প্রকল্প গড়া যায় কি না, সে ব্যাপারে রাজ্য সরকার চিন্তাভাবনা করছে।

তবে মন্দারমণিতে বন্দর তৈরি প্রসঙ্গে স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী অখিল গিরির দাবি, ‘‘এ ধরনের কিছু জানা নেই।’’ আর বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলার অন্যতম সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রশেখর মণ্ডলের খোঁচা, ‘‘তাজপুরে বন্দর তৈরির কোনও পরিকাঠামো নেই। বাস্তবটা বুঝে মন্দারমণিতে সরকারি জায়গার খোঁজখবর করছে প্রশাসন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement