প্রতীকী ছবি।
শব্দবাজির দাপট কমিয়ে দেশকে পথ দেখিয়েছিল এ রাজ্য। কিন্তু এ বার কালীপুজো ও দিওয়ালিতে আতসবাজি ও শব্দবাজিকে কি কোণঠাসা করতে পারবে পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসন? মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের নয়া নির্দেশের পরে এই প্রশ্নই উঠছে। সেই প্রশ্নকে জোরালো করছে একাধিক বাজি কারখানায় সাম্প্রতিক দুর্ঘটনার কথা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, কারখানাগুলি বেআইনি।
এ দিন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এ কে সিক্রি এবং বিচারপতি অশোক ভূষণের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, দিওয়ালিতে রাত ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত বাজি পো়ড়ানো যাবে এবং বড়দিন ও ইংরেজি নববর্ষে রাত পৌনে বারোটা থেকে সাড়ে বারোটা পর্যন্ত বাজি পোড়ানো যাবে। কম ধোঁয়া ছড়ানো এবং নির্দিষ্ট শব্দমাত্রার বাজি বিক্রি করা যাবে। অনলাইনে বাজি বিক্রি বন্ধ করতে বলা হয়েছে এবং কোনও এলাকায় নিষিদ্ধ বাজি বিক্রি হলে তার দায় সংশ্লিষ্ট থানার ওসির উপরে বর্তাবে। কিন্তু এ রাজ্যের পরিবেশকর্মীদের অনেকেরই প্রশ্ন, যে রাজ্যে এমন বেআইনি বাজি কারখানা থাকতে পারে, সেখানে সু্প্রিম কোর্টের এ দিনের নির্দেশ কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। ২০১২ সালে বেআইনি বাজি কারখানা নিয়ে জাতীয় পরিবেশ আদালতে মামলা করেন দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রাক্তন মুখ্য আইন আধিকারিক বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘প্রথমে জানা গিয়েছিল কয়েক হাজার বাজি কারখানার মাত্র তিনটির ছা়ড়পত্র রয়েছে। পরে তা বেড়ে চব্বিশে দাঁড়িয়েছে।’’
তবুও এই রায়ে আশার আলো দেখছেন অনেকে। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র বলছেন, ‘‘দীর্ঘ লড়াইয়ের পরে আমাদেরই জয় হল। শব্দবাজি নিয়ে অনেক কথা হয়, কিন্তু আতসবাজিও যে নিঃশব্দে ঘাতকের কাজ করে সেটা সুপ্রিম কোর্ট মেনে নিল।’’ প্রবীণ আইনজীবী এবং পরিবেশ-আইন বিশেষজ্ঞ গীতানাথ গঙ্গোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘বাজির উপরে নিয়ন্ত্রণ এ রাজ্যে শুরু। শীর্ষ আদালত সেই নিয়ন্ত্রণ আরও ক়ড়া করল।’’
গত কয়েক বছরে কালীপুজো, দিওয়ালির সময় কলকাতা এবং অন্যান্য শহরে ধোঁয়াশা ধরা পড়েছে। পরিবেশবিদেরা বলছেন, বাজির ধোঁয়ার ক্ষতিকর রাসায়নিক শ্বাসের সঙ্গে মানুষের শরীরে ঢোকে। হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টের রোগীদের ক্ষেত্রে তা মারাত্মক হতে পারে। পরিবেশকর্মীদের অভিজ্ঞতা, গত কয়েক বছরে শব্দবাজি সে ভাবে কমেনি কিন্তু বে়ড়ে গিয়েছে আতসবাজির দূষণ। কালীপুজো, দিওয়ালিতে পাড়ায়, অলিগলিতে বা বহুতলের ছাদে যেন বাজির প্রদর্শনী বসে যায়। এই পরিস্থিতিতে পুলিশ-প্রশাসন কি তাতে লাগাম টানতে পারবে? পাঁশকু়ড়ার পশ্চিম চিলকা গ্রামে বাজি তৈরি হয়। সেই পাঁশকুড়ার বাসিন্দা বলদেব সাঁতরা বলছেন, ‘‘রাত ১০টার পরে যে বাজি ফাটবে না তার গ্যারান্টি কোথায়?’’
রাজ্য পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ খুঁটিয়ে পড়ে আমরা এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।’’ পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলার এসপি-দের বেআইনি বাজি কারখানা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন আইজি (দক্ষিণবঙ্গ) নীরজ সিংহ। কলকাতায় বাজি পোড়ানোর ক্ষেত্রে কলকাতা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত যুগ্ম কমিশনার (সদর) সুপ্রতিম সরকারকে ফোন করা হয়েছিল। তিনি ফোন ধরেননি। এসএমএস এবং হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পাঠানো হলেও রাত পর্যন্ত কোনও জবাব মেলেনি। বিশ্বজিৎবাবু বলছেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ পালন করতেই হবে। প্রশাসনের পক্ষে সম্ভব কি না, সে বিতর্ক এখানে অবান্তর।’’ গীতানাথবাবু বলছেন, এই নির্দেশ কার্যকর করতে গেলে বাজি কারখানা, বাজি বিক্রেতা এবং বাজির ক্রেতা, তিন জনের উপরেই কড়াকড়ি করতে হবে। এবং কল্যাণবাবু বলছেন, ‘‘শুধু প্রশাসনের পক্ষে সম্ভব নয়। আমজনতার সচেতনতাও জরুরি। কারণ, যে বাজি পোড়ায় ধোঁয়া তার শরীরেই আগে ঢোকে।’’